সুমিত্র দত্ত রায় – কবিতা (কার জন্য, হায়রে দুরাশা, পরবাসী, শব্দ জব্দ)

কার জন্য

– সুমিত্র দত্ত রায়

গ্রীষ্মের খরতাপ এড়িয়ে,
কেবল রুজির পিছে ঘোরা।
বলতে কি পারো, কার জন্যে?

বর্ষায় কাক ভেজা ভিজেও,
টিউশনটা বজায় রাখা।
ভাবতে কি পারো,কার জন্যে?

মণ্ডপের ঠাকুর না দেখে,
উৎকণ্ঠায় রাস্তায় ঘোরা।
মনে কি হয়নি, কার জন্যে?

হিমেল রাতে আবছায়ায়,
পার্কে বসে শুন্য বাগিচায়।
কখনো ভেবেছ, কার জন্যে?

শীতে সোয়েটার গায় দিয়ে,
অফিসের ক্লান্তি সঙ্গী করে –
তবুও হাজির, কার জন্যে?

বসন্ত ব্যাকুল মনে ফের,
খোলা জানালায় বসে আছি।
কার প্রতিক্ষায়, কার জন্যে?

অনুরোধ, উত্তর খুঁজো না।
আমিও জানি না কার জন্যে!

হায়রে দুরাশা

– সুমিত্র দত্ত রায়

প্রান্তিক জীবনে বসে আমি,
হিসেবের নেই কোনো মিল।
যে হিসাব মেলানো হলোনা,
আজ সব জেনেছি একান্তে।

এ দীর্ঘ জীবনভোরই দেখি
তৃষ্ণার সে কি প্রচণ্ড দাপট!
বৃক্ষ রোপনেও ব্যর্থ আমি,
দৃশ্যপটে ওরা যে স্বচ্ছ নয়।

দীর্ঘশ্বাস কলমেতে আঘাত
হেনে, স্তব্ধ করে খোলাপথ।
এ যেন কারাবাস।তবুও তা
মেনে নিয়ে,আবারও ভ্রমণ।

বুকের ওই গভীরে দুরাশার
কালিময় এক সাদা পাতা,
পাঠেরও অযোগ্য। পরিণতি
পায় নি খুঁজে, ভাষা উদ্যান।

ক্লান্ত মন ছুটি খুঁজে ফেরে,
হায়! ছুটি মিলবে কোথায়?
সেই কবে হয়ে বুক ধুকপুক,
যাত্রা শুরু। আর ছুটি কই?

নিজেকে দূরত্বে রেখে ঘোরা,
অমৃত শান্তিসুধার সন্ধানে।
বাকি সব মহামায়ার খেলায়,
মুক্ত না হলে মুক্তি কোথায়?

পরবাসী

– সুমিত্র দত্ত রায়

সবুজ প্রান্তরে আমি
প্রেম ছড়িয়ে দিলাম।
নীল আকাশের নীচে
বসে কপোতকপোতী।

জীবনভোর শপথ
একত্রে থাকবো বলে।
তবু স্বচ্ছতা অভাবে
ছাদে টালি রইলো না।

প্রান্তরের ফসলের
বাজার দর প্রচুর,
ভাসে তরঙ্গ ভেলায়।
তিনে মিলে এক নয়।

প্রচণ্ড বেগে ঘুরছে
বর্তমানের এ কাঁটা।
প্রত্যেকেই বহুদূরে
সকলেই ছাড়া ছাড়া।

আমি একা পড়ে আছি
সেই সবুজ প্রান্তরে।
আশ্চর্যভাবে সেটাও-
ধুসরতার আঁধারে।

অবশ্য এ স্বাভাবিক-
চোখে ছানি পড়বেই,
জীর্ণ হবেই শরীর,
স্বপ্ন ভেঙে চুরমার।

মরীচিকাতটে সন্ধ্যা-
পরশ পাথর খোঁজে।
হিসেবের ভুলে যদি-
তিনে মিলে এক হয়!

ভাবতে ভাবতে ভাবা,
আর এগোতে পারে না।
দুয়ে পৃথক আশ্রমে,
অবশেষ পরবাসী।

শব্দ জব্দ

– সুমিত্র দত্ত রায়

গিরগিটি শব্দগুলো,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ লাগাতার চারদিকে,
নানা রঙে ছড়িয়েছে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ খুঁজে নাও তার থেকে।

এখানে সবই আছে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সাদা কালো লাল নীল,
সাদাটা মনের নয়,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বেদনায় গরমিল।

লালটা ফিকের দিকে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আকাশেতে নীল শেষ!
যদিও সবই আছে-
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ থাকছেনা তার রেষ।

শব্দ জব্দ চয়নেতে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ শুধুই তা বেসামাল।
কড়া সুরে ভরপুর,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ যত্তোসব জঞ্জাল!

এর মাঝে খুঁজে নেব
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সাধ্য কি আছে ভাই?
তবু চেষ্টা চালাচ্ছি
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ যতটা নাগাল পাই!


কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।

আমি ছেলেবেলা থে‌কে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু,  আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।