বোরহানুল ইসলাম লিটন – কবিতা (নামাজ আমি পড়বো কবে প্রভু!, তুমি তো এলে না আর ফিরে!, হাতির বেটির বে!, ভাবলে তাদের কথা!, হয়তো বা আরো র’বো বেঁচে!)

নামাজ আমি পড়বো কবে প্রভু!

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

নামাজ আমি পড়বো কবে প্রভু!
​ ​ ​ ​ ​ যায় যে হেরে পরমায়ু
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ভাবতে হবে হবু –
নামাজ আমি পড়বো কবে প্রভু!

শুনতে কি পাই ভোরের আজান
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ রয়ে ঘুমের ঘোরে!
জোহর তো যায় নিত্য ক্ষয়ে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ব্যস্ততারই দোরে।
​ ​ সামনে এলে আসরের কাল
​ ​ চিত্তে রোপি কতোই ভেজাল
তোমায় স্মরে ধাপ কি তুলি কভু –
নামাজ আমি পড়বো কবে প্রভু!

চুপসে এ’ মন সাঁঝের ধারে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মাগরিবের ডাক পেলে,
গোরের ভীতি নাশ করি রোজ
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ এশায় অবহেলে।
​ চক্ষে দেখেও পিঞ্জরের জের
​ ​ ​ ​ ধার কি ধারী তাহাজ্জুতের!
সারহীনা বোধ গর্বে বেড়ায় তবু –
নামাজ আমি পড়বো কবে প্রভু!

তুমি তো এলে না আর ফিরে!

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

তুমি তো এলে না আর ফিরে অবশেষে
দিয়েও নিখাদ কথা দেখলে না শিশিরের কণা,
তোমায় রাঙাবো বলে নিশুতিতে রয়ে
কবিতা লিখেছি ক’টা শুনবে কে বলো সুনয়না!

ষোড়শী আমন ক্ষেতে আষাঢ়ের ঢেউ
তুলেছি কাব্যের গায়ে
বাড়ায় যদিও ওরা এ’ হৃদয়ে ব্যথা অবিরত,
মেলেছি দখিনা বায়ে কলমির ফুল
ভীষণ হাসতে তুমি অনেকটা ওদেরই যে মতো!

যতনে সাজাতে জোড়া হংসের ভান
জেগেছে হিঙ্গুল মেঘ স্বভাবে যা পিঞ্জিরার পাখি,
অবেলা বাদল স্নাত শাপলার কথা
তবুও দিয়েছি গেঁথে
চাইলে মিলতো বলে ও’ বদনে তোমারি দু’ আঁখি!

হলুদ দূর্বার শিরে ফড়িঙের ক্ষোভ
কতোটা বিরহ ছিলো এখনো এ’ পটে আঁকে রেখা,
ভুলিনি লিখতে চোখা নকুলের মতি
দিতো যে ঢিবির আড়ে মাথা তুলে বারে বারে দেখা!

সুরুজ নামায়ে পাটে
বেঁধেছি শ্যামল বাটে
শুকনো পাতার ধারে দোয়েলের ক্ষীণ আনাগোনা,
তুমি তো এলে না আর ফিরে অবশেষে
সানন্দে কবিতা ক’টা শুনবে কে বলো সুনয়না!

হাতির বেটির বে!

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

করবে বে আজ হাতির বেটি
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ খবর পেয়ে শেষে,
স্বয়ংবর এক অনুষ্ঠানে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মিললো সবে এসে।

গণ্ডার চিতা জেব্রা জিরাফ
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বাদ পড়েনি হরি,
সার বেঁধেছে পাণ্ডা হনু
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ নামটি বেজির স্মরি।

কুমির যখন অপেক্ষাতে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বলছে ‘এ কোন জ্বালা!’
বের হলো সেই সদ্য কনে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ হাতে ফুলের মালা।

হায়না ভাবে গেয়েই ফেলি
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ’যোগ্য কে আর দলে!’
ষাঁড় দ্যাখে পণ ততক্ষণে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ঝুলছে গাধার গলে।

হাত তালিতে চতুর্দিকে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ উঠলো হঠাৎ মাতি,
ভাব দেখে এক মিচকে শিয়াল
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মেললো মাঝে ছাতি।

ভাবলে তাদের কথা!

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

ক’জন বুকের টানে, সুবচন ছাড়া
নিরালে র’লেও দানে মমতার ধারা?
না পেয়েও আহ্বান
রোপেছে তাজা জবান
সযতনে বেসে ভালো অবেলায় যারা –
ভাবলে তাদের কথা হই দিশেহারা!

অনেক পেয়েছি ছায়া সখ্যের সার,
পারিনি কিছুই দিতে প্রতিদান তার!
অধরে রা রেখে খোশ
করলেও আফসোস
সাঁঝের সিতারা হয়ে জ্বলে উঠে যারা –
ভাবলে তাদের কথা হই দিশেহারা!

ঘোরালো নিশির বুকে ভাদরের চান,
আমিও তো চেয়েছিনু এমনই পরাণ!
জানবে কভু কি কেউ
টেনেছি মাতাল ঢেউ?
তবুও সহৃদ দিলো পাশে রয়ে যারা –
ভাবলে তাদের কথা হই দিশেহারা!

হয়তো বা আরো র’বো বেঁচে!

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

মাঠের দূর্বার মতো সে’ বাসনা আজ
বন্যার ধকলে রয়ে
কখনো উত্তাপ সয়ে
নিরীহ মাটির বুকে মিশে যার গান –
ওদেরই যতনে ফের ফিরে পেতে আহত জবান!

জীবন এমনই হয়
ভেবো না এ’ পরাজয়
নক্ষত্র বুঝবে শুধু এ’ ব্যথার ভার –
সিন্ধুর অতলে কেন ক্ষয়ে নামে অটল পাহাড়!

এরূপেই আছে বেঁচে উত্তুরে বাতাস
পৌষের চুলায় যেচে ভাপা পিঠা ভোরে মেলে পাত,
অথচ জানে সে’ গেছে চিরতরে চলে
আমন আবাদ তার
ভুলে শত আবদার
কালের সাথেই করে একদিন গোপন আঁতাত।

সহস্র বছর হলো জেগে আছি একা
ভাবালে সাঁঝের ধারা হুতোমেরে এভাবেই নেচে,
হয়তো অনন্তকাল আরো র’বো বেঁচে!
আরো র’বো বেঁচে!


কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।

কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।