বিভূতি দাস – কবিতা (ঝাউয়ের পাতায়, সব বিকায়, চাটনি, অক্ষমের জন্য নয়, বাসি হলেই)

ঝাউয়ের পাতায়

– বিভূতি দাস

ঝির ঝিরিয়ে ঝাউয়ের পাতায়
কোন উদাসী বাঁশী বাজায়
একলা দুপুর মনের বেলায়
রং তুলিতে খুশি ঝরায়।

সাগর বেলায় ফুল ফুটিয়ে
খেলা করে লাল কাঁকড়ার ঝাঁক
ঢেউয়ের মাথায় নাচছে সাগর
ভৈরবী তার ডাক
শেষ বিকেলের রঙ মাখে
গাঙ চিলের ঐ ঝাঁক
মন হারানোর স্বপ্নে বিভোর
সন্ধ্যা রাগের বাঁক।

সন্ধ্যা নামে সাগর বেলায়
ঝাউয়ের পাতার ফাঁকে
জোনাকিরা জ্বালায় বাতি
পথের বাঁকে বাঁকে
কোন পাখীটা ডাকছে কাকে
আয়রে কাছে আয়।

ঝির ঝিরিয়ে ঝাউয়ের পাতায়
কোন উদাসী বাঁশী বাজায়।

সব বিকায়

– বিভূতি দাস

এই সমাজের সবখানে ​ ​ ​ ​ ​ ফেরিওয়ালা বেচে কেনে
​ ​ ​ পাপ পুণ্য লজ্জা শরম কিছুই নেই বাদ
কিনতে গেলে সবই পাবে ​ ​ ​ পাবে না মানবতার স্বাদ
​ ​ বলে হারিয়ে যাবে আকাশটা থাকলে মাথায় ছাদ।

অগুনতি ফেরিওয়ালা ঘোরে ​ ​ ​ লাভের অঙ্ক এরা সবাই জানে
​ ​ ​ ​ ​ ​ অন্ধ বধির বদ্ধ পাগল সব্বাই তা মানে
কোনটা ভালো কোনটা মন্দ ​ ​ ​ ​ ​ আসে না কারো মনে
​ ​ ​ ​ সব বিকায় কথার তোড়ে হয় না প্রতিবাদ।

মন কিনতে হাতে গরম কথা ​ ​ ​ এ সমাজের নেই মাথা ব্যথা
​ ​ ​ কিছু পাগল প্রতিদিনিই ভাবে বসে বাঁশের ঝাড়ে
হিজিবিজি আঁচড় কাটে অকাজে ​ ​ তকমায় জুটলেও জেলের ভাত ​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অন্ধ বধির চশমা ওয়ালা সব্বাই তা জানে।

চাটনি

– বিভূতি দাস

লবণে আর টকে চিরকালের দোস্তি
হাল্কা মরিজ মেশালে সাথে জমে ওঠে মস্তি
টকে পানি লবণে স্বাদ মরিচে বিবাদ
মিলমিশ না হোলে জিন্দেগী বরবাদ।

কুমড়ো আর তেঁতুলের গলায় গলায় ভাব
কোন সচ্চা কোন ঝুটা না দেখাই লাভ
ফটাফট বন্দেগী জাঁহাপনা জী হাঁ মঞ্জুর
উৎস খুঁজলেই বিপদ ভাব বেপাত্তা সুদুর।

টোপের ফাতনার কাজ একটাই ভেসে থাকা
এমন না হলে জোটে তকমা ভীষণ বোকা
সিঁদুরে মেঘে ভয় ধরে জনমনে জাগে হলাহল
উপদ্রবের ঝড়ে বিভীষিকার কুণ্ডলী, নয় ছল।

অক্ষমের জন্য নয়

– বিভূতি দাস

মুখের কথায় মন ভিজলেও কাজের কোথায় হয়
মহাগুণী সব দুর্জনেই রোজ যা বলেন বাস্তবে তা নয়
আইন চলে নিজের পথে তবুও ক্ষমতার হয় জয়
সত্য কথা কেউ বলে না ন্যায় কি অক্ষমের জন্য হয় ?

ধামাধরা বিত্তবান, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে যে সুবিধা পায়
গরীব ঐ মুটে মজুর সরল মানুষ থাকে শুধু আশায়
দিন গুনে তার সময় চলে যায় কপালের ভরসায়
বিনা অর্থে সব অনর্থ; আইন ও ঘুরিয়ে পথ দেখায়।

মন্ত্রী আমলা রাজ-চামচা দুষ্কর্মেও আইনি সহয়তা পায়
কথার প্যাঁচে বেকসুর খালাস, নির্দোষ করে হায় হায়
না থাকলে অর্থের জোর নিধিরাম, ন্যায়ালয়ে পায় ভয়
সোজা রাস্তায় হোঁচট খাবেই একথা নিশ্চিত বলা যায়।

সময় চুরি, জীবন চুরি, সত্য চুরি, চুরির সীমা অন্তহীন
মোটা প্রণামীর জ্ঞানী পেশাদার চোরের জন্য বাজায় বীণ
বিচারক ও ধমক খায় মহা সেবকদের বিরুদ্ধে গেলে
ন্যায়দন্ড ও হাওয়া বোঝে ঝুলেই থাকে খুড়োর কলে।

নামতে নামতে হারিয়ে গেছে তল, সর্ব ক্ষেত্রেই অতল
হাজার কথার নাগরদোলায় জীবন থেকে মৃত্যু শুধু ছল
সমাজ জীবনে আতঙ্কের ধস অপছন্দে সত্যের মৃত্যু হয়
নানা ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া বাঁচার অধিকার অক্ষমের নয়।

বাসি হলেই

– বিভূতি দাস

ভালোবাসা বাসি হলেই পালাই পালাই করে
কে জানে কেন হালকা কথায় অভিমান ঝরে
নিত্য হয়রান দোষ খুঁজে একে অপরের তরে
ঠোকাঠুকি নিত্য সঙ্গী বোঝা না বোঝার ভারে।

বলছে সময় ভেংচি কেটে দেখনা কেমন জ্বালা
ভেবে দেখিস পরজন্মে কি পরবি আবার মালা
তাল লয় হীন সংকীর্তনে জমে সংসার পালা
ভালো থাকার শর্ত একটাই কানে দিলে তালা।

দিন চলে যায় আপন লয়ে শীতের রাত দীর্ঘ হয়
মানের ফাঁস চেপে বসে কোন ভাবেই হয় না লয়
ভালোবাসা বাসি হলেই গোলাপ বনে কাঁটার ভয়
ইচ্ছে ডানার পালক খসে স্বপ্ন জমির দ্রুত ক্ষয়।

ঠিক বেঠিকের দন্দে নাচে জীবন নামের ভেলা
কখনো এদিক কখনো ওদিক ডাইনে বাঁয়ে দোলা
আগে পরের পূর্বরাগে ফুঁসে ওঠে হাজার কথার মেলা
প্রতিদ্বন্দ্বী না সহমর্মী ভীষণ কঠিন এই কথাটা বলা।


কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে।

প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।