পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা (বিড়ম্বনা, শূন্য স্থান, জীবন কথকতা, একলা খুশি, ভাঙা সংসার)

বিড়ম্বনা

– পারমিতা ব্যানার্জি

নিশিকান্ত কথা দিয়েছিল,
সে কিছু দ্যাখেনি।
সেদিন ভাঁড়ের চা ঠাণ্ডা হয়ে
পড়েছিল অনেকক্ষণ।
আজও মুখ খোলেনি সে।

যাতায়াতের পথেও
মনে পড়ে না যে কোনো কথা।
দেয়াল লিখনের ওপরে
এখনও রক্তের দাগ।
বার্ধক্যের চৌকাঠে হোঁচট…
স্মৃতিশক্তি হারানোই ভালো।

চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায়
চেনা মুখগুলো।
হাজার চেষ্টাতেও ভোলে না।
ছাত্র জীবনে পড়া
মনে রাখতে হতো বাধ্য হয়ে।
আর বৃদ্ধ বয়সে ভুলতে হবে।
কী বিড়ম্বনা!!!

শূন্য স্থান

– পারমিতা ব্যানার্জি

মহাশূন্যের কতটা যে শূন্য,
জানা নেই।
তবে শূন্যের থেকে
ভরাট বোধহয় অনেক বেশি!
দৃষ্টির আড়ালে
কত না রঙের খেলা সেখানে।
ভরে ওঠে ছোট বড়
নবজাতক নক্ষত্রদের রঙে।

মহাশূন্যে প্রতিনিয়ত জন্মায়
রঙিন রঙিন নক্ষত্র।
আর শিশুদের কলরবে
যেন আনন্দধারা বয়ে যায়।
পাশাপাশি কত বৃদ্ধ
তারাদের মৃত্যুও হয় অহরহ।
এভাবেই জীবন চক্রে
জমজমাট অনন্ত মহাশূন্য!


* সম্প্রতি মহাকাশ বিজ্ঞানীদের যন্ত্রে ধরা পড়েছে মহাশূন্যের রং ও নবজাতক নক্ষত্রদের ঘনঘটা। সেই সূত্রে আমার এই লেখা।

জীবন কথকতা

– পারমিতা ব্যানার্জি

জীবন যেন __
সাত রঙে রাঙানো গল্প।
সুখ ও দুঃখের রামধনু__
কান্না হাসির ছন্দময় ঝর্ণা __

জীবন যেখানে __
কিছু হারিয়ে পাওয়া __
কিছু পেয়ে হারানোর কাহিনী!
সর্বদাই রহস্যময়!

জীবন ছুটে চলে __
অজানা এক পথ ধরে __
কী যেন খুঁজে পাবার নেশায়!
সমাপ্তি না জেনেই।

এমন জীবনের জন্যই যেন
আমার জন্ম হয়
বার বার, হাজার বার __
বাস্তব ও স্বপ্নময়ে।

একলা খুশি

– পারমিতা ব্যানার্জি

সোনালী বিকেল
হঠাৎ যখন হারিয়ে যায়
মন খারাপের মেঘে,
তখন কি একলা হও তুমি!

ঝরো ঝরো বৃষ্টি নামে
উদাস দুটি চোখে!
সে কী শ্রাবণ!
নাকি শরৎ দিনের গল্প!!
একলা হওয়ার নেশায়,
হও যে আষাঢ়ে কবি।

পাগল বাদল খেয়ালে
দিন ভুলে যাও,
কাল ভুলে যাও যখনই
তুমি হারিয়ে যে হও একা!

ভাঙা সংসার

– পারমিতা ব্যানার্জি

উত্তর স্বাধীনতার সংসারে
রং বেরঙের চরিত্রের বাস।
এখন আর কেউ
একসাথে কাজ করে না।
আলাদা আলাদা রান্নাঘরে
বিভিন্ন স্বাদের রান্না।
নতুন প্রজন্মের অনায়াস
প্রাপ্তি সুখ।
এই স্বাধীনতার অন্য মানে!
মুখ বুজে মেনে নিতে
বাধ্য হয়েছে পুরোনো দিন;
সংগ্রামী নুলো হাত।
কী হবে পুরোনো কাসুন্দি
ঘাঁটা ঘাঁটি করে__
প্রতিবাদহীন
এমন একটা বিশেষ দিনে!
তবু উড়বে সাধের পতাকা!


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।