অঙ্গীকার
– সুমিত্র দত্ত রায়
ভ্রমরের গুঞ্জরণে বাগানেই গেলাম।
ফুলের সাথে ওদের কত কানাকানি,
নিজেকে বিকিয়ে ব্যস্ত বাগান চত্বরে
ঘোরাঘুরি করে, শুধু মধু খাবে বলে।
বাগানেতে ভীষণই আগাছা বেড়েছে,
ঠিক কি বেঠিক বোঝার আগে দেখি-
বৃষ্টি এসে গেল। অলি গুঞ্জনও আজ
রিমঝিমে, বেপাত্তা এখন। নীরবতা।
সরবতায় বিফল আমিও। শব্দজগতে
এ এক আকাল। বে-আদব সুরে ভরা
পুরো বাগান। সন্ধ্যে হয়ে এলো প্রায়।
বড় দুঃসময়। শব্দের সন্ধান তবু চাই।
শ্রুতিমধুর গুনগুনানি শেষের প্রহরে ;
ঝিল্লির ঝঙ্কার শুনি এ ঝঙ্কৃত হৃদয়ে।
অনাহুতকে বিদায় জানিয়ে, আবার
নবাঙ্কুরে রাঙাবো ঠিক নতুন কানন।
খসা তারা
– সুমিত্র দত্ত রায়
আকাশের খসা তারা
নীলিমায় সুখী ছিলো,
তবুও ভুবন তাকে
আকর্ষণে টেনে নিলো।
ক্লান্ত নক্ষত্রের মৃত্যু
হওয়া স্বাভাবিক জেনে,
ধরা তাকে দিতে হল
মোহময় আলিঙ্গনে।
সে তারা উজ্জ্বল হলো
নিমেষেরই জন্য ভাই,
উল্কার রূপেতে ক্ষণিক
ঔজ্জ্বল্য দেখতে পাই।
অতল সাগর তলে
কায়া তার ডুবে যায়,
প্রতিদিন খসা তারা
এভাবে শোভা হারায়।
স্বপ্ন যাত্রা
– সুমিত্র দত্ত রায়
মেয়েটি কবি হবার স্বপ্ন দেখেছিল,
কলম জোরে ঈশ্বর বঞ্চিত করেনি।
কিন্তু সমাজ কিছুতে মেনে নিল না,
স্পষ্ট ভাষায় স্পষ্ট কথা কাল হলো।
সতীমার পাঁচালী সুনাম এনে দিলো,
তখন উনিশে। বাবা টোটো ড্রাইভার।
কর্ম ছেড়ে কর্মনাশা জুয়ার আসরে,
ঘরে বসে বসে শুধু রোগগ্রস্ত হলো।
রাগে মেয়েটি এ্যসিড খেয়ে নিলো,
গলাতে খাবার খাওয়া আর হলোনা,
নলেতে তরল খায়। তবু সাধ হলেও
চর্বণে স্বাদ, ভক্ষণে কখনোই হয় না।
অনাহারে অর্ধাহারেও জীবন থামেনি,
আজো মনের মানুষ হাল ধরে আছে।
তাকেও ইচ্ছে করে দূরে রেখে দিলো,
কারো জীবন নষ্টকরা উচিৎ নয় বলে।
অথচ কলম এখনো লিখেই চলেছে,
জীবনের গান।যাতে জীবনই বঞ্চিত।
লেখার রাজকন্যে দিয়ে তৃপ্তি মেটায়
যে সুর ওর থেকে এখন অনেকদূরে।
বিধি বাম, হঠাৎ বাবাও চলে গেলেন।
খাবার টিউব নিয়ে হয় শ্রাদ্ধের কাজ
আগামী আঁধারে। জানেই না আসবে
কী না নব দিগন্ত! শুধু কলম চলছে।
যা ও পায় নি কখনো,অলীক স্বপ্নের
রাজ্য থেকে তাকে খুঁজে পেতে চায়।
জীবন মরণ তোয়াক্কায় নেই মোটেই,
লিখে চলে, জীবনে পায় নি যা তাই।
*সত্য নির্ভর রচনা
রূপান্তর
– সুমিত্র দত্ত রায়
শুঁয়াপোকা বেশ ছিলো
ভয় পেতো সক্কলে,
প্রজাপতি হয়ে সেও
নিদারুণ মুশকিলে।
কেউ ভাবে তার মত
ডানা মেলে উড়বে,
কেউ ভাবে মজা ভারি
ওকে ধরে দেখবে।
রঙে রাঙা মন নিয়ে
কারো শাড়ি ধরলে,
কুমারীর মন বলে
“এ কি তুমি করলে?”
আজ সে যে নব বধূ
মাথা গুঁজে সংসার,
সবটা মায়ার খেলা
প্রজাপতি ব্রহ্মার।
যামিনী পোহালে পরে
এক সাথে মিলবে,
জীবন ধারার গতি
স্থিতিশীল চলবে।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।