অজিত কুমার কর – কবিতা (এসো কুন্দনন্দিনী, উৎখাত ফুটপাত, চন্দ্র থাকুক কল্পলোকে, বিলুপ্তির  পথে)

এসো কুন্দনন্দিনী

– অজিত কুমার কর

কুঞ্চিত কেশের পুঞ্জিত মেঘের
আর বসন্তের শোভা অপরূপ,
শিমুল কিংশুক হরণ করে দুখ
পুষ্প সুন্দর ওরা নিশ্চুপ।

নূপুরে ঝঙ্কার বীণাতে টঙ্কার
রিদিমে একাকার খুশি খুশি মন,
কুন্দনন্দিনী সতত বিনোদিনী
চিনি গো চিনি চিনি জাগে শিহরন।

স্বপনে সুপ্তিতে আসো আচম্বিতে
চেয়েছি সব দিতে রাতে নিরালায়,
ভাঙালে ঘুম এসে আমারে ভালোবসে
দাঁড়ালে পাশে এসে লুকোলে কোথায়?

নীরব শর্বরী এখন কী যে করি
বল-না সহচরী তোমারে শুধাই,
শেফালি নির্জনে ফোটে সে প্রাঙ্গণে
একান্তে বিজনে সুগন্ধ পাই।

তোমারে ভালোবাসি বসো-না পাশাপাশি
দেখি তোমার হাসি রঙিন আকাশ,
এ মন চঞ্চল জলধি উচ্ছল
পুষ্পিত কমল দেখি বারোমাস।

উৎখাত ফুটপাত

– অজিত কুমার কর

আমাদের দেশ উন্নত খুব গাড়িতেই যাতায়াত
নিষ্প্রয়োজন তাইতো এখন উৎখাত ফুটপাত।
ওখানে বসেছে হাজারো দোকান মিলবে যা প্রয়োজন
কোষাগারে জমে বিপুল অর্থ সুখ্যাতি অর্জন।

ভিখারি-শূন্য এখন এ দেশ পৃথিবীতে বন্দিত
কুৎসা রটালে সন্ত্রাসবাদী তাই জনগণ ভীত।
অতি সক্রিয় সাংবাদিকের হয়েছে হাজতবাস
মুক্তির আশা দূর পরাহত যতদিন চলে শ্বাস।

যে বুদ্ধিজীবী শিরদাঁড়াহীন পেয়ে যায় মাসোহারা
ক্রীতদাস যেন তাই মুখে তালা বিলাসে আত্মহারা।
মহিমা অপার ওসব লোকের অর্থই যেন সব
মনুষ্যত্ব বিকিয়ে গিয়েছে সত্যি মহানুভব!

আসল চিত্র জনগণ দেখে আতুরের হাহাকার
গাড়ি চাপা পড়ে জীবন হারায় এটাই নিয়তি তাঁর।
মিলবে খাদ্য মিলবে অর্থ ভোট ফুরোলেই শেষ
জনসাধারণ বুঝে গেছে সব নীরবে হাপিত্যেশ।

যে দল যখন হয় গদিয়ান বেরোয় তাঁর স্বরূপ
লুটেপুটে খায় যে যেমন পারে একদম অনুরূপ।
আস্থাভাজন কোনো দল নয় সবাই স্বার্থপর
যত দুর্নীতি রক্তকণায় সাধুবেশী তস্কর।

চন্দ্র থাকুক কল্পলোকে

– অজিত কুমার কর

অপাঙক্তেয় নিঃস্ব যেজন মাটির দিকে দৃষ্টিপাত
ঊর্ধ্বপানে তাকালেই তো প্রত্যাখ্যান তৎক্ষণাৎ।
যেটুকু চাঁদ নিজেই দেবে তাতেই তুষ্ট থাকতে হয়
‘বাড়িয়ো না ওর দিকে হাত চাঁদ তো তোমার জন্য নয়’।

তারারাও ওর কাছে ম্লান বিধুমুখী দীপ্তিমান
চাঁদকে নিয়ে কত গল্প কীসের জন্য এমন টান!
ওর ক্ষমতা সুবিদিত উজানে যায় সাগরজল
রবির সাথে মিতালি ওর প্রেমপরাগে সমুজ্জ্বল।

চলনবিলের চন্দ্রাবতী ইতিহাসে প্রসিদ্ধ
তাঁর প্রতিভায় হয়েছে এই বঙ্গভূমি সমৃদ্ধ।
চন্দ্রাবলীর পায়ের নূপুর এখনও হয় শিঞ্জিত
কান পাতলেই শোনা যাবে ধরায় অভিনন্দিত।

চাঁদের হাসি অপার খুশি তাইতো সবার পছন্দ
ধরাছোঁয়ার বাইরে হলেও ওতেই বেশি আনন্দ।
চন্দ্র থাকুক নিজের জায়গায় কত রঙিন কল্পনা
বাতায়নের সামনে বসে চলতে থাকুক জল্পনা।

সকলেই চায় চাঁদকে পেতে প্রতীক্ষাতে দিন কাটে
মহামায়ার আগমনে গিরিফোঁটা চৌকাঠে।
আনন্দ দেয় চারপাঁচ দিন তারপর যায় কৈলাসে
মানুষ যাতে দুঃখ ভোলে বছরবছর তাই আসে।

বিলুপ্তির  পথে

– অজিত কুমার কর

রিস্টওয়াচের বাংলা মানে সোজাসাপ্টা হাতঘড়ি
মোবাইলের কল্যাণে তাঁর এখন বড়ই দুর্দশা
ওকে এখন কেউ খোঁজে না মেজাজ গরম তাই গসা
ভাঙাবে না কেউ গসা ওর আমি এখন কী করি?

দেয়াল ঘড়ি, টেবিল ঘড়ি আর এক ঘড়ি পকেটে
পেন্ডুলামের দোলন দেখে বলি বাজলো বারোটা
তিনটে কাঁটা এক জায়গায় আবার বিরামহীন ছোটা
ঢং ঢং ঢং বাজলে ন’টা ঝাঁপ দিয়ে জল যাই কেটে।

ভোর চারটায় এলার্ম দিলে উঠত বেজে সজোরে
ঘুমজড়ানো চোখেও উঠে যেতাম তখন বাহিরে
পড়তে বসে যেতাম আমি পুব রাঙেনি আবিরে
মায়ের ঘুমও ভেঙে যেত এলার্ম শুনে কাকভোরে।

হারিয়ে গেছে কোথায় সেদিন এখন শুধুই মোবাইল
অষ্টপ্রহর সঙ্গী সবার না হলে দিন চলে না
বখে যাওয়ার রসদ প্রচুর তবুও মন্দ বলে না
শেখার কত জিনিস আছে কোনওকিছুই নয় অমিল।

হাতঘড়ি আর ক’জন পরে লোকের কত ব্যস্ততা
গুনাগুনতি কিছু লোকের জড়িয়ে থাকে কব্জিতে
ব্যাটারিতে চলে ওসব হয় না এখন দম দিতে
ক্রমে ক্রমে পরিবর্তন এগিয়ে যাচ্ছে সভ্যতা।


কবি পরিচিতি

অজিত কুমার কর। জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৪৬ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কিসমৎ জগন্নাথ চক গ্রামে। মাতা রাজবালা, পিতা কালিপদ। মৌরাজল অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু। ১৯৬২ সালে রামচন্দ্রপুর রাইসুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল ফাইনালে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ তে পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে থেকে প্রি-ইউনিভারসিটি ও ১৯৬৬ তে বিজ্ঞান বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন। ১৯৬৯ এ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এস সি গণিতে প্রথম হওয়ার ছয় বছর পর ১৯৭৫ এ ওখান থেকেই পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। সিএসআইআর এর পোস্ট ডক্টরেল ফেলোশিপ পেয়ে পুল অফিসার হিসাবে দু’বছর গবেষণা করেন। ১৯৭৬ সালে জয়শ্রী মাইতি-র সাথে শুভ পরিণয়। এরপর হুগলি জেলার নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজে কুড়ি বছর অধ্যাপনার পর ২০০৫ এ গণিত বিভাগ থেকে রিডার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

তারপর প্রবেশ সাহিত্যের আঙিনায়, সহধর্মিণী ও কবি সুমনা প্রামাণিক এর অনুপ্রেরণায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সাতটি। ‘ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তাথৈ তাথৈ নাচ’, ‘পঞ্চক’ ৪খন্ড, ‘লাঞ্ছিত গোলাপ’ এবং ‘রত্নমালা’। অপ্রকাশিত ‘ছড়ার ঘড়া’, ‘ঘড়া ঘড়া ছড়া’, ‘হাঁড়ি ভরা ছড়া’ ‘এক কড়া মিঠা ছড়া’, ‘মহৌষধ বনৌষধি’, ‘শেয়ালের উপাখ্যান’, ইত্যাদি। কবির পাঁচটি ই-বুক ‘নীলাঞ্জনে রঞ্জিত’, ‘কে তুমি লাবণ্যময়ী’, ‘কীর্তিমান’, ‘প্রেমকাননে ফুটলো ফুল’ এবং ‘রুবাইয়াৎ-ই-অজিত কুমার। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কবির কবিতা, অনুগল্প ও প্রবন্ধ। বর্তমানে বাংলা-কবিতাডটকম ওয়েব ব্লগ সাইটে নিয়মিত কবিতা পোস্ট করেন। ই-ম্যাগাজিনেও কবিতা প্রকাশিত হয়। অবসর জীবন কাটছে সানন্দে সারস্বত সাধনায় পাঁশকুড়ার জয়াকুঞ্জে।