অভিমানী রক্ত
– গোলাম রহমান
শরবিদ্ধ পাখির বুক থেকে অভিমানী নীল রক্ত ঝরে
তার কাছ থেকে মধুর কাকলী আশা কর কিভাবে!
বরং কিছু রক্ত মাখা ঝরা পালক কুড়িয়ে নিয়ে
রেখে দাও খুব যত্ন করে সিথানের পাশে;
চোখ থেকে ঝরা জল ছুঁয়ে গেলে রাতের গভীরে
ফিনিক্স পাখির মত ডানা মেলে দিতে পারে…
একটা জনম
– গোলাম রহমান
সব পাখি ফিরে নীড়ে সন্ধ্যার শিশিরের গন্ধ মেখে ডানায়
একটা পাখি থেকে যায় সন্ধ্যা নদীর চরে সারথীর আশায়
এখানে আসার কথা ছিল দিন শেষে,
অপেক্ষার শেষ প্রহরে আসেনি সে
তিমির আঁধারে মাটিতে ঠোঁট রেখে অবিরাম ডেকে যায়!
উত্তরের হাওয়ায় ডানা মেলে এসেছিল দক্ষিণা উষ্ণবলয়
ক্ষুধা যন্ত্রণা কাতর ক্লান্তি মুছে ফেলে নব জীবন আশায়
ঢের সময় কাটায়েছে জলকেলিতে
জীবনের কোরাসে উঠেছিল মেতে;
সেদিন হঠাৎ কী যে হলো সঙ্গিনী ফিরেনি নতুন বাসায়!
সে-কি গিয়েছে উজানের পথ ভুলে, না-কি পুরানো ছেড়ে
সরস কোনো স্বপনে বিভোর হয়ে উল্লাসে চলে গেছে দূরে?
অজানা সংশয় রয়ে যায় হৃদে
কাঁটার মতন খচখচ করে বিঁধে
পাখির অবুঝ হৃদয় বুঝিতে না চাহে কিংবা বুঝিতে না পারে!
বছর আসে বছর যায় চুপে চুপে আসেনি সে আর ফিরে,
একাকী পাখিটি ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে এইখানে রয়েছে পড়ে।
অলীক বাসনা, অলীক বাসনা হায়!
আহা! কুহকিনী মায়া ছলে ছোট্ট হৃদয়
একটা জনম হেঁটে হেঁটে পার করে দিয়ে গেল জলের কিনারে!
পাষণ্ড! পাষণ্ড!! পাষণ্ড!!!
– গোলাম রহমান
একদম কাঁদতে শিখিনি;
শ্রাবণ মেঘের মত
জল ঝরেছে অনেক!
একবার শিরা কেটে দেখলাম
লাল রঙের তরল রক্ত ঝরছে
চোখে জল ঝরতে দেখিনি।
বিশ্বাস না হ’লে আমার
বুক অথবা গাল থেকে এক খাবলা
মাংস নিয়ে চিবিয়ে দেখতে পার
তোমার বমি আসবে
আমার চোখে জল আসবে না।
তুমি বলতেই পার
‘পাষণ্ড! পাষণ্ড!! পাষণ্ড!!!’
তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না!
তুমি কি এমন একজন প্রেসিডেন্টের নাম জানো
যিনি লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে ঘুমান,
টেংরামাছে ডাটা-আলুর ঝোল তরকারি
দিয়ে রাতের খাবার খান;
তিনি স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা স্থাপতি অমর কবি
স্বাধীন বাঙলার প্রথম প্রেসিডেন্ট
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান!
১৫ই আগস্টের নির্মম বর্বরতা! ইতিহাস থেকে জেনে নিও…
আর জেনে নিও ঐ রাতের কুশিলব হিংস্র জানোয়ারদের নাম,
তোমার নতুন প্রজন্মের জানাটা খুব খুউব প্রয়োজন!!
আমি জানি না স্রষ্টা ওদের চেয়েও হিংস্র কোনোও
জানোয়ার সৃষ্টি করেছেন কি না…
ছোট্ট নিশ্বাস
– গোলাম রহমান
কয়লার গুদামে কাজ করে দিন শেষে
ঝুপড়িতে ফিরে কিম্ভূতকিমাকার স্বামী
বউ আগের মতন আঁতকে ওঠে না
অভ্যস্ত হাতে এগিয়ে দেয় গামছা লুঙ্গী
আর তোলাপানি।
অল্প পানি দিয়ে ঘষেমেজে সাফসতুর হয়ে
খুপরিতে ঢুকে স্বোয়ামী মানিক।
বড়বাড়ীর ঝিয়ের কাজ করে বউ,
দয়ালু গৃহকর্তী এক বাটি ভাত-তরকারি
তুলে দেয় ঝিয়ের হাতে পুটলি বেঁধে।
টিমটিমে কুপির আলোয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনে
খেয়ে নেয় তাই।
মেঘের ফাঁকে উঁকি দেয়া চাঁদের মত
ছেঁড়া শাড়ীর ফাঁক গলে বউর বুকের
সাদা একদলা মাংস দেখে নেয় স্বামী;
কাতর স্বগোক্তি তার-
‘গরিবের আবার আব্রু বেআব্রু’!
তেল চিটচিটে বালিশে মাথা রেখে চোখ বুজে
মানিক, মহুয়া হাতপাখা নেড়ে নেড়ে বাতাস দিচ্ছে
একটা সময় মহুয়া ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে
মাথা রেখে স্বামীর বুকে ঘুমে ঢলে পড়ে
বুকে তার চাপা কষ্ট পোয়াতি হবে কবে…
মানিক তার বউয়ের কষ্টটা বুঝতে পারে
মাথায় হাত দিয়ে আদর করে বলে-
‘আগে কর্জের টাকাটা পরিশোধ হোক
তারপর…’
মেঘবতীর বৃষ্টি ভেজা আর্দ্র মাটি
– গোলাম রহমান
খোড়লে ঢুকে গেছে চোখ তবুও আবছা আবছা দেখি
উঁচু করা তর্জণীটা ভাসে জনসমুদ্দুরে;
চেরাপূঞ্জী ছেড়ে চলে এসো মেঘবতী,
গোপালগঞ্জের মাটি ভিজিয়ে দাও বিষাদিত ধারায়!
তোমাকেই পারতে হবে বাঙলার আকাশ থেকে মুছে দিতে
বিষাদের ছায়া!
এ মাটির বুক থেকে
লাল রক্তের দাগ ভেসে যাক পদ্মা-মেঘনা-যমুনার স্রোতে!
হতভাগা বাঙালীর মুঠো ভরে থাক
মেঘবতীর বৃষ্টি ভেজা আর্দ্র মাটি…
কবি পরিচিতি

গোলাম রহমান। জন্মস্থানঃ বরিশাল।
বর্তমান নিবাসঃ ঢাকা, বাংলাদেশ, ফোনঃ ০১৭১০৮৯৫২৫০।