অগাধ বিশ্বাস ছিলো!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
অগাধ বিশ্বাস ছিলো ও’ পথের প্রতি
অগাধ বিশ্বাস ছিলো মেঘমালা হলেও গাফেল,
কখনো সে’ ক্রোধে র’লে বর্ণহীন বাসে
সতেজ চিলের ডানা এনে দিবে সোনালি বিকেল!
অগাধ বিশ্বাস ছিলো ও’ সাঁঝের প্রতি
অগাধ বিশ্বাস ছিলো ভুললেও ব্যাঙেরা স্বদেশ,
কখনো সে পেলে ভীতি একাকীত্বে ঘেমে
আদুরে দখিনা বায়ু এনে দিবে জোনাকি অশেষ!
অগাধ বিশ্বাস ছিলো নিশুতির প্রতি
অগাধ বিশ্বাস ছিলো ডাহুকেরা ফেললেও নীর,
কখনো সে স’লে দুখ বেসুরো বাগানে
ব্যাকুলে গাইবে ঝরে অবিরাম ষোড়শী শিশির!
হেরেছে সেই বিশ্বাস কোন একদিন
যেদিন না উঠে এই আশমানে সুহাসিনী চান,
গোপনে নিজেরে সঁপে সায়রের জলে
সৃজনে সফেন ক্লেশে ভুলেছিলো ভোরের আজান!
হাসো ও ভাই!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
হাসো ও ভাই কেনো রাখো
মুখটা অমন ভার?
ডাল তাতে কি হেসেই করো
তিন বেলা আহার!
মুচকি হেসে নিদ করো ত্যাগ
আজান এলে কানে!
ডাঁশা হাসির রঙ মেখে দাও
নিত্য কাজের মানে!
জাপটে ধরো ম্লান না ভেবে
বাঁচতে যে খায় মুড়ি!
হাসির ধারেই যতন করো
হোক মা যতোই বুড়ি!
ভাগ করে যাও নিজের হাসি
গর্বে সবার সুখে!
দাও তো সালাম হাসতে হাসতে
মেঘ জমে যার মুখে!
চলার পথে ঝরুক না ঘাম
ছড়াও হাসির আলো!
ঠোঁট দু’টি হোক পরের তরে
নাশতে ব্যথার কালো!
লাল রেখো গাল বইতে অতল
সখ্য প্রীতির নদী!
জল যা লুকাও হাসির আড়ে
উত্থলে চোখে যদি!
অনেক বছর গেলো!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
অনেক বছর গেলো দেখিনিকো তারে
গোলাপ ফুলের তরে করিনি এ’ প্রসারি দু’হাত,
নীরব দুপুরে এসে অপেক্ষার শ্বাস
নজরে আনেনি আর শালিকের গোপন আঁতাত।
অবাধ মাঠের সাড়া বিটপীর হাসি
এলেও জাগাতে দোলা ক্ষণকাল হৃদয়ের দ্বারে,
সহসা গগনে জমে একরোখা মেঘ
ব্যাকুলে উঠেছে মেতে আহত যা আশা সংহারে।
অনেক বছর গেলো দেখিনিকো তারে
পোয়াতি আমন ক্ষেতে লুকিয়ে শ’ হংসের আড়ি,
প্রবল বাদল স্নাত ঝলমলে বেলা
আঁকেনি বুকের পটে সযতনে বলাকার সারি।
নিজেকে শুধায় এই ক্রন্দিত পরাণ –
কতদিন শুনিনি সে’ বাতাসের গলে
সতেজ দূর্বার ক’টা ফড়িঙের অস্ফুট জবান?
হয়তো এভাবে ক্ষয়ে আরো চুপিসারে
অনেক বছর যাবে তেজবান সায়রের জলে,
কিঞ্চিত জানতে তবু পারবে না কেউ
ঘুমায়ে রইল এক সুধাকর তারই নিম্ন তলে।
তবুও হৃদয় দুলে!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
নিস্তব্ধ নিশীথে জেগে ভাবি কতো কথা
চিতায় মেঘের কেশ ছুঁড়ে,
তাপিত ধোঁয়াতে উঠে চারিদিক ঘেমে
বিহগীরা ক্ষোভে যায় উড়ে।
ভূতুড়ে আঁধার টলে শ্বাপদের ধাপে
হুতোমের চোখে দিয়ে ধুলো,
অদূরে বুঝি বা খায় হনু রূপী পুষি
থেমে থেমে মটমটে মূলো।
গগনে তবুও দেখি যতোবার চাঁদ
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আছে চেয়ে,
নব সাজে এ’ হৃদয় দুলে ততোবার
জানি না কি নিভৃতে পেয়ে।
সেকাল – একাল
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
চাইলে দিয়ে ক্ষুধার ডাকে সাড়া
নিজকে কে আর করতে পারে খোঁজ,
আগের দিন ও চলতি কালের ধারা
করলে বিরোধ বুকের বাগে রোজ?
বিজলী বাতির নিত্য রঙিন ছল
কেড়েই নিলো ভাঙা কুপির খ্যাতি,
বৃদ্ধ দাদু কয় না বটের তল
বলতো বলি কোন কিচ্ছাটি নাতি!
টুং করে এক শব্দ হয়ে দ্বারে
কিনছে ম্যাসেজ ডাক বাক্সের মান,
ডুকরে বসে ইউটিউবের আড়ে
যাত্রা পালা জারি সারি গান।
চৈত্র মাসে জেগে সবুজ দেলে
ঘুড্ডি বা চঙ কত্তো খেতো ব্রেন,
সেদিন দেখি পাতলু ক’টা ছেলে
গর্বে উড়ায় রিমোট দ্বারা প্লেন।
নেট মোবাইল সবারই আজ সাথী
চাল বা মাচায় কেউ খোঁজে না সিম,
আসলে নেমে দিনের শেষে রাতি
যায় না শোনা হাট্টিমা টিম টিম।
কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।