পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা (সংকট, আষাঢ়ে গল্প, সময় হলো না আসার, শেষ খেয়ায়, আমার কবিতা)

সংকট

– পারমিতা ব্যানার্জি

যতোই সাজাও ছকের ঘুটি
যতোই বিছাও জাল,
চোর তাড়ালে ডাকাত আসে
এমনই দেশের হাল!

দুর্নীতির এই রেসের মাঠেই
রাজার ঘোড়া ছোটে!
বস্তা বস্তা টাকা ওড়ায় রাজা,
অন্ধ প্রজাদের লুটে।

স্বাধীনতার যেন পায়ে বেড়ি
অসহায় স্বাধীন হাত।
শিক্ষিতের চাকরি বিক্রি হয়,
শিক্ষার হচ্ছে মুণ্ডপাত!

আষাঢ়ে গল্প

– পারমিতা ব্যানার্জি

অবশেষে এলো সে।
বলল কথা ভালবেসে,
হেসে হেসে আয়েসে!

নূপুর পায়ে শব্দ তুলে,
অভিমানের সব ভুলে,
হানলে খুশি হৃদি মূলে।

গুমোট তাতে কাটে কী!
শ্রাবণধারা আছে বাকী,
মন ভরাতে তাই ফাঁকি।

এলো যে আষাঢ়ে বৃষ্টি।
জলে কাদায় ফষ্টি নষ্টি!
প্রথম বাদল বড়ই মিষ্টি!

সময় হলো না আসার

– পারমিতা ব্যানার্জি

কথা ছিল __
ঝড় থামলে তুমি আসবে।
ভরিয়ে দিয়ে যাবে,
আমার কত না অপূর্ণতা।
সব তছনছ করে দিল ঝড়!

ওলোট পালট করে দিলো
জীবনের যত আয়োজন!
অন্ধকার_
ভীষণ অন্ধকারে ডুবে গেল
আগামীর অনুভূতি!

ঝড় যেমন এসেছিল __
তেমনই চলে গেল
ঝড়ের গতিতে…
আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম,
ধ্বংসস্তূপে একা!

একি অপেক্ষা না অন্যকিছু!
কীসের অপেক্ষা__
কেন অপেক্ষা! জানি না।
দিন শেষ হলো, রাত এলো।
তবু তুমি এলে না…

কোনো এক শুভক্ষণ

– পারমিতা ব্যানার্জি

অনেক আবেগ ভরে
লিখেছি যে কথাখানি __
রইলো পড়ে অগোচরে,
সেই কথাও তার
এক নেপথ্য কাহিনী।

যদি কিছু থাকে বাকী __
কুয়াশা ভরা আড়ালে
যদি থেকে থাকে ফাঁকি,
নিজ গুণে সাথে রেখো।
ভেবো না তা মেকি!

তব সুদীর্ঘ বিরহ কালে
খুঁজে নিয়ে কোনও এক
শুভক্ষণ অমৃত যোগে।
জেনো এখনও অনাঘ্রাত
আমার শূন্য এ হাতখানি।

আমার কবিতা

– পারমিতা ব্যানার্জি

কবিতা যেমন তেমন__
কবিতা যখন খুশি __
চাই না খাতা, চাই না কলম,
স্মার্ট ফোনে তার চলন।

কবিতা আমার শীতের চাদর,
গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুর!
কবিতা আমার ব্যস্ত শহর,
কবিতা চাষের মাঠ।

কবিতা নদীর জোয়ার ভাটা,
কখনো এগোয়,
কখনো পেছোয়।
তবুও সেতো আমারই থাকে।

চোখের সামনে যা দেখি,
সবেতেই তো কবিতা থাকে।
ওরাই মনের কথা __
কবিতা জীবন গাঁথা।

কবিতা উদাসী হাওয়া!
কবিতা পাগল পারা,
কবিতা আমার যত ব্যথা __
কবিতা ভালবাসা।


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।