নীরব শব্দ
– সুমিত্র দত্ত রায়
আমি এক ফেরিওয়ালা রাস্তায় ঘুরি,
বলতে পার আমাকে, শব্দ কারবারী।
ঝড়ের শব্দ, বৃষ্টির শব্দ, মেঘের গর্জন,
পাবেই আমার কাছে, যা চাও যখন।
ঝরনার ঝর ঝর বা নদীর কুল কুল,
তাও সংগ্রহে আছে, একদম নির্ভুল।
বাতাসের শনশন বা ঝিল্লির ঝঙ্কার,
সবকিছুই ত্রুটিহীন সংগ্রহে আমার।
অক্ষর কম তবুও অনেকই আছে শব্দ
লেখার কথা বলি, চাও গদ্য বা পদ্য!
ফেরিওয়ালা দোরে ফিরি, নই শিক্ষিত,
তবু পাবে, পাই যদি মূল্য ঠিকমতো।
দুঃখ বল, সুখ বল, ইচ্ছেমত পাবে,
শব্দের কারবারী, সব যোগান দেবে।
দরকারি সব কিনি, কাছে যাই পাই,
শুধু একটা জিনিস আজো কিনি নাই।
মূল্য কত দেব? আর কতই বা পাব?
হিসেব না মিললেও খোঁজ করে যাব।
নীরব শব্দ কেমন? শুনেছ কি ভাই?
কিন্তু নীরব শব্দের খোঁজ মেলে নাই!
অবিশ্বাস্য যাত্রা
– সুমিত্র দত্ত রায়
সরোবরে স্নান করে,
সিক্ত বস্ত্রে অবয়ব;
দেখলাম আনমনে,
গঠনেতে কত ত্রুটি!
সরসী সলিল ছিলো –
নির্মল পবিত্র। কিন্তু,
আমার ঔজ্জ্বল্য কই?
আমি এত কুৎসিৎ!
যাত্রা পথে অবিরাম,
এক থেকে একাধিক-
দৃশ্য বদলানো মুখ,
নেই কোন অবকাশ।
মন ভাসানোর জন্য-
ঘুরে ফিরে প্রতিবিম্ব,
আজ আলেয়ার প্রেম,
উল্কাবৃষ্টি মনে যত।
পাশাপাশি এক সাথে,
তবু সম দূরত্বে যেন
ধুসর ধুলোতেই লীন,
ভুমি স্পর্শের নেশায়।
স্মিত হাস্য ভরা এক
দৃষ্টি ওই প্রজ্ঞা-দর্শনে,
চালচিত্র বহুদূর থেকে
দেখি, কালের যাত্রায়।
ব্যাক ডেটেড
– সুমিত্র দত্ত রায়
কেউ কি সেই দাদুর দস্তানা দেখাতে পার?
জানি বলবে ‘সেতো ফুটো, হিসেব কি করো?’
ঠিক আছে তাহলে দেখাও না ঠাকুমার ঝুলি!
আরে কার্টুন খুলে খুলে দেখ, ওসব কানাগলি।
ডিসকো, ডিজে যত্তসব গমগম করা বাজারে,
নাচা গানা হই চই নিয়েই তস সকলে আবদ্ধ।
কিন্তু তা বলে বাবা, এসবে হাত মেলাতে হবে,
নাহলে ব্যাক ডেটেড বলে স্বীকৃতি মিলে যাবে।
এভাবে পদেপদে ধ্বংসে একঢালা কালোস্তুপ,
বোকারা সোচ্চার হয়,আর যত বুদ্ধিমানে চুপ।
ছোটরা ঘরে বসেই নেটঘেটে কথায় মশগুল,
মাঠ কাঁদে গোচারণে, ওখানে গজায় বনফুল।
বনফুল গন্ধেতে বিলকূলভাবে মাতয়ারা হয়ে,
অলস মস্তিষ্কের চিন্তাগুলো যায় একদম ধুয়ে।
শয়তানের কারখানা ফাঁকেতে গড়ে চারদিকে,
ব্যাক ডেটেড জীবনের রং আজ বড়ই ফিঁকে।
শবরীর প্রতীক্ষা
– সুমিত্র দত্ত রায়
হয়তো কেউবা আজ আসবে বলেই,
মন দরজায়! রঙচঙে পর্দা টাঙানো,
শুনছো গুনগুনিয়ে ওই জীবনের গান
যন্ত্রণা কাতর সুরে, যেটির তার বাঁধা।
দরজাটা শুধু ভেজিয়ে রাখা আছে..।
অহেতুক মনগড়া এক নীরব সংশয়ে,
পরিচিত মুখগুলোকে দূরেতে রেখেছ,
গুটিয়ে নিয়েছো তুমি নিজেকেও আজ
যদিও তখনও সাড়া পেয়েছে বারবার।
দরজা ভেজানো রয়েই গিয়েছে …।
তুমি একান্ত গোপনে কারেছো আঘাত,
নীরবতা ভেঙে আসা কানে কড়া নেড়ে,
বা আলতো ছোঁয়ায় মনেই টোকা মারা
বোঝনি। অভিসার মুহূর্তে শুধু অবিশ্বাস!
খোলা দরজাটা ভেজিয়ে দিয়েছে …।
পরিচিত গন্ধগুলোকে দূরে রাখা অথবা
চেনাচোখে নজর একটু এড়িয়ে যাওয়া!
মনের এতজোর আর কোথায় তোমার?
চোখ দুটোই শুধু কানায় কানায় ভরা…
তাই তো দরজা ভেজানোই আজ…।
কল্পনা সায়রে ভাসো, থেকে বালুচরে।
মন নদীতে তরী, বৈঠা কোথায় হাতে?
স্রোতের টানে ডোবা, তাও স্মৃতি সম্বল!
কামনা শৃঙ্গারে ঐ উড়ে যায় বলাক…
সেই তো কারণ দরজা ভেজানোর….।
দরজা ভেজানোই রয়েছে, কেউ নেই!
ভেজানো রইলো, কেউতো এলো না।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।