গোলাম রহমান – কবিতা (নিকানো উঠোন, চল হারিয়ে যাই, একদিন হেঁটে যাব, এ বাসনা মিটিবে না, ইচ্ছে করে)

নিকানো উঠোন

– গোলাম রহমান

মাটির সানকিতে মাখানো এক মুঠো ভাত
নিভু নিভু কুপির আলোয়ে বসা
উদাসিনী নারী এক
কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে নেয়
দুই এক গ্রাস ভাত মুখে তার;
কাতর পুরুষ এক ছুটে এসে তড়িঘড়ি
খুবলে নিয়ে কিছুটা ভাত
গিলে গোগ্রাসে
নারী নির্বিকার।
তারপর রাতের আঁধারে
দেহটাও খুবলে খাবে পুরুষ হারমোদ!
বিষণ্ণ মলিন এক ফালি চাঁদ
উঁকি দেয় ভাঙগা চালার ফাঁকে…
অবলার নাই কোনও বিকার
এ ভাবেই কেটে যায় নারীর জীবন
ভোরের আলোয়ে নিকানো উঠোন……

চল হারিয়ে যাই

– গোলাম রহমান

চল, হারিয়ে যাই দুর্গন্ধময় তপ্ত নগর ছেড়ে
নীল সমুদ্রের ওপারে
ছোট্ট কোনো নির্জন দ্বীপে
যেখানে ঘাসফুলে প্রজাপতিরা বসে আর ওড়ে!
নীলের কিনার ছুঁয়ে
সবুজ ঘাসেরা দোলে বিমল বাতাসে
নরম আলোর পরশে পরশে
নারকেল বীথির ফাঁকে ফাঁকে!
গাঙচিল বসে না এখানে
শ্যামা দোয়েলেরাও কাঁদে না
বেশ নিরিবিলি,
মৌটুসি রাখে ঠোঁট দু’একটা ঘাসফুলে!
নীল জলে সূর্য ডুবে গেলে
সন্ধ্যা তারার দেখামিলে
জোনাকিরা ব্যস্ত তখন
নারকেল বীথি সাজাতে আলোকসজ্জায়!
স্বপ্নের এমন ভূমে
কেটে যাক জীবনের বাকিটা সময়!

একদিন হেঁটে যাব

– গোলাম রহমান

একদিন হেঁটে যাব নদীর কিনার ধরে
বেহুলার মত উজানের দিকে;
জীর্ণ কুটিরে রয়েছে বসে যেথা
যোগী এক নক্ষত্রের সন্ধানে!
ছাই ভস্ম ফেলে আমিও তাহার মত
চেয়ে রব আকাশের পানে;
খুঁজব তাহারে একবার এসে ছিল
যে ভুল করে ধবল কপোতের রূপ ধরে
তারপর আহা! বেদের তীরের
নিশানা হয়ে গিয়েছে চলে অনন্তে
রক্তের দাগ রেখে আঁধারের বুকে!
সরু চাঁদ হাসে ধূসর মেঘের ফাঁকে
জীর্ণ বসন বেশিত আমাকে দেখে!
মূঢ়ের বিমূর্ত মূর্তি আমি
হেঁটে যাই নদীর কিনার ধরে
নবীন কোনোও নক্ষত্রের সন্ধানে!

এ বাসনা মিটিবে না

– গোলাম রহমান

বৃষ্টিকে বলেছিলাম-
তুমি এসো নিবিড় নির্জনতায়
কৈশোরিক আবহে তোমাকে উপভোগ করবো!
বৃষ্টি এক পশলা হেসে বলে- ‘আমি-তো
প্রায়ই আসি বরং তুমিই ভীষণ নিস্পৃহ’!

তুমি আসো বটে তবে………

সবুজ ঘাসের মাঠ, কুল কুল বয়ে চলা
সরু নদী এক দৌঁড়ে পার হওয়া যায়
এমন মোহনীয় জায়গায় তুমি এসো
প্রাণ ভরে তোমায় আমি উপভোগ করবো!

অথবা কোনোও নির্জন বনভূমে তুমি এসো
আমার বুকের সবটুকু উষ্ণতা দিয়ে
গভীর গভীরতর মমতায়
তোমাকে মেখে নেবো চোখে-মুখে-বুকে;
সুগন্ধি ফুল ফোটাব লতা গুল্মে
গাছের ডালে ডালে পাতার মূলে!

বৃষ্টি আবার হেসে গড়িয়ে পড়লো;
এবং জড়ানো কন্ঠে বলল-
‘বরং তুমি খুঁজে নাও তোমার মনের
মতন জায়গা
আমি আমার প্রাণ উজাড় করে তোমাকে সুখ দেব’!

সত্যি তুমি আসবে-তো
হে আমার মানসী প্রিয়া!

বিমর্ষ বদনে কান্নার হাসি হেসে কহিল-
‘অদ্ভুত তোমার স্বপ্ন সখা,
এ বাসনা মিটিবে না’!

ইচ্ছে করে

– গোলাম রহমান

ইচ্ছে করে শিশির ভেজা দুর্বা ঘাসের
লম্বা মাঠে পায়ে হেঁটে যাই!
ইচ্ছে করে রোপা ধানের আল-পথ ধরে
হাঁটতে থাকি সারা জীবন!
ইচ্ছে করে হাওরের ভরা জলে ডুবে
মাছের সাথে কথা বলি, অনেক কথা!
ইচ্ছে করে ভাদরেরে চাঁদনি রাতে
বিলের জলে ভাসাই ডিঙ্গা!
ইচ্ছে করে তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে একশা হতে
চিংড়িমাছের চোখের সাথে!
ইচ্ছে করে উঠানে ভাতশালিখের
পায়ে পা জড়ানো কিচিরমিচির শুনতে!
ইচ্ছে করে ভোরের নরম আলোর কিনার ছুঁয়ে
হাওয়ার মাঝে ডানা মেলে দিতে!
ইচ্ছে করে ঝুড়িনামা বট-বৃক্ষের ছায়া তলে
মাথা রেখে রমণীর নরম কোলে
বোশেখের মেঘলা আকাশ দেখে নিতে!
ইচ্ছেদের মৃত্যু নাই, সময়ের মৃত্যু আছে!
ইচ্ছে ডানায় ভর দিয়ে হারিয়ে যাই
আকাশের পর আকাশে………


কবি পরিচিতি

গোলাম রহমান। জন্মস্থানঃ বরিশাল।

বর্তমান নিবাসঃ ঢাকা, বাংলাদেশ, ফোনঃ ০১৭১০৮৯৫২৫০।