পবিত্র মহন্ত জীবন-এর গুচ্ছ কবিতা

১. কবি ও কলম

বাস্তব লক্ষ্য আমার গদ্য-কবিতা-
সূচনার সংগ্রামী শপথ,
মানুষে মানুষে আপন ভাবাতে
আমার গদ্য-কবিতার আদালত।
সমকালীন লক্ষ্য সূচনা প্রসূন;
হতেপারে বিদ্রোহী কবিতা
মাতৃত্ব-দেশপ্রেম কালের খেয়ার মতো –
যেমন রক্তসবিতা।
সেও লেখনীতে কবিতার শব্দাংশে
বিদ্রোহী কলম দৈনিক ;
অশোভন করিতে ধ্বংসের স্তব
সেও হতেপারে কবিতার সম্ভারে
আমি কবি কলম সৈনিক।।

২. অভিশপ্ত জীবন

কার্পন্য ভ্রান্তিনাশ দেখলে শুধু হাসে –
ভাবুক তবে অমানুষেরা;
তাতে কী যায় আসে?
বাঁকাপথ; যদি চলতে চায় চলুক –
বুঝিতে সময় ভাবতে তোমায়;
অমানুষেরা কি বলার বলুক।

৩. গুণকীর্তন

প্রকৃতির ভিতরে আজো-
কৃতিত্বে ডাক দেয় বাংলায়,
বিজয়-স্বাধীনতা চিরন্তরে –
ভাবাতে থাকে মুক্তির চেতনায়।
আজো কৃতিত্বের গুণকীর্তন –
ভুলেনি বাঙালি তোমাদের অবদান
নক্ষত্রের প্রদীপ্ত সলিতা যেন তা
দিয়েছ তাঁর প্রমাণ।
দেশপ্রেম তোমার ঘনিষ্ঠতায় –
দ্যাখ মাতৃত্বের বাংলাভাষায়,
প্রকৃতির বিশুদ্ধ বায়ুতায়
অক্ষয় তোমাদের পরিচয়।।

৪. নতুন দিনের আশায়

প্রতিদিন সাতসকালে ভোরে কিরণ হাসুক
নববর্ষের আগমনে শান্তি বিলিয়ে আসুক।
উৎসবের দিনগুলি তাই নতুনভাবে সাজুক
মন্দিরে ও-ই উলুধ্বনি মঙ্গলঘন্টা বাজুক।
বিগত দিনে গ্লানিবোধ সবার থেকে মুছুক
নতুন সালে শুভক্ষণে নতুনভাবে আসুক।
নিত্যদিনের স্বাধীনতা পাখিরা আজ উড়ুক
আমাদের এই মাতৃভূমি স্বাধীনতায় আসুক।
নিপীড়ন-জীর্ণ গুলো ধুলোয় যেয়ে মিশুক
নববর্ষে নতুনভাবে শান্তি-সুখ আসুক।

৫. তোমার অভিশাপে তুমি স্থির

ভালোবাসা অংকুরগুলো এতক্ষণে
সাজিয়েগুছিয়ে যত্নে রেখেছি সুখ;
তোমার হৃদয় মধ্যে এতটুকু ঠাঁই দিও
যতটুকু পারো ঠিক ততটুক…!
হৃদয় পরিসরে জন্ম দিতে চায় তোমাতে
নন্দিত এতটুক পরিচয়;
স্পর্শে থাকুক পবিত্র বন্ধনে
তাকিয়েই দেখুক সমস্ত প্রকৃতি ধরা’য়।
তোমার হৃদয় মধ্যে এতটুকু ঠাঁই দিও
যেখানে অনাবিল অমৃতা সুখ;
কিঞ্চিৎ সত্যি ঠিক এতটুক।

৬. সূর্যটা এলায়িত লজ্জিত শেষ বিকেল

অমানুষেরা মুখোশের আড়ালে নিজেকে
লুকিয়ে লুকিয়ে থাকে,
রক্ত পিশে খায় অমানুষিক ডালকুত্তাগুলো
অভিযোগ ধিক্কার মুখোশটাকে।
কর্কশ উর্দুভাষা না-পাওয়ার সত্যি প্রার্থনা –
বন্দিদশা হতে ফাঁসি
বুকের ভিতর ক্ষ্যাপনো যন্ত্রণায় ছটফট
কুতসিত লোভিত্ব বিকৃত হাসি
এখনো অচেনা ডোরাকাটার চিহ্ন গুলো
দেশ ও সমাজের ছিকেল;
সেখানে সূর্যোউদয় হলেও এখনো কিন্তু
সূর্যটা এলায়িত লজ্জিত শেষ বিকেল।

৭. পেতে চাই তোমায়

বিগত দিনের অজীর্ণ গুলো এখনো যায়নি
আসেনি আমার নতুনের আবির্ভাব,
সমস্ত শরীর দুঃখ-কষ্ট,যন্ত্রণায় কাতর
এখনো ডুকরে ওঠে কষ্টেই কাটে সারারাত।
কেন? কোন অভিশাপের অভিযোগ…
হয়তো ছিলো, হতে পারে –
এখনও আমার ত্রুটিগুলোর আর্তচিৎকার
চিন্তা, শোক বিচলিত অভিশাপ অন্ধকারে।
অভিশাপের অভিযোগ…
আমার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো
রোগাক্রান্ত হতে মুক্তি চায়,
মুক্তি দাও – পিষে থাকা জীবাণু ধুলোয় মিশে যাক
আসুক যৌবনে মিশুক সুখশান্তি আর্বিভাব
নৈব সম্ভবনা পেতে চাই এগুলো।


কবি পরিচিতি

পবিত্র মহন্ত জীবন। রংপুর জেলা গংগাচড়া উপজেলার শেরপুর পুটিমারী (গোস্বামী পাড়া), পিতা-পরবানন্দ মহন্ত, মাতা- পারবতী রানী মহন্ত, সনাতন ধমলম্বী পরিবারে ২০ জানুয়ারি ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি মাটি ও মানুষের কথা তুলে ধরেন তার কবিতা ও সাহিত্যে। তিনি কবি ও শিশুসাহিত্যিক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। দেশবিদেশে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ন্যায় ও সত্যের সংগ্রামে কবির আত্মপ্রকাশ। দৈনিক সমকাল, দৈনিক সাতসকাল (ভারত), দৈনিক পূবের কলম (ভারত), দৈনিক সংবাদ ইত্যাদি দৈনিক পত্রিকা সহ মাসিক ফুলকুঁড়ি, মাসিক আল-ফুরক্কান, মাসিক সমাজ দর্পণ এবং অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিন পত্রিকায় কবির লেখা প্রকাশিত হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের সাথে জড়িত থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশ কাব্যচন্দ্রিকা সাহিত্য একাডেমির সভাপতি দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।

সাহিত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ নানা পুরস্কারে ভূষিত – এ সবের মধ্যে দৈনিক যুগের আলো, সাহিত্য পুরষ্কার-২০১২ রংপুর, সাহিত্য সম্মাননা ‘১৩ পুড্রবধণ সাহিত্য-কল্যান পরিষদ, বগুড়া উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সংগঠক, সাহিত্য পুরষ্কার-২০১৫ রংপুর, বঙ্গভূমি সাহিত্য পদক’১৮ ঢাকা, মৌচাক সম্মাননা ‘১৮ রংপুর, চারুপাঠ সাহিত্য পুরস্কার ‘১৮ অন্যতম।