বিচিত্র কুমার – কবিতা (বর্ষারাণী, বিজুলি মেয়ে ও আকাশ, বৃষ্টি জলে হলুদ মেয়ে, একটা বর্ষার প্রতীক্ষা)

বর্ষারাণী

– বিচিত্র কুমার

ছলাৎ ছলাৎ বৃষ্টিজলে হাসে মেয়ে কুটিকুটি
বর্ষারাণী হাতছানি দেয় সুদূরে ওই একাকী;
চুলগুলো তার দীঘল কালো উরুউরু আষাঢ়ের মেঘ
বিজুলী নাচে বিজুলী নাচে হৃদয়মাঝে ব্রেক।

দুকানে তার ঝুমকা দোলে কদম ফুলে ফুলে
নাকের নথ বানিয়েছে কলমিলতা দিয়ে;
খোঁপাতে তার ফুলের সুবাস জুঁই কামিনী গেঁথে
ডাগর ডাগর দুচোখ খুলে চায় শুধু মেয়ে।

আঁকাবাঁকা পথে ও যেন হেঁটে যায় অরণ্য আর বনে
রিমঝিম বৃষ্টি ভেজা উতলা বাদলা দিনে;
রোদবৃষ্টির লুকোচুরি নাটাই ছাড়া পাগলা ঘুড়ি
ফিরে ফিরে ডাকে মেঘ গুরু গুরু গানে।

সবুজ পাতার শাড়ি পরে ও মুখেতে ভরা নদীর হাসি
হাজার ফুলের মাঝে যেন রঙিন এক প্রজাপতি;
লালটুকটুক ঠোঁট দুটি তার স্বচ্ছ জলের কোণা
হঠাৎ যখন খুলে দেখি আমি দুটি আঁখি।

বিজুলি মেয়ে ও আকাশ

– বিচিত্র কুমার

তোর মায়াবী দু নয়নে নয়ন রেখে
আমার কাটে রঙিন দিন,
ইচ্ছে নদীয় আমি সাঁতার কাটি
বুকের মধ্যে বাজে সুখের বীণ।

বুকের মধ্যে বিজুলী চমকায়
যখন তুই ফিরে ফিরে চাস,
মধ্য দুপুর উতাল পাতাল
তুই যখন চলে যাস।

একটুখানি তুই দূরে গেলে
নীল আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়,
রঙধনুর সাতরঙ মিশে যায় দিগন্তে
আকাশের বুকে শূন্যতা নামে বেদনায়।

তুই তাকাস কেন আমার দিকে
বুকের ভিতর আঁকিস কেন আকাশ?
তুই তাকালেই থমকে দাঁড়ায়
আমার বুকের বাঁ পাশ।

বৃষ্টি জলে হলুদ মেয়ে

– বিচিত্র কুমার

হঠাৎ সেদিন বৃষ্টি জলে নৃত্য করে হলুদ মেয়ে
অসংখ্য সবুজ পাতার ফাঁকে মিষ্টি হাসি মুখে;
সে যেন সেজেগুজে রয়েছে সাদা পারা হলুদবর্ণ শাড়িতে
এলোমেলো চুলে কাজল মাখা দুচোখে।

কী অপরূপ লাগচ্ছিল তুলতুলে গা দুলচ্ছিল
পাপড়িগুলো উড়চ্ছিলো হাওয়ায় ভেসে ভেসে,
মেঘ গুড় গুড় মেঘ গুড় গুড় গাচ্ছিল আকাশ
ফুল কলিরা আনন্দে নাচাচ্ছিল উল্লাসে।

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো মন করে হায় ব্যাকুল!
ঘোলাজলে ব্যাঙেরা সব কাদা মেখে খেলে দোল;
বোনোহাঁস সাঁতার কাটে এমন মধুর ক্ষণ
কুটিকুটি হাসে বনে কদম ফুল।

হঠাৎ সে ঝিরিঝিরি হিমেল হাওয়ায় উড়ে
দূর আকাশে যেতে চায় কদম গাছ ছেড়ে;
কিন্তু সে পায় না পাখির মতো পাখনা
লজ্জায় তার হলুদ মুখটি ঢাকে পাতার নীড়ে।

একটা বর্ষার প্রতীক্ষা

– বিচিত্র কুমার

আকাশ কিম্বা মেঘের স্পর্শে
বৃষ্টি তুমি রঙধনুর সাত রঙে সাজো,
শুধু আমার জন্যে আমার জন্যে
হয়তো একটা বর্ষার প্রতীক্ষায় আজো।

যুগযুগ ধরে হয়তো আমিও একই ভাবে
শুধু তোমার প্রতীক্ষায় আছি দাঁড়িয়ে,
যতটুকু ভালোবাসা আছে আমার হৃদয়ে
সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে তোমাকে জারিয়ে।

সারাটা জীবন হৃদয় কারাগারে বন্দি করে রাখব
তোমাকে আমার স্বপ্নিল আকাশের বুকে,
শুধু একবার দু’চোখ খুলে দেখ আমাকে
ভালোবাসার আর স্বর্গ সুখে।


কবি পরিচিতি

বিচিত্র কুমার ১৯৯১ সালের ১৫ ডিসেম্বর,বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলাধীন খিহালী পশ্চিম পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: বিপুল চন্দ্র কবিরাজ। মাতা: অদিতী রানী কবিরাজ। তিনি ২০০৮ সালে আলতাফনগর কে,এম,এ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি,২০১০ সালে সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ,বগুড়া থেকে এইচ এস সি এবং ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সরকারি আজিজুল হক কলেজ,বগুড়া থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে(অনার্স) ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণী অর্জন করেন।


তার একক কাব্যগ্রন্থ: আমাদের দেশ (২০১৫ সালে প্রকাশিত)।


তার যৌথ কাব্যগ্রন্থ সমূহ : অমর কাব্য গাঁথা, একমুঠো আলো, শত কবির কবিতা, আঁধারে আলোর রেখা, লাঙল, রক্তাক্ত আগস্ট, কাব্যগাঁথা বিজয়, জীবনের যত কাব্য, সূর্যসিঁড়ি তৃতীয় সংকলন, কবিকোষ-২, সেতু(সিঙ্গাপুর), উদীয়মান কবি, কবিকোষ-৩, দীর্ঘশ্বাসের কাব্য,মায়াবতী ও ছড়া কবিতায় একুশ।


এছাড়াও তার লেখা ভারত,যুক্তরাষ্ট্র,ইংল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া,ফ্রান্স,কানাডা সিঙ্গাপুর সহ শতাধিক দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা,সাপ্তাহিক পত্রিকা,অনলাইন পত্রিকা,মাসিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হয়।