আবার কখনো যদি ফিরে আসি আমি
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
আবার কখনো যদি ফিরে আসি আমি
শ্যামা এই বাংলাতে, ফিরে আসি ফের,
সাঁতরে নদীর বুকে নেব ধুয়ে মুছে
ক্লেশিত মননে র’লে জেগে কিছু অগোছালো জের।
দু’নয়নে গেঁথে নেব অবারিত ফসলের মাঠ
উড়ন্ত ঘুড়ির বুকে সঁপে তেজী আশা,
সজনে নেবুর তলে ঠিকই নেব যেচে
মায়ের আঁচলে ছিলো যতোটাই স্নেহ ভালোবাসা।
আবার কখনো যদি ফিরে আসি আমি
শ্যামা এই বাংলাতে, ফিরে আসি ফের,
রাখালি বাঁশির সুরে হয়ে মাতোয়ারা
এ’ বাট সাজিয়ে নেব
চিবিয়ে ছড়িয়ে দিয়ে গোধুলিতে ছোবড়া আখের।
গড়বো বাড়ির পিছে ডাংগুলি খেলা
কখনো বাটুল শাখে মিলে মিশে ব্যাঙের শ্লোগান,
বটের অদূরে দেখে হাটুরের সারি
নেবোই যতনে খুঁজে ঘামে মাখা বাবার পিরান।
আবার কখনো যদি ফিরে আসি আমি
শ্যামা এই বাংলাতে, ফিরে আসি ফের,
ভীষণ ব্যাকুল হয়ে নিশুতির ডাকে
চেনা সে’ মাটির দোরে বুঝে নেব মুখটি চাঁদের।
আহত পেয়ারা চুপে কুড়ানোর কালে
ভূতু হলে বাদুরের ভান,
মাছের মিতালী নেব এ’ হৃদয়ে বেঁধে
যখনই উঠবে জেগে চতুর্দিকে ভোরের আজান।
তবুও তোমাকে —
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
হুতোম পেঁচাটা আজ হিজলের শাখে
রাখলেও আঁখি দু’টি সুরে,
সাঁঝের সিতারা আর হয় নাকো দেখা
নিঃশ্বাস গেছে বলে পুড়ে।
ভ্রুলতার শিরে বসে গুমরানো কথা
রচে রোজই শিশিরের দানা,
নক্ষত্রের গতি পথে যায় না এ’ মন
খুঁজতে সে’ বলিহারি ডানা।
যা ছিলো আহত আশা হারায়েছে ধার
বুকে পেয়ে নিশুতির গান,
কষ্টের নীলাভ জলে তোমারি রা স্মরে
তবু করি ব্যাকুল সিনান।
শুনছো কি তুমি সুনয়না!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
উলঙ্গ পাঁজরে দেখে ঘামের দাপট,
স্নিগ্ধ সুধাকরও রচে বিরহের চোট।
ক্ষণিক দরদে মেতে
গুণো কি গো কান পেতে
চিন্তন লেখে না কেন তবে সে’ রচনা?
শুনছো কি তুমি সুনয়না!
নিশুতিতে একা শুনে ডাহুকের গান,
কেন হলো চিত্ত ঝরা ঋক্ষের বাগান!
কাঙ্খিত যে স্বপ্নপুরী
লুটে শ’ শ্বাপদ ঘুরি
আঁধারের রায়ে ওরা পেলে এ প্রেষণা –
শুনছো কি তুমি সুনয়না!
ক্রন্দিত তৃষায় র’লে নীরদের দল,
ওখানে ডাকতে পারে তক্ষকের গল?
না জানি বগির সুর
বাঁশঝাড়ে কতো দূর
বহুকাল হয়নি যা দোঁহে মিলে শোনা-
শুনছো কি তুমি সুনয়না!
বিহগীর ঠোঁটে দেখে আহত মাদল,
নেমেছে আজি এ’ রাতে ব্যথার বাদল।
কেনেই হারালো সুখ?
তালাশে হই উন্মুখ
ভ্রুলতার শিরে গেলে ক্ষীণ জলকণা-
শুনছো কি তুমি সুনয়না!
গ্রীষ্মের এক দুপুরে
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
ভর দুপুরে জীম ছুঁড়ে এক
চুপটি গাছে ঢিল,
ভাবছে কোথায় আম গোটা দুই!
সজাগ রেখে দিল।
হঠাৎ শুনে জেঠার গলা
খুলছে ঘরের দোর,
করবে কি ভাই বলতে পারো?
নামলো চোখে ঘোর।
গল ছেড়ে যেই হাঁকলো কে রে
মুখটা দেখি বাপ!
আর কে থাকে? দৌড়ে দিলো
গাঙের জলে ঝাঁপ।
দিবি না দু’টাকার বাঁশি!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
বারেক দিবি না সখী এই পথে এসে
অতল আশায় ভেঙে অভিমান দু’টাকার বাঁশি!
ব্যাকুল নয়নে একা আজো খুঁজে ফিরি
বদনে সতেজ ডাঁশা পেয়ারার চির চেনা হাসি।
আনত বিকেল বেলা যমুনার পাড়ে
ক্ষণিক ভাবলে বসে
আমন ধানের শিরে কোথায় সে’ ছটফটে রোদ?
সহসা নজরে আসে আধো ন্যাড়া ঢালে
না পেয়ে ছাগল ছানা শালিকের তৃষিত বিরোধ।
জটিল ভাষায় পেয়ে লহরির রথ,
চিলের সোনালি পাখা ভেঙে এ’ মনন
সাজায়ে হিঙ্গুল মেঘ গড়ে তোলে ভূতুড়ে অশ্বত্থ।
ধবল বকের সারি অবেলা এ’ মাঠে
বিদায়ে কেন যে চায় রেখে যেতে প্রণয়ের মায়া!
ভুলেনি দোয়েল জানি চিরতরে শিস
তবুও ডাকে না স্নেহে পানকৌড়ি হংসেরে ভায়া।
কতকাল কেটে গেলো হেমন্তের ক্ষেতে
কাকতাড়ুয়ার সেই ফিঙেটা কি হয়নি উদাসী?
নিয়মে পৌষের মেলা আসে ফের যায়
হয়তো আমিই শুধু খুঁজি এক দু’টাকার বাঁশি।
কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।