কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস – কবিতা (গভীর অন্ধকার রাত, নতুন বউ, বাবার আদর শাসন, অহেতুক ভাবনা)

গভীর অন্ধকার রাত

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

চারিদিকে শুধু ঝি ঝি পোকার ডাক,
নীরব নিস্তব্ধ গভীর অন্ধকার রাত।
কেউ কোথাও নেই জেগে আছি আমি,
ঘুটঘুটে অন্ধকারে এ কোন পাগলামি।

হঠাৎ একটা জোরালো শব্দ কানে আসে,
বুঝতে চেষ্টা করি কে যেন আশেপাশে।
চোখেতে অন্ধকার দেখি শুধু নীরবতা,
হাঁটছি পথ বেয়ে কমে আসছে সক্ষমতা।

সন্ধ্যায় যখন বেরিয়েছি পথে অনেক লোক,
পিচঢালা রাস্তায় সঙ্গী ছিল বহু উৎসুক।
রাত যত গভীর হচ্ছে শূন্য হৃদয়,
ব্যস্ত সবাই মিলিয়ে যাচ্ছে নিজ আশ্রয়।
সাহস করে ভাবনার সাগরে পা ফেলি,
যদি কেউ মিথ্যে স্বপ্ন দেখায়ে যায় চলি।

গভীর অন্ধকার রাতে চলা খুব কঠিন,
পথ যদি হয় কর্দমাক্ত আর সঙ্গী বিহীন।
রাত যেমন অন্ধকার তেমনি ঘন কালো,
ভুল হলেও সামনে চলাটা এখন ভালো।
আকাশে কোনো তারা নেই কে দেখবে,
আলোর অভাবেও তাই পা চলবে।
দূরে কোথাও যদি আলো দেখা না যায়,
ভয় শরীর অবস অন্তর কাঁপায়।
গভীর অন্ধকার রাতে বেরিয়ে যায়,
অপশক্তি অপরাধী অপকর্মের আশায়।
সবকিছুকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে,
সদর্পে এগোবে কেহ সাহস নিয়ে বুকে।
হলাম না হয় তাহার সাথে সহযাত্রী,
আঁধারকে জয় করে অন্ধকার রাত্রী।

নতুন বউ

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

সেজেছে নতুন সাজে মাথায় ঘোমটা,
বেনারশী শাড়ীতে লজ্জায় ঢাকা মুখটা।
গলায় হার কপালে টিপ পায়ে নূপুর,
মেহেদী হাতে প্রদীপ, সিঁথেয় সিঁদুর।
চলেছে ধীরে ধীরে সাথে যাচ্ছে অনেকে,
সকলে আসছে নতুন বউকে দেখতে।
সদ্য বিবাহিত পায়ে আলতা পরানো,
হাঁটছে গুটি গুটি পায়ে স্বপ্ন জড়ানো।

ছিল কুমারী চঞ্চলতায় ভরা মনটা,
খেলাধূলা লেখাপড়ায় ব্যস্ত সর্বদা।
বিবাহের পরে নববধূ সেজেছে আজ,
পরেছে মাথায় রঙিন স্বপ্নের তাঁজ।
দায়িত্ব অনেক কিছু হিসাব নিকাশ,
আচার আচরণ কথা বলায় প্রকাশ।

বাড়িতে শ্বশুর শাশুড়ি দেবর ননদ,
সবাই নতুন আবার সবাই আপন।
চারিপাশের পরিবেশ খুবই অচেনা,
কাজকর্ম নতুন বউয়ের অজানা।
প্রথম চলাফেরা স্বামীর সহায়তায়,
ভীত সর্বদা কোথাও ভুল-ত্রুটি না হয়।
নতুন বউয়ের ভালো মন্দ বিচারে,
তৎপর হয়ে কেউ থাকে ধারে ধারে।
কখনো মুগ্ধ কাহারো ভালোবাসায়,
কাজ করে আর হাসি খুশীতে কাটায়।
নতুন বউয়ের নতুন পরিচয় হয়,
শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজন ভীড় জমায়।

বাড়ীতে নতুন বউয়ের আগমন,
সবার কাছে থাকে বিশেষ আকর্ষণ।
খবর যায় দূর-দূরান্তে অল্পসময়,
বউকে দেখতে বাকি, কেহ নাহি রয়।
নতুন বউ থাকে না বেশিক্ষণ নতুন,
সংসারের বোঝা মাথায় করতে হয় বহন।

বাবার আদর শাসন

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

বাবা মানে বটবৃক্ষের শীতল ছায়া,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মাথার উপর ছাদ।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ যে নিঃস্বার্থ নিরাপরাধ।

সন্তান যদি থাকে বাবা ছাড়া,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ চলার পথে সীমাহীন কষ্ট।
জীবন হয়ে যায় ছন্নছাড়া,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দেখা দেয় ব্যথা ব্যদনা স্পষ্ট।
বাবারা নিজে পরিশ্রম করে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ পরিবারকে করে সুরক্ষিত।
সব কষ্ট সহ্য করে সর্বদা তারা,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সন্তানকে করে পুরস্কৃত।
বাবার শাসন সারা জীবন,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ভালবাসার প্রতীক।
আদর শাসন আশ্রয় প্রশ্রয়,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বাবা পথ প্রদর্শক।

শক্ত অবস্থান, আঁধার ঘরের প্রদীপ,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বাবা সন্তানের পথের দিশা।
বাবা মানে নিরাপত্তা নির্ভরতায়,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সদা সাহস যোগায়, ​ দেয় আশা।
বাবা মানে প্রত্যাশা, হাসি মুখ তার,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কষ্ট পেয়েও থাকেন নির্বিকার।
বাবা হেরে যান সন্তানের কাছে
​ ​ ​ ​ ​ সন্তানের চাহিদা পূরণের হাতিয়ার।

বাবা অর্থাৎ রাগ অনুশাসন,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ জীবনে পূর্ণতা আনে আদরে।
স্নেহ মাখা সোহাগ সারাজীবন,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ চলার পথকে মসৃণ করে।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ তবুও আর্থিক সমর্থন।
আদেশ উপদেশ পরামর্শে রত,
​ আর নিঃশব্দে দেয় ভরণ-পোষণ।
বাবার শাসন আর সুপ্ত ভালবাসা,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সন্তানের হৃদয়ের স্পর্শেতে।
আদর সোহাগ আর আশা ভরসা,
​ ​ ​ ​ ​ স্বর্গসুখ বয়ে আনুক সংসারেতে।

অহেতুক ভাবনা

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

কখনো বুঝতে বুঝাতে পারিনা,
আগমনের গভীর অনুভূতির ভাবনা।
এতকাল কতকাল কতদিন,
সুন্দর ধরনীর আলো বাতাস আমাকে,
উপভোগ করতে হবে জানিনা।
কোথা থেকে আসা কেন এত ঋণী হওয়া,
মায়ের হাত ধরে উঠে দাঁড়ানো,
ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে পরিচিত হওয়া,
কোন কি প্রয়োজন ছিল?

কত স্নেহ মায়া মমতা ভালবাসা,
হৃদয়ের গভীরে সৃষ্টি হলো,
দেয়া নেয়ার বিরহ ব্যথার,
কখনো কষ্টের কাঁটা বিঁধলো।
কী দিয়েছি? সবইতো প্রাণ ভরে নিলাম।
দেখা শোনা বোঝার কতটুকু হয়েছে,
কত দেখতে শুনতে বুঝতে হবে,
কেউ কি শেষ খুঁজে পেয়েছে?

কত হাসি কত আনন্দ সুখস্মৃতি,
জড়ানো মধুর প্রীতি,
অন্তরের অন্তঃস্থলে গাঁথা হয়েছে।
কতটা পথ বাকি আছে জীবনের,
শেষ প্রান্তে পৌছানোর,
উদ্ভট অন্তঃসারশূন্য ভাবনায় পেয়ে বসেছে।
এতটুকু ততটুক ক্ষুদ্র জীবনে,
আশা পূরণে স্বপ্ন পূরণে
বিধাতা কি সময় সুযোগ দিয়েছে!
কোন আর্তনাদ কোন হাহাকার,
নাহি দেবে কোনো বেদনার সান্ত্বনা,
অদৃশ্যের হাতছানি করবে না সামান্যতম করুণা।
তবে কি! আসা যাওয়া সবকিছু অহেতুক ভাবনা।


কবি পরিচিতি

কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। জন্ম জুলাই ২, ১৯৫৫, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার কাষ্টবাড়িয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে। পিতা – হৃদয় চন্দ্র বিশ্বাস, মাতা – ফুলমতি বিশ্বাস।

ছোট বেলা থেকে একটি সংগ্রামশীল পরিবারে সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন লেখাপড়ার পাশাপাশি আবৃত্তি, গান ও মঞ্চনাটকের সাথে যুক্ত হন। গনিতের অধ্যাপক হলেও সাহিত্যের প্রতি তাঁর ভালো লাগা আজীবন। কর্মজীবনের অবসরে থেকেও সাহিত্য চর্চায় নিজেকে সম্পৃক্ত নিরলসভাবে।

স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা, বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও সাহিত্য পত্রিকায় তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সহজ ভাষায় ছন্দ মিলের উপস্থাপনায় লেখা তার কবিতাগুলো পাঠ করে পাঠকেরা সামান্যতম আনন্দ পেলেই কবি নিজেকে ধন্য মনে করবেন।