সুমিত্র দত্ত রায় – কবিতা (অনেক চাওয়া, বসন্ত শেষে, ভাবতেই হবে, ধ্রুবকের সন্ধানে)

অনেক চাওয়া

– সুমিত্র দত্ত রায়

অপরাধের পাহাড়টা ডিঙিয়ে নয়,
নয় নীরস মরুর প্রান্ত ভেদ করে,
উত্তাল সমুদ্র মন্থন করেই আমি-
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সাথীকে পেতে চাই।

হাসির ঝিলিক থেকেই পাব ইন্ধন,
হাতের পরশমণিতে চেতনা বসন্ত,
চোখের তারা তার বিদ্যুৎ সঙ্কেত-
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সেই সাথীকে চাই।

মনের মাধুরী দেবে কলমে বিশ্বাস,
স্পর্শে জাগরিত হবে সুপ্ত এই মন,
আঁচলে বিছিয়ে দেবে সমস্ত পৃথিবী –
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ তারেই সাথী চাই।

আঁধারে আলো জ্বেলে থাকবে দাঁড়িয়ে,
দুটো ডানা দেবে আমায় উড়বো বলে,
শুকনো মনে দেবে সেই আপন সবুজ-
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কোথায় তারে পাই?

এখন কিন্তু আমি –
কেবল সাথী নয়, সেই পাগলীকেই চাই।

বসন্ত শেষে

– সুমিত্র দত্ত রায়

পদ্ম পাতায় শ্রাবণীকে দেখেছি,
এক নজরে ভোরের সরোবরে।
সদ্য প্রস্ফুটিত সে পূর্ণ অবয়ব
উঠে এসেছিল সদ্য স্নান সেরে।
ঝলক মাত্র হলো এ চিত্তরঞ্জিত।

বিদীর্ণ করেছে ওই উদ্বেল হৃদয়
রূপ মাধুরীতে। তবু সীমা লঙ্ঘন
করিনি সীমাবদ্ধই ছিলো বেষ্টনী,
চলার পথে কল্পনাদলে এঁকেছি।
আকাশ মেলে নি উড়বার মতো।

সময়ের কদমে কদমে আজও,
অজস্র পরিচিতেরা ভিড়ই করে,
ধুসর প্রজাপতি। সকলেই ব্যর্থ।
সেই কমলিকা, সেই বারিধারা,
জানিনা কখনো ফিরবে কি না।

দুরন্ত নেশায় বারবার ছোটে,
লাগাম ছেঁড়া এ অশ্বতর মন।
শ্রাবণী নেই, নেই স্নিগ্ধ সরসী,
বসন্ত যাবে বলে পা বাড়িয়ে
দূরে থেকে শুধু উপহাস করে।

ভাবতেই হবে

– সুমিত্র দত্ত রায়

শ্বাস নেবে বলে বাতাস দিয়েছে,
তুমি তাকে শুধু বিষই দিয়েছো।
গন্ধে,দৃশ্যে বহু ফুল তুমি দেখো,
বহু ফল, ফসল আজও দিচ্ছে।
লোভে পরে তুমি সবুজ হারালে!
অন্তিম এ ক্ষণে ভাবতেই হবে।

বিশ্বাস করে সে যাকিছু দিয়েছে,
সব বেসাতিতে নিঃস্ব তুমি আজ।
বিষ জ্বালায় জ্বলতে তো হবেই,
আজ শেষ সময় কিন্তু ভাবার!
জল-বায়ু-পরিবেশ! মুক্তি নেই।
অন্তিম এ ক্ষণে ভাবতেই হবে।

দানব প্লাস্টিক, সুখ দিয়েছিল!
ঠান্ডা জল,ঠান্ডা ঘর সুখ দিল!
ভাব নি একটু, বদলে কি নিল?
দুষিত বাতাস নিঃশ্বাসে তোমার,
পানীয় জল শেষ হবার দিকে।
অন্তিম এ ক্ষণে ভাবতেই হবে।

মরণের ডাকে শুধু দিন গোনা,
ভাব একবার প্রকৃতির জন্য –
কি তুমি দিয়েছ? আজ শেষ দৃশ্য!
এখন চলছে মরণ – বাঁচন,
আর কিন্তু সময় খুবই কম;
অন্তিম এ ক্ষণে ভাবতেই হবে।

ধ্রুবকের সন্ধানে

– সুমিত্র দত্ত রায়

আকাশে উজ্জ্বল বহু তারা,
তবুও তুমি একক একাকী,
তব খোঁজে ছিনু মাতোয়ারা;
খোঁজাতে ছিল নাতো ফাঁকি।

অবশেষে ধরা দিলে তুমি
আমার মনের মতো সাথী।
ভুলে গেছি একক সে তারা;
সাথী – আজ নব পরিচিতি।

কার ইশারায় মিলে গেলে?
দুজনায় মিলিত একক।
এককের খোঁজা ছেড়ে আজ –
পেয়ে গেছি আমার ধ্রুবক!


কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।

আমি ছেলেবেলা থে‌কে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু,  আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।