মো. মাহমুদ শেখ – কবিতা (অবশেষে আমি, মহীয়ান মাঝি, আদরের তুলি, প্রশংসিত বন্ধু)

অবশেষে আমি

– মো. মাহমুদ শেখ

অবশেষে আমি ঘুরে দাঁড়ালাম,
তোমার অহমিকার মুকুট দেখে
হিংস্রতা, যশ, ক্ষোভ ও একাকীত্ব সিদ্ধান্তে
অটল পেয়ে। নিজেই হতাশ হয়ে-
নিরবে কেঁদে দিলাম মনের অজান্তে।
আগে কখনও বুঝিনি,
যদি বুঝতাম-
তবে তোমাকে কখনও ভালোবাসতাম না।

তোমার আভিজাত্যের চাদর এত কঠিন
হৃদয় পাথরের মতো নির্দয় প্রাচীর;
চোখে জল আসে না,
অন্তরে প্রেমের প্রলেপ পড়ে না,
যদিও সামান্য আঁচ করতে পারছি!
তথাপি আমি পিছপা হয়নি-
তুমি বদলে যাবে ভেবে।
আজও তোমার কোনো পরিবর্তন হলো না।

আমি উদারতা, কোমলতা, সভ্যতাপ্রিয় হয়ে
সেই গুণাগুণ সমৃদ্ধ মানবের প্রেমের শিকলে
স্ব-আত্মাকে আবদ্ধ করতে আসি।
এই মহাবিশ্বে প্রেমের বীজ বপণ করতে চেয়েছি!
আমার এই আবেগ শুধু নম্র মনের
মানুষের গল্প বলবে-
যারা একাগ্রচিত্তে প্রেমকে বলবে সালাম!
আমি তাহাদের ভক্ত।

তোমার উদাসীনতা, অধৈর্য, অবহেলা
একদিন তোমাকে দাঁড় করাবে আমার দুয়ারে।
হয়তবা সেদিন আমি ভিন্নরূপে-
প্রেমের প্রাসাদে বাস করবো।
ভালোবাসার পরিপূর্ণতা সেদিন অন্তরে আসবেনা
তোমার প্রতি অবহলো জন্মাবে,
তুমি আমাকে শূন্যতার তরীতে ভাসিয়েছ,
আমি সেই শূন্যতায় রবো শক্ত।

মহীয়ান মাঝি

– মো. মাহমুদ শেখ

অবহেলায় কেটে যাবে হাজার হাজার বছর
বন্ধু আর ফিরবে না, অন্তরে আসবে না ভোর!

ভালোবাসায় তুমি বদলে যাবে,
দিবানিশিতে তাহা ভেবে ভেবে-
রজনী পোহাইতাম মনের সুখে স্বপ্ন বুকে নিয়ে
দেখিতে আসি বারে বারে তোমায় কথা দিয়ে।
তবুও সে কথা বুঝলে না,
প্রেম কি তাহা খুঁজলে না!

হারালে সুবাসে-সুবাসিত চির মহীয়ান মাঝি।
তুমি সেরা প্রেমাষ্পদ বলে, ধরেছি শতো বাজি;
ঠকেছি আমি মানব মাঝে তুমি জীবনের তরে
ভাবিও বন্ধু আগে, অসময়ে রবে মন থেকে দূরে।

আমি তো ঠিকই আছি
সুখ-দুঃখ রাশি রাশি।
এভাবেই বেঁচে আছি কয়েকযুগ ধরে।
তোমায় ভেবে আবার ফিরব কোনো এক ভোরে!
ফুটন্ত গোলাপের হাসিমুখ দেখে-
হৃদয়ে তাহার মহীয়সী ছবি এঁকে!

এভাবে জীবন্ত থাকুক ভালোবাসার চাদর
বেঁচে রবো অনন্তকাল পেয়ে সেই আদর।

আদরের তুলি

– মো. মাহমুদ শেখ

সেদিন আর আসবেনা
কেউ পাশে থাকবে না।

স্মৃতিপটে ভেসে রবে শুভ্র মেঘের দল,
চোখের কিনারায় ঝরবে শোকেরও জল।
দৃষ্টির গভীরে মায়া ভেসে রবে; পদ্মপাতার মতো
তোমায় দেখব ভেবে, কেটে যাবে মহাকাল কতো!

আমি নেতিবাচক কথা বলি,
সাথী যাবে মোর সেই আদরের তুলি।

যে ছিলো দৃষ্টির দুয়ারে-
নিয়তি ছিনিয়ে নিলো তারে!

কি করে আর হবে দেখা? সে পথ ফুরায় না
আমাদের মিলনঘাটি নীল পবনের ঠিকানা।
সাদা-কালো মেঘের পালে অশোকের ছায়া
নিশীতে হৃদয়ে জাগে তোমায় দেখার মায়া।

ঘুমন্ত চেহারায় রই তাকিয়ে,
মাঝে মধ্যে বুকে মাথা ঠুকিয়ে।
গান শুনিব বলে-
কাছে আসি নানা ছলে, কৌশলে।

আবার চলে যায় ফিরে
প্রেম নয়, শোকের তীরে।

ছায়া হয়ে থাকিব পাশে বৃক্ষজাতের মতো,
এ বক্ষে বেঁচে থাক তুমি, হাজার বছর শত।

প্রশংসিত বন্ধু

– মো. মাহমুদ শেখ

পূর্বের মতো আবারও উদিত ভালোবাসা নিয়ে
নতুনত্ব কোনো এক বন্ধু ফিরলো এই জীবনে
আশার প্রদীপ নিয়ে।
আমিও অনায়াসে সেই বন্ধুত্বের বিজয়মালা
হাজার আশা বক্ষে বেঁধে গলায় পরালাম
তোমাকে কাছে পেয়ে।

তোমার নামে সনে মিলিয়ে নামটি আমার হয়
প্রশংসিত বন্ধু। এ কেমন মিল! ভেবেছি বহু
আনন্দে অদূরে হারিয়ে যায়।
তোমার অনুপস্থিতি হৃদয়ে ভূমিকম্প তোলে
কখনও বা কারো সনে খোশগল্প করতে দেখে
ক্ষোভে তৃঞ্চার্ত হয় অবুঝ হৃদয়।

রাত্রি নিশীথে ভাবি যারে সে হয়তো ভাবে না
দিবানিশি নিদ্রা চোখে, জাগ্রত চোখে দেখি যারে
সে আমায় ভাবে না!
দুঃখের সময় আমি ছিলাম চিরসাথী, আপন বন্ধু
শত্রুতার মতো হীনচোখে আমি, ভবঘুরে আছি তাই
বন্ধুত্ব বুঝি আর হবে না!

চিরজীবনের সাথী হয়ে রবে বলে বন্ধু ডেকেছি
ভাবিনি কভু ব্যর্থতা তোমায় আঁকড়ে ধরবে-
আমায় করতে পর।
হারানো সব স্মৃতি মনে পড়বে, জানো হে বন্ধু!
আমার শূন্যতায় তুমি নিরবে কেঁদে কেঁদে
সাজাবে আপন ঘর।

তোমার প্রশংসা শুনিয়েছি জনে জনে, জানো!
ক্ষণে ক্ষণে বুঝেছো, কিন্তু মূল্যায়ন করোনি কভু
নিজের বুলিকে প্রাধান্য দিয়ে-
আপনা-আপনি পাগল হয় মানুষ, দেখিনি আমি
হাতে হাতে রেখে দিয়েছিলে কথা সেই রজনীতে
কেমনে ভুলবে তুমি? চিরসত্যটা নিয়ে।


কবি পরিচিতি

মোঃ মাহমুদ শেখ। জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর খুলনা জেলার তেরখাদা থানাধীন ইছামতী গ্রামে। পিতা মোঃ আবুল হোসেন শেখ ও মাতা মমতাজ বেগম। নয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠ। শিক্ষা জীবনে তিনি বি.এ. ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে খুলনা সরকারি বি. এল. বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। তিনি কয়খা ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন।

ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা ও রচনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আজও তিনি বিভিন্ন সাহিত্যিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০১৮ সালে “বর্ণ পরিচয় সাহিত্য পরিষদ” নামে তিনি নিজে একটি সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন যৌথ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বহু লেখা। এছাড়াও সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছে “আঁধারে ভরা জীবন” নামে কবির একটি একক কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশের পথে রয়েছে কবির দ্বিতীয় একক কাব্যগ্রন্থ “বিষাদ স্মৃতি”।