শেষ ট্রেন
– গোলাম রহমান
কাঠের বেঞ্চিতে বসে আছি হিমকুয়াশায়
শেষ ট্রেনের আশায়!
শিশির বিন্দুকণা রয়েছে জড়ায়ে
উর্ণনাভ আঁশের মতন অক্ষিপক্ষ্মে
ছোট ছোট তন্দ্রা আসে আর উবে যায়
পার্সিয়ান নীল লম্বা ওভারকোট জড়িয়ে গায়ে
মাথায় বাদামী উলের টুপি পরে
হাতে একটা তাজা গোলাপ নিয়ে
আসার কথা তার,
কতো ট্রেন এলো আর গেলো
কিন্তু সে আসেনি।
বেঞ্চিতে বসে আছি, বসে থাকছি
এক অদ্ভুত মোহাচ্ছন্নতায়!
ঝোপঝাড় ভেঙ্গেচুরে এই পথে
আসবে কী কখনো কোনোদিন
প্রতিক্ষার শেষ ট্রেনে সেই মনোরমা
কে জানে, আমিও জানিনা
তবুও অপেক্ষার প্রহর গোণা…
মুখোশ পরা সমাজকে ঘৃণা করে
– গোলাম রহমান
শুধু একবার দেখেছি তাহারে কালিসন্ধ্যায়
কলসী হাতে যেতেছে হেঁটে কালিন্দীর দিকে
তারপর আর ছায়া তার কভু পড়েনি পৃথ্বীর মাঠে!
সবুজ দীঘল ঘাস পায়নি টের
বাতাসও বুঝেনি তার হৃদযন্ত্রণার কথা
আমিও বুঝিনি
কী এতো কষ্ট ছিল
গাঁয়ের সাধারণ রূপসী মেয়েটির বুকে!
কী গভীর অভিমানে গিয়েছে সে চলে
অনন্ত অন্ধকারে আর ফিরবে না বলে!
ব্যথিত বাতাস বিষাদিত স্বরে বলে গেলো মোরে-
‘প্রতারক প্রেমিকের বিষাক্ত চুম্বন
নিয়েছে কেড়ে মায়াবী পৃথ্বীর সকল
মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে’!
অনুমিত সময়ের কাছে প্রশ্ন থাকে
একদিন সব আত্মাভিমানী রূপসী
তরুণীরা কী হারিরে যাবে চুপি চুপি!
জানি না তাহা, শুধু এইটুকু জানি-
বাঁশবনের মাথায় জেগে ওঠা
কলঙ্কিত চাঁদ ছিল না সে,
সে ছিল গাঁয়ের সহজ সরল
পরমা রূপসী বালা
তাই সে গিয়েছে চলে চুপিসারি বহুদূরে
সভ্যতার মুখোশপরা সমাজ ঘৃণা করে!
হরিণীর একটা চোখ
– গোলাম রহমান
ডাগর চোখের কোনো এক মায়াবী হরিণী
যে পুরুষ হৃদয়ে একদিন কামনার ঢেঊ
তুলতো, সেই হৃদয় আজ মৃত!
গহীন অরণ্যের ছায়া ভেঙ্গে
চাঁদ আর দেয়না ধরা মাঘীপূর্ণিমায়;
চাঁদেরও বিস্ময়!
উদরের দাহ মাথার তালু গরম করে
নাক দিয়ে ফোঁস ফোঁস করে বের হয়ে যায়!
আমি বিমূঢ়ের মত দেখি-
লাল কাঁকড়ার দল পলির বুকে পায়ের
দাগ ফেলে চলে যায়
শালিকের ঠ্যাঙের মত সরু বিবর্ণ
কিছু আঁচড় পড়ে থাকে পলির বুকে,
জোয়ার একবার এসে তাকে মুছে দিয়ে যায়
ভাটির টানে আবার জেগে ওঠে
অনেক পুরানো দগদগে ক্ষত!
হিজলের ফুল ঝরেছিল বহুবার
মুছিবারে ক্ষত, পারেনি তা;
জোয়ার ভাটার টানে খেলা করে
কাঁকড়ার দাগ আর পচা হিজলের ফুল!
মায়াবী হরিণীর একটা চোখ
কোনো এক গাড়ল নিয়েছে তুলে;
ক্লান্ত পায়ে কাতর হরিণী নিশ্চুপে দাঁড়ায়
জামরুল গাছের ছায়ার নীচে
মরা চাঁদ দেখা দিলে আকাশের কিনারে
ক্ষীণ চাঁদ বুঝেনি তার হৃদয়ের ব্যথা!
শকুনি ঠোঁটে
– গোলাম রহমান
আমি মৃত ছিলাম না
তবুও বুকের বামপাঁজরের
মাংস-হৃদপিণ্ড খুবলে নিলে
তোমার শকুনি ঠোঁটে
চোখের কার্নিশ বেয়ে
দুফোটা অশ্রু ঝরে পড়লো
শিশিরের শব্দে
এমনটা হওয়ার কথা নয়
তোমাকে তৃপ্ত হতে দেখে
হয়তো গড়ালো নীর…
ধুলামাখা জীবন
– গোলাম রহমান
রূপশালি ধান দেখেছি ধুলি পড়া কবিতার পাতায়,
অভিজাত শপিংমলে বাসমতি চালের দেখা পাওয়া যায়!
কতো ধানে কতো চাল ফলে এই সোনার বাংলায়,
সারা বছর ভরে থাকে বনিকের গোলায় গোলায়!
দিনভর রোদে পুড়ে কেজি তিন পোঁকাধরা মোটাচাল
বেঁধে গামছায় ঘরে ফিরি হরষ চিত্তে,মাথাটায় গোলমাল!
ভিক্ষার চাল কাঁড়া আর আকাঁড়ায় কিবা আসে যায়
জানো নাকি মাটির মানুষের জীবন কেবল ধুলায় গড়ায়!
নিশিথে ছনের চাল ফেঁড়ে মায়াবতী এসে বসে শিথানে
ছুঁয়ে চোখ বলে ‘নিদ যাও! খুঁজে মরো কেন জীবনের মানে’?
কবি পরিচিতি

গোলাম রহমান। জন্মস্থানঃ বরিশাল।
বর্তমান নিবাসঃ ঢাকা, বাংলাদেশ, ফোনঃ ০১৭১০৮৯৫২৫০।