বোরহানুল ইসলাম লিটন – কবিতা (এই কারণেই যাই ও’পথে ফিরে!, আসবি না মা ফিরে!, জিন্দাবাদের পাখি, যদি তুমি অবশেষে —, কারে বলি সখী!)

এই কারণেই যাই ও’পথে ফিরে!

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

অনেক দিনের আগের কথা মনটা রেখে বাটে,
ব্যাকুল হয়ে ফিরছি বাড়ি সূর্য তখন পাটে।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ হঠাৎ দেখি হিজল তলে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অভ্র আঁকার মিথ্যা ছলে
হাসছে এ’ কে আমায় দেখে স্তব্ধ আকাশ চিরে?
এই কারণেই যাই ও’পথে সুযোগ পেলেই ফিরে!

মাত্র ক’দিন ব্যবধানে – আছেই হৃদের রেখা,
ফের ও’পথে আবার হলো তারই সাথে দেখা।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ হবেই বাড়ি পাশের গ্রামে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বুঝেছিলাম আঁখির দামে
ক্যামনে বলি ’ভালোবাসি’ বাক্য রেখে শিরে –
এই কারণেই যাই ও’পথে সুযোগ পেলেই ফিরে!

বর্ষা ভরা মাঠের বুকে বইছে সেদিন ঢেউ,
নিবিড় ছায়ায় চুপটি আমি চারপাশে নেই কেউ।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দীঘল কেশের আউলা দোলে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ফিরলো সে ঠিক সময় হলে
কতো কথাই যত্নে দিতে বেঁধে এ’ তকদীরে –
এই কারণেই যাই ও’পথে সুযোগ পেলেই ফিরে!

ঘাম মুছে গা’র বিকেল হলেই পাখির স্বপ্নপুরী,
সাজতো এ’ মন স্নিগ্ধ বায়ে লাটাই ছেঁড়া ঘুড়ি।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ তার পিরিতের বিমল ছায়া
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ গড়তো ঘাসের সতেজ কায়া
গুড় এ’ নদীর শ্যামল ঢালে ছোট্ট কুটির ঘিরে –
এই কারণেই যাই ও’পথে সুযোগ পেলেই ফিরে!

এক দিবসে হিজল তলে মনটা দিয়ে সঁপে,
ক্যান যে হেসে বলেছিলো স্বপ্ন গেলাম রোপে!
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অতল তৃষায় বাঞ্ছা ছেঁকে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আর আসেনি সেদিন থেকে
তবু ভাবি পাই যদি ফের রাঙা রবির নীরে –
এই কারণেই যাই ও’পথে সুযোগ পেলেই ফিরে!

আসবি না মা ফিরে!

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

আসবি না মা ফিরে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ গুড় এ’ নদীর তীরে,
যেথায় রাতে চাঁদ উঁকি দেয়
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আটকে বটের শিরে!

আম কাঁঠালের ঘ্রাণ
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কাঠবিড়ালির ভান,
নেই কি জেগে মনের কোণে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কাক শালিকের গান!

তোর এ’ ঘরের দোরে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আজও এসে ভোরে,
আগের মতোই দোয়েল ডাকে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ লেজ উচিয়ে জোরে।

আর না পেলে গল
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ স্নেহের সে’ আঁচল,
কার আশে ফুল খুঁটবে খুকি
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বলতো লেবুর তল!

জিন্দাবাদের পাখি

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

খোকন যাবে নয় দূরে হাট
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কিনতে লোহার খাঁচা,
পথের মাঝে বললো ডেকে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ভিন গাঁয়ের এক চাচা।

নে না বেটা ষাট টাকাতে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ জিন্দাবাদের পাখি!
এই চেয়ে দ্যাখ চার পা বাছার
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কমলা কেমন আঁখি!

খুব সহজে যায় না মরে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ প্রাণটা কৈ এর মতো,
একটু আগেই ডিম ফুটেছে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ লোম গজেনি অতো।

শুনেই সে’ ছা কিনলো খোকন
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ গর্বে তাড়াতাড়ি,
পড়শীরা তার খবর পেয়ে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দেখতে এলো বাড়ি।

সবার মাঝে যেই না ব্যাগের
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ গিট্টু হলো খোলা,
হায়রে এ কি! লাফ দিলো এক
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মস্ত বড় হোলা!

যদি তুমি অবশেষে —

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

হবেই আবার দেখা কোন একদিন
নিযুত বছর পর যেতে পারে তারও কিছু বেশী,
সেদিনও বলবে চিল বারে বারে ডেকে
’ও হে নীরদের দল তোরা কেন রূপে এলোকেশী!’

দাঁড়িয়ে থাকবো একা হিজলের তলে
দৃঢ় অপলকে চষে নীলিমায় শত অভিমান,
এ’ হৃদয়ে আসবে কি গান?
আস্থাধারী অপেক্ষার ছটফটে দরে
ক্রোধ-বোধ ক্ষয়ে অকাতরে
ব্যাকুলে কিনবো তবু শালিকের মায়াবী জবান!

সুদূরের পানে চলা বলাকার দল
অবেলা ছড়িয়ে দিবে এ’ মননে ব্যথাতুর শ্বাস,
হঠাৎ দেখবো চেয়ে পাশাপাশি দোঁহে
তোমার ললাটে নেই একটুও ক্লান্তির আভাস –
মুছেছে যা দখিনা বাতাস!

অভয়ে অনন্তকাল এভাবেই র’বো
আঁখি ও হৃদের টানে মাঝে গড়ে চিরন্তন সাঁকো,
ছলনে বলনে নয়
ফেলে যতো সংশয়
যদি তুমি আমাকেই অবশেষে ভালোবেসে থাকো!

কারে বলি সখী!

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

বৈকাল বেলা সুরুজ নামলে ন্যাড়া পাকুড়ের ঘাড়ে,
বাছুরের টানে ছুটে নাকো ধেনু মেঠো পথে হাহাকারে।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ করে কি কলহ শালিকের ঝাঁক!
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সুদূরে হারায় ভুখা নলকাঁক
নীরদও যে খুঁজে আপনার মান ছিন্ন আঁচল পাতি!
কারে বলি সখী হৃদয়ের ব্যথা কারে বলি ’আয় মাতি!’

অবারিত মাঠে ফসলের ঢেউ রচে না সজীব সাড়া,
শ্যামলা বরণ বনানীর বুক হয়তো দিয়েছে ভাড়া।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ লালিত বাসনা বালুচরে এঁকে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ প্রজাপতি ধায় ফড়িঙেরে হেঁকে
তবুও খ্যালে কি ফিঙে আর কাক স্বভাবে চড়ুইভাতি!
কারে বলি সখী হৃদয়ের ব্যথা কারে বলি ’আয় মাতি!’

ঘুড্ডির মতো নীলাকাশে চিল কোথায় রয়েছে বেঁচে!
বাঁশরির সুরে গোধূলির মাজা উঠে না ক্ষণিক নেচে।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দখিনা সমীর খোয়ে তাজা খলা
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ পথে পথে মাঙে স্বীয় কান মলা
সুরেলা বাদল ঘুরে বনবাসে না পেয়ে ব্যাঙের ছাতি-
কারে বলি সখী হৃদয়ের ব্যথা কারে বলি ’আয় মাতি!’

জ্যোৎস্নার ধারা সিনান করে না তটিনীতে শুনে নেমে,
হুতোম পেঁচার জ্বল জ্বলে আঁখি বাঁশঝাড়ে গেছে থেমে।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ খাগড়ার মতি ক্ষয়ে ক্ষয়ে কায়া
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ নিরালায় মথে জোনাকির মায়া
শৃগালও বিদায়ে সাথে নিয়ে গেছে ডাহুক ছানার খ্যাতি-
কারে বলি সখী হৃদয়ের ব্যথা কারে বলি ’আয় মাতি!’


কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।

কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।