শেখ মোঃ সাইফুল্লাহ – কবিতা (মরণকে জয়, রাখিয়ো স্মরণ, আসব ফিরে ফিরে)

মরণকে জয়

– শেখ মোঃ সাইফুল্লাহ

মানুষে ভালোবাসি তাই
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সমাজে পাগল বলে
সমাজপতি তোমায় বলি
​ ​ ​ ​ ​ তুমিও কি পাগল হলে?
​ হোক না সে গরীব, হোক সে ধনী
​ হোক না সে তোমার ঋণী।
ধনী-গরীব সবাই সমান
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ভোলো কিসের ছলে।

আসা-যাওয়া সবের এক
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মাঝে কিসের ফাঁক
পান্থশালার পথিক যে তুই
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ চিন্তা করে দ্যাখ।
​ হেথায় থাকা চলবে নারে
​ একটু পরেই যাবে ফিরে
পান্থশালার রকমারি
​ ​ ​ ​ ​ পান্থশালায় ফেলে।

ভালো করে চিন্তা কর
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কিসের বাহাদুরি
দম ফুরালে ছাড়তে হবে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ তোর এ সোনার পরি।
​ ধন-সম্পদ আর বালাখানা
স্মরণ তোরে কেউ করবেনা।
অমর হবি যদি মানব ​ (মাসব?)
​ ​ ​ ​ ​ চোখের পানি ফ্যালে।

জন্মের পর মরার আগে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মানব ভালোবেসে
পারো যদি ধন্য হও
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ হাতেম তাই এর বেশে।
​ মরেও অমর হতে হলে
​ মানুষে মানুষে তফাৎ ভুলে।
সব মানুষে সমান জেনে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ নেও না টেনে কোলে।

পারো যদি অহংকার ছেড়ে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মানব সেবা করে
থাকতে জীবন মরণকে তুই
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ নেরে জয় করে।

রাখিয়ো স্মরণ

– শেখ মোঃ সাইফুল্লাহ

তব অবহেলা আমার প্রেম
​ ​ ​ ​ রাখিবে অমর করে
হইবে না মরণ রাখিয়ো স্মরণ
​ ​ ​ ​ আমার মরার পরে।
আমার কবরে হয়তো জানি
ঝরিবে তোমার নয়নের পানি।
তখন পাপিয়া হয়তো গাহিবে
​ ​ ​ ​ তব অবহেলা স্মরে।

যেমন, তাজমহলের পাথরে গাহে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ প্রেমের অমিয় বানী
মরণেও মরে না প্রেমিক জনা
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অন্যে করিয়া ধ্বনি।
যমুনার জল বহে অবিরল
প্রেমিক প্রেমিকা জানে না ছল।
তাই তাজমহল, মরণেও আমর
​ ​ ​ ​ ​ ​ যমুনা নদীর পাড়ে।

দেখেছো তাজমহল? শুনেছ কভু
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দেওয়ালে কান পেতে
আজো মমতাজ, শাহাজাহান তরে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কাঁদে সে প্রতি রাতে।
অন্যে তাহার খোঁজ নাহি জানে
সে কাঁদন শুধু প্রেমিকেই শোনে।
শরৎ আসে শিউলি যেমন
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ থাকে বছর ধরে।

তব অবহেলা আমার প্রেম
​ ​ ​ ​ রাখিবে অমর করে।

আসব ফিরে ফিরে

– শেখ মোঃ সাইফুল্লাহ

আসব ফিরে কথা দিলাম
​ ​ ​ ​ ​ আজকে তোমায় ছুয়ে
হয়তো বকুল, না হয় জেনো
​ ​ ​ ​ ​ সোনালী ফসল হয়ে।
বকুল বনে ভিড়লে মাছি
বুঝবে আমি এসে গেছি
বলার যাহা বলো তখন
​ ​ ​ ​ ​ ​ বস্ত্র গলায় নিয়ে।
আসব ফিরে কথা দিলাম
​ ​ ​ ​ ​ ​ আজকে তোমায় ছুয়ে।

বকুল গন্ধে দক্ষিণ হাওয়া
​ ​ ​ ​ ​ ​ আসবে জানি ধেয়ে
আমায় দেখে মাথা তাদের
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আবচে যাবে নুয়ে।
বলবো আমি লজ্জা পেলে
কী বলবে বলো খুলে।
চোখের লজ্জা মুছে ফেলো
​ ​ ​ ​ ​ ​ শাড়ীর আঁচল দিয়ে।
আসব ফিরে কথা দিলাম
​ ​ ​ ​ ​ আজকে তোমায় ছুয়ে।

নদীর ঘাটে গাঁয়ের বধূ
​ ​ ​ ​ ​ ​ বাঁধবে যখন দল
হয়তো তখন আসবো হয়ে
​ ​ ​ ​ ​ ​ তাদের কলসীর জল।
গাঙ-চিলেরা ঢেউয়ের বুকে
খেলব যখন মহা সুখে।
তাদের মাঝে আসব আমি
​ ​ ​ ​ না হয় গাঙ-চিল হয়ে।
আসব ফিরে কথা দিলাম
​ ​ ​ ​ ​ আজকে তোমায় ছুয়ে।

চলতি পথে ধূলিবালি
​ ​ ​ ​ ​ জড়িয়ে গেলে পা
মনে রেখো সেও তো আমি
​ ​ ​ ​ ​ অন্য কেহ না।
বটের ছায়ায় ঠিক দুপুরে
বাজলে বাঁশী করূণ সুরে।
সেথাও আমি থাকবো জেনো
​ ​ ​ ​ ​ ​ সুরে লহর নিয়ে।
আসব ফিরে কথা দিলাম
​ ​ ​ ​ ​ ​ আজকে তোমায় ছুয়ে।

বাংলা আমার আমি বাংলার
​ ​ ​ ​ ​ ​ তাইতো ঘুরে ফিরে
যেথায় যাই যতই দূরে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আসব ফিরে ফিরে।
বাংলা মায়ের আঁচলখানি
দেয় যে আমায় হাতছানি।
তাইতো আসব ফিরে ফিরে
​ ​ ​ ​ ​ বাংলার সবুজ গাঁয়ে।
আসব ফিরে কথা দিলাম
​ ​ ​ ​ আজকে তোমায় ছুয়ে
হয়তো বকুল না হয় জেনো
​ ​ ​ ​ সোনালী ফসল হয়ে।


কবি পরিচিতি

শেখ মোঃ সাইফুল্লাহ। জন্ম অক্টোবর ২৭, ১৯৫৩ সালে বাগেরহাট জেলার মিঠাখালী গ্রামে। পিতা খাদেম আলী শেখ ও মাতা জয়নাব বেগম। মোংলা উপজেলার টাটিবুনিয়া স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৭০ সালে বাগেরহাট সরকারি পি সি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ।

সহজ ও সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত এক বাউল কবি তিনি – কবির চিত্ত কাব্য সাধনার অনন্য এক ভূমি। তাই কিশোর বয়স থেকে যে লেখালেখির শুরু, জীবনের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে এখনো তাঁর কাব্য সাধনা চলেছে অক্লান্তভাবে। তাঁর লেখার মধ্যে প্রেম ও প্রকৃতিই প্রধান্য পেয়েছে সব সময়। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি কবিতার বই এবং দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে স্থান পেয়েছে তাঁর অনেক কবিতা। (মোবাইল – ০১৩২ ৯৭৩ ০০৯)