যদি তুমি অবশেষে
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
হবেই আবার দেখা কোন একদিন
নিযুত বছর পর যেতে পারে তারও কিছু বেশী,
সেদিনও বলবে চিল বারে বারে ডেকে
’ও হে নীরদের দল তোরা কেন রূপে এলোকেশী!’
দাঁড়িয়ে থাকবো একা হিজলের তলে
দৃঢ় অপলকে চষে নীলিমায় শত অভিমান,
এ’ হৃদয়ে আসবে কি গান?
আস্থাধারী অপেক্ষার ছটফটে দরে
ক্রোধ-বোধ ক্ষয়ে অকাতরে
ব্যাকুলে কিনবো তবু শালিকের মায়াবী জবান!
সুদূরের পানে চলা বলাকার দল
অবেলা ছড়িয়ে দিবে এ’ মননে ব্যথাতুর শ্বাস,
হঠাৎ দেখবো চেয়ে পাশাপাশি দোঁহে
তোমার ললাটে নেই একটুও ক্লান্তির আভাস –
মুছেছে যা দখিনা বাতাস!
অভয়ে অনন্তকাল এভাবেই র’বো
আঁখি ও হৃদের টানে মাঝে গড়ে চিরন্তন সাঁকো,
ছলনে বলনে নয়
ফেলে যতো সংশয়
যদি তুমি আমাকেই অবশেষে ভালোবেসে থাকো!
কবিগুরুর প্রতি
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
সিংহ যুগল চুপটি খাড়া
সদর দোরের ঘাড়ে,
ঘামছে ক’টা হরতকী নিম
নিঝুম বাগের আড়ে।
স্বচ্ছ ঘাটের সবুজ জলে
দেখে পাখির হাসি,
পত্র ফেলে আম বহেড়া
দুলছে পাশাপাশি।
গুরু তোমায় দেখতে এলাম
সয়ে রোদের জ্বালা,
মঞ্চ দালান সব তো আছে
কোথায় কথার মালা?
আজ যদি যাই কাব্য বিনে
রিক্ত হাতে ফিরে,
ফের কি খোঁজে আসবো ভাবো
নাগর নদীর তীরে!
বন্ধু তুমি আজ এ’ বেলা কই?
(গীতিকাব্য)
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
বিরল ঢলে বান ডেকেছে
শুকনো গাঙে ওই –
বন্ধু তুমি আজ এ’ বেলা কই?
না যদি রও শ্যামলা ঢালে
ক্ষণিক প্রীতি স্মরি,
দুলবে কি আর ঢেউয়ের তালে
বিজন ঘাটে তরী!
ব্যাকুল আঁখির ছন্দ যদি
রচলো না ভাব নিরবধি
চাইবে কে কও সপ্ত রঙা ছই?
বন্ধু তুমি আজ এ’ বেলা কই?
মুচড়ে ধুয়ে যা ছিলো গাদ
রুক্ষ খরার স্মৃতি,
ছল ছলাইয়া চলে পানি
গেয়ে প্রেমের গীতি।
ঢাল যদি ফের রয় গো ফাঁকা
করবে না চাঁদ দৃষ্টি বাঁকা
হাসবে কি কও বৃক্ষ দু’পাড় রই?
বন্ধু তুমি আজ এ’ বেলা কই?
খুঁজে ফিরি আপনারে
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
আহত স্বপন যতো ভোরে দ্বিপ্রহরে
শালিকের পাখে এঁকে,
ব্যথিত ব্যাকুল কথা বলাকারে বলি
গোধূলিতে ডেকে ডেকে।
দেখেও কি বুঝে সাঁঝ বেদনা অতল
ভেবে অকূলের তরী!
জোরালো ঝিঁঝির ডাকে গড়ে এ’ পাঁজরে
ঘুটঘুটে বিভাবরী।
বিবশ মননে শেষে ঘুমিয়েই পড়ি
খেদে নিশুতির দ্বারে,
এমনি করেই রোজ পরমায়ু ক্ষয়ে
খুঁজে ফিরি আপনারে।
ভাববো না সুনয়না!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
আমি) ভাববো না সুনয়না –
ভুলুক দখিনা বায়ু তরু,
লুকাবো অব্যক্ত ব্যথা বিরানের মতো
হলেও সুতাল বিনে শ্যামা ঢাল ক্ষয়ে ক্ষয়ে মরু।
দাবড়ে তাড়াতে ক্ষীণ ক্ষ্যাপাটে এ’ ফেউ –
তুমি শুধু এনে দাও ক্লেশিত মননে
প্রিয় ছোট যমুনার ঢেউ!
আমি) ভাববো না সুনয়না –
না ডেকে ব্যাঙেরা র’লে ঘুমি,
অবাক হবো না দেখে সাঁঝের সদর
গড়লে ঝিঁঝিঁরা হয়ে বিউগল পলাশীর ভূমি।
সাজাতে সেই যে দেয়া খ্যাতি –
তুমি শুধু এনে দাও আমৃত্যুর তরে
এ’ বাদাড়ে জোনাকির বাতি!
আমি) ভাববো না সুনয়না –
শুনে ওই নিশুতির গান,
বারেক পিছন ফিরে কাঁদবো না আর
ঘোরালো ভূতুড়ে ক্ষণ ছিঁড়লেও নীরদের কান।
রুখতে যা তীব্র আর্তনাদ –
তুমি শুধু এনে দাও ব্যথিত গহনে
চির চেনা দ্বাদশীর চাঁদ!
কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।