পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা (ভাঙা গান, জোয়ার মনে, ফাগুন রজনী, কলমে ফাগুন, রাত তুমি সুন্দর)

ভাঙা গান

– পারমিতা ব্যানার্জি

কখন যেন বদলে গেছে
বসন্তের রঙ।
আর হয়তো হবে না দেখা।
হবে না সেই আগের মতো
কথা বলা।
ঝরবে না বসন্তের মূর্ছনা!
ডানা ভাঙা পাখি
বসে আছে জীর্ণ বাসায়…
কণ্ঠে জাগে না আর গান।

এই পর্যন্ত লিখে থেমে গেল
ভালবাসার কলম!
ভাবলো হয়ত বোঝার ভুল।
মনের সাগরে ঢেউ ওঠে
আজও তেমনই।
বসন্ত হারানোর দেশে
কেন এমন হয়, কে জানে…

জোয়ার মনে

– পারমিতা ব্যানার্জি

ওরে ও অবুঝ মন…
সামাল দে সামাল দে।

রসের ধারা বইছে দ্যাখ্
একতারার ঐ টংকারে…
প্রেমে পাগল হচ্ছে বাউল
পথ হারানোর গানে।

ওরে ও ক্ষ্যাপা মন…
সামাল দে তোর প্রেম!

খেজুর গাছে মন বেঁধেছিস,
চুঁয়ে পড়ছে রস।
রস সাগরে সাঁতার কেটে
কাটলো যে তোর বেলা।

ওরে ও পাগল মন…
সামাল দে তোর ঘর!

ভাবের ঘরে চুরি হলে
চিনবি কী আপন পর!
পথে পথে ঘুরে মরে
পাবি না প্রেমের জোয়ার।

ফাগুন রজনী

– পারমিতা ব্যানার্জি

আড্ডা শেষে
শূন্য পেয়ালারা হয়তো
ভালবাসার ফাঁকি ।

ফাল্গুনের প্রথম দিনে
‘আয় বসন্ত’ __
বলেছিল কালো পাখি।

দিনের শেষে
শূন্য হলো যখন ঘর,
ছোপ ছোপ সন্ধ্যা এসে
ভরে দিলো
অসমাপ্ত রাতের বাসর।

অপেক্ষায় রইলো
একাকী কালো পাখিটা
অনন্ত কালিমায়।

কলমে ফাগুন

– পারমিতা ব্যানার্জি

ফাগুন এলো কি এলো না
এই হঠাৎ রাত থেকে প্রাতে।
তবু কলম ছিল হাতে
অস্থির দুই আঙুলের ফাঁকে
এই অবেলায়…

সামনে ছিল খোলা
আকাশের মত ফাঁকা খাতা।
কিংবা কাঙালির পাত্র।
ঝর্ণা কলমের কালি ঝরে না
কোনো মানবিক ভাবনায়।
শূন্য খাতায় সৃষ্টি হয় না
জীবনের গান।
ফাগুন তবু আসে।
পলাশও ফোটে পূর্ণ যৌবনে….

ফাগুন এলো কি এলো না
জীবনের সুপ্রভাতে,
ক্লান্ত কলম থাকুক সংঘাতে।
কলমের ঝর্ণা ঝরুক
আজ অবেলার পলাশে…

রাত তুমি সুন্দর

– পারমিতা ব্যানার্জি

আসকারা মন ছুঁয়ে
সূর্য যেই ডুবতে গেল পশ্চিমে,
আকাশ বলল, ‘তাড়া কিসের?’
‘একটু পরেই তো
সব রঙ মুছে অন্ধকারে আমি!
ভাল লাগে না আমার।’
আমি বললাম __
সূর্য পাটে গেলে তুমি অপরূপা।
আকাশ ভরা তারায়
মোহনীয় হয়ে ওঠো তুমি।
অন্ধকারে তুমি যখন
দিনের প্রতীক্ষা করে কাটাও…
আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠো।
এক পরিপাটি অন্ধকারে…
আসকারা মন পাগল-পারা।
আঁধারে তুমি সুন্দর ভীষণই!
এক অনিন্দনীয় সুন্দর!


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।