সুমিত্র দত্ত রায় – কবিতা (অন্তর্লীন, সায়াহ্ন , সরলরেখা, কথা)

অন্তর্লীন

– সুমিত্র দত্ত রায়

বহে তবু নিরন্তর কাব্যপ্রেম মননে আমার
সৃষ্টির আদি রসে।
যদিও উদ্বেলিত প্রাণ অসীমে অনন্তে…
তবুও দূরে আজো কিছু ভাসে,
যেথা মোর প্রিয়া আজও রয়েছে পরবাসে।

স্বর মুর্চ্ছনায় হৃদয় স্বত্বার ব্যপ্তিরে প্রকাশে
কল্পনা বিলাস বর্ননা করধ্বনি শেষে
বিষন্নকরে এ জীবন।
ব্যথাতুর মনে ভাবি,
প্রিয়া মোর আজো পরবাসে।

কাব্যময় বচনে রাধাকৃষ্ণের লীলায়িত
শ্রীমতির শ্যাম অভিসার দেখি
কবিতার ভাষে।
স্মৃতির পরশে ওগো প্রিয়,
সে শুভ লগনে মনে হয় না তো…

তুমি নেই …কিম্বা… তুমি আজও পরবাসে…

সায়াহ্ন

– সুমিত্র দত্ত রায়

প্রভাকর যবে করে প্রভা সঙ্কোচন
দিগন্তের বর্ণে ফেরে রক্তিম চেতন
অসীম বিশ্বের। স্নিগ্ধ সমীরণ স্পর্শে
প্রান্তিক রেখাতে ধায়, বরাবর হর্ষে
পুলকিত মানবেরা। দূরে বহুদূরে
স্তব্ধ শান্ত পরিবেশ। সৌম্য মাধুর্যেরে
সাথে নিয়ে পল্লীবালা দ্রুত ত্রস্ত ধায়
অম্বুর সন্ধানে, দিবে তুলসী তলায়।

অতঃপর ধীরে ধীরে সুপ্ত রক্তিমকে
অস্বীকার করে, শশী আপন সত্তাকে
প্রকাশিতে থাকে। গ্রাম্য বধূ গৃহ পরে
শান্তি কামনায়-শঙ্খ ফুকারিয়া করে
মঙ্গল সূচনা। সেথা ঐ সায়াহ্ন আসে,
মঙ্গলপ্রাপ্ত জ্যোৎস্না শোভে নীলাকাশে।

সরলরেখা

– সুমিত্র দত্ত রায়

এক সমতলেই দুটি বিন্দু
অথচ সরলরেখা নেই।
প্রান্ত থেকে প্রান্তে যাবে বলে
উন্মাদ ভ্রমণ।
শুধু মাত্র সরল পথের অভাবেই
বিভ্রান্তি চুড়ান্তে,
অলীকের ছড়াছড়ি গন্তব্য মেলে না।

আবর্তনে কেন্দ্র পরিধিও সম দূরত্বই
ভ্রাম্যমান পরিধির শুধু ঘুরে চলা,
কেন্দ্র সন্ধানেতে।
যা সতত পৃথিবীর সূর্য
বা চন্দ্রের পৃথিবী প্রদক্ষিণ চিরন্তন দূরে,
যাত্রা সরল নয় বলেই।

কথা আছে কাজ আছে তবু
সারাদিন মনে কালো দাগ,
যখন তখন পরিত্যাগ।
দুরত্ব মাপায় সেই কাঁটা
জীবনরেখা সরলরেখা নয়
জটিলতা সর্বব্যাপ্ত,
দুটি মন আজীবন দূরে।

কথা

– সুমিত্র দত্ত রায়

কত কথা বলে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বুঝি না;
চোখ কথা বলে,
কিছু কথা বলে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বুঝি তা।

কান কথা শোনে,
কত কথা শোনে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বোঝে না;
মন কথা শোনে,
কিছু কথা শোনে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ভোলে না।

মুখ না চোখ!
কান না মন!!


কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।

আমি ছেলেবেলা থে‌কে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু,  আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।