বোঝা বড় মুশকিল
– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস
কেহ অভিমানে, কেহ খুশিতে,
কেহ রাগারাগি, কেহ আবার হাসাহাসি,
ভাবের আদান প্রদানের গড়মিল,
মনের ভাব বোঝা বড় মুশকিল।
শিশুদের আবদার কান্নাকাটি বারবার,
কেহ চায় ভালোবেসে বোঝাতে,
কথা পছন্দ না হলে মুখটা কালো করে,
অপলক তাকিয়ে থাকে,
খোঁজে কখন হবে তার মতের সাথে মিল,
মনের ভাব বোঝা বড় মুশকিল।
বন্ধু বান্ধবী মিলে চলছে পথে,
কত আনন্দ খুশিতে মিলে মিশে,
হঠাৎ দেখা গেল ঝগড়াঝাটি মারামারি,
ঘটে গেল চরম অমিল,
আগে থেকে বোঝা বড় মুশকিল।
স্বামী স্ত্রী বসে কখনো নিরালায়,
হাসি খুশীতে রোমান্টিক হতে চায়,
অতীত ভবিষ্যতের কথা টেনে এনে,
হয়তো মুখটা হয়ে গেল গম্ভীর,
মনের ভাব বোঝা বড় মুশকিল।
পথে ঘাটে যানবাহনে কখনো,
ঘটনা দুর্ঘটনায় সাহায্যের হাত এখনো,
বাড়িয়ে দেয়,কেহ এড়িয়ে যায়,
কেহ কথা বার্তায় সাজে বড় উকিল,
মনের ভাব বোঝা বড় মুশকিল।
মা বাবার আদরের ধন সন্তান,
বৃদ্ধ বয়সে কেহ পায় অতীব সম্মান,
ভাগ্যে কারো জোটে অপমান,
অনাদরে হয় কঠিন পরিস্থিতির সামিল,
আগে থেকে বোঝা বড় মুশকিল।
কোথাও ঠান্ডা, কোথাও গরম,
কোথাও বন্যা, কোথাও মেঘ বৃষ্টি,
প্রাকৃতিক নানান অঘটন, বিপর্যয়,
কোথাও ডাকছে বসন্তের কোকিল,
মানুষের সবকিছু বোঝা বড় মুশকিল।
মায়ের ভালবাসা
– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস
মায়ের যেন কখনো না হয় বদনাম,
অফুরন্ত ভালবাসার হয় না কোনো দাম।
মা সন্তানের একমাত্র অবলম্বন,
মা তাকে সযত্নে করে লালন পালন।
আদর যত্ন,স্নেহ, ভালবাসা দেয় মা,
উদ্দেশ্য মানুষের মত মানুষ গড়া।
অভাবের সংসারে দিশেহারা পরিবার,
মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত নহে সন্তান তার।
নিরবে নিভৃতে চোখের জল গড়ায়,
পরিপূর্ণতা রাখে মায়া মমতা ভালবাসায়।
কোলের সন্তান চোখে চোখে রাখতে চায়,
দূরত্বে ভালবাসার কমতি নাহি হয়।
গরীবের ঘরে হাসি কান্না মারামারি,
মা কতটা সহ্য করে জানে অন্তর্যামি।
অর্থের অভাব নেই, আছে মান অভিমান,
মা আগলে রাখে তার আদরের সন্তান।
লেখাপড়া শিখে বড় হবে ছেলে মেয়েরা,
সুখে থাকবে এইটুকু চায় মায়েরা।
কত শত সন্তানের আনন্দের অংশীদার,
ভাগ্যে নাহি জোঠে অভাগা সেই মা’র।
ছেলে মেয়ে যখন চাকুরী পেয়ে বাড়ি আসে,
মা’শুধু জানতে চায় শরীর কেমন আছে।
ঘরের বাহিরে গেলে শুধু বারবার,
অপেক্ষার পালা শুরু হয় তার মা’র।
অনেক দিন পরে কোনো সন্তান ঘরে ফেরে,
আনন্দে নিরবে তপ্ত অশ্রু ঝরে পড়ে।
মায়ের অন্তর প্রকাশ্যে বোঝা বড় কঠিন,
নিজের কষ্টেও সন্তানের আনন্দে থাকে রঙিন।
মায়ের ভালবাসা নাটকে সিনেমায়,
বাস্তবে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে, শত বেদনায়।
আজকাল মা কাঁদে সন্তানের অবহেলায়,
সবকিছু বদলায় মায়ের অন্তর নাহি বদলায়।
মায়ের আছে শুধু গভীর ভালবাসা,
সন্তানের অন্তরে চিরকাল পাশে থাকা।
মায়ের ভালবাসার মর্ম বুঝে একবার,
গোপনে ডুকরে কাঁদে হৃদয়ের হাহাকার।
ভবিষ্যতের শিশুরা
– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস
তোমরা শিশু তোমরাই উচ্ছল,
গড়বে নিজের ভবিষ্যত,
ভাঙ্গবে তোমরা দুর্নীতির শৃঙ্খল,
অন্যায় অবিচার করবে নসাৎ।
সততা নিয়ে পরিশ্রম করে,
পড়াশোনায় করবে মনোযোগ,
মেধা আর বুদ্ধি খাঁটিয়ে সবে,
ঘটাবে ন্যায় বিচারের সংযোগ।
তোমরা এখন পবিত্র কাঁদামাটি,
তৈরি হবে ন্যায়ের বুলেট,
শিশু বলে তুচ্ছ নও মাখো ধুলোমাটি,
খুলে যাবে দুঃখের বন্ধ গেট।
যেমন লেখাপড়ায় পারদর্শী হবে,
আভ্যন্তরীণ আর বহিরঅঙ্গনে,
আচর আচরণে মুগ্ধ হবে,
ভাল বলবে সবাই বাহিরে অন্দরে।
আজ শিশু আগামীতে পিতামাতা হবে,
দায়িত্ব কর্তব্য আর সর্বক্ষেত্রে,
তোমাদের পদচারনায় কম্পিত হবে,
যত অপরাধী চক্র দুনিয়াতে।
ভবিষ্যতে তোমরা ই দেশের কর্নধর,
এক একজন জলন্ত আগ্নেয়গিরি,
করবে অপরাধ কে পদদলিত আবার,
মানুষকে বাঁচাবে হয়ে গিরি ধারী।
তোমারা অনুশীলন আর মননে,
প্রতিষ্ঠিত হয়ে দূর করে দাও,
যত অপশক্তি আছে চারপাশে,
তোমরা শিশু প্রতিভা ফলাও।
দেশপ্রেমিক হয়ে হও আগুয়ান,
ভবিষ্যতে রাখিবে দেশের সম্মান,
নতুন সমাজ হবে বেগবান,
বাংলাদেশ হবে শ্রেষ্ঠত্বে দৃশ্যমান।
পদচিহ্ন
– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস
জীবনের বেশী সময় অধ্যাপনা,
চলাফেরা করেছি কলেজ অঙ্গনে,
কাটিয়েছি মধুর সময় হয়েছি ধন্য।
প্রতিদিন ছিল কর্মময় আনাগোনা,
এখনো স্মৃতি হয়ে জাগে মনে,
শুধু মুছে গেছে পদচিহ্ন।
এখনো যথারীতি শিক্ষকরা ক্লাসে,
ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশোনায় ব্যস্ত,
অফিসের যথা সময়সূচী।
সবকিছুর মাঝেও চারিপাশে,
নতুন নতুনের আগমনে ন্যাস্ত,
জানা অজানা কর্মসূচী।
সবুজ মাঠ উপরে নীল আকাশ,
চারিদিকে ঘেরা প্রাচীর আলয়,
ক্লাসরুমের সেই চক ডাস্টার।
আমার বিহনে কি করে হাহুতাশ,
সবার অলক্ষ্যে খোঁজে কি আমায়,
অভাব বোধ করে পদচারনার!
হৃদয়ের আকাশ ঘন মেঘাচ্ছন্ন,
দিনেদিনে বাড়িতেছে অন্ধকার,
একদিন হবে অবসরের পরিসমাপ্তি।
কলেজ প্রাঙ্গনের কত স্মৃতি চিহ্ন,
হাসি আনন্দ ভ্রমন খেলাধূলার,
বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন সমিতি।
সেই মধুর সোনালী অতীত,
প্রানপ্রিয় ছাত্রছাত্রীদের সাথে,
ছিলাম লেখাপড়ায় জড়ানো।
বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে আছে কর্মরত,
সুখে দুঃখে পরিবারের সাথে,
শিক্ষার্থীরা আমার পরম প্রিয়।
ছাত্র হোষ্টেল আর শিক্ষকদের কোয়ার্টারে,
দূর দূরান্ত থেকে এসেছিলাম কাছাকাছি,
আন্তরিকতায় ছিল ভরপুর।
অবসরে কেউ গেল পরপারে,
কঠিন বাস্তবতায় নেই পাশাপাশি,
শেষ পথের যাত্রী সবাই আছে আপন ঘর।
কলেজ প্রাঙ্গণের সেই সবুজ আঙ্গিনায়,
ভালবাসার টানে ছুটে যাই,
ভালোলাগে সবসময়।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সবার মঙ্গল কামনায়,
ধীরে ধীরে চলে যেতে চাই,
পরপারের অজানা ঠিকানায়।
কবি পরিচিতি

কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। জন্ম জুলাই ২, ১৯৫৫, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার কাষ্টবাড়িয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে। পিতা – হৃদয় চন্দ্র বিশ্বাস, মাতা – ফুলমতি বিশ্বাস।
ছোট বেলা থেকে একটি সংগ্রামশীল পরিবারে সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন লেখাপড়ার পাশাপাশি আবৃত্তি, গান ও মঞ্চনাটকের সাথে যুক্ত হন। গনিতের অধ্যাপক হলেও সাহিত্যের প্রতি তাঁর ভালো লাগা আজীবন। কর্মজীবনের অবসরে থেকেও সাহিত্য চর্চায় নিজেকে সম্পৃক্ত নিরলসভাবে।
স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা, বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও সাহিত্য পত্রিকায় তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সহজ ভাষায় ছন্দ মিলের উপস্থাপনায় লেখা তার কবিতাগুলো পাঠ করে পাঠকেরা সামান্যতম আনন্দ পেলেই কবি নিজেকে ধন্য মনে করবেন।