রোদেলা দিন
– গোলাম রহমান
রোদেলা রোদেলা দিন হয়ে গেছে পার
চারিদিকে ঘিরে আছে নিকষ আঁধার!
পিপাসা পিপাসা অনেক পিপাসা বুকে
এক ঘড়া জল ঢেলে দেবার আছে কে?
হিম শীত আসিতেছে বিষের ছোবল
ঢুকে পরি খুঁজে নিয়ে নিবিড় খোড়ল!
ঝুরঝুর ঝরে গাছের হলুদ পাতা
মরা ডাল নিয়ে দাঁড়ানো গাছের মাথা
নবীন কুঁড়ির দেখা, নাই কোনো আশা;
সাগর নিয়েছে শুষে বাতাস দখিনা
ছেড়ে দেয়া যাক রাঙা ফাগুনের আশা
রোদেলা রোদেলা দিন আর ফিরিবে না!
যতটা অলস সময় রয়েছে পড়ে
চুপচাপ কেটে যাক খোড়ল ভিতরে!
শুষে নিতে ইচ্ছে করে
– গোলাম রহমান
অনেক হেঁটেছি পথ জলের কিনার ধরে
পিপাসায় কাতর হয়ে পৃথিবীর তিন ভাগ
জল শুষে নিতে ইচ্ছে করে…
জলের কুয়াশায় ঢাকা চাঁদটাকে পেতে কার-
না ইচ্ছে করে…
আকাশ একবার এসেছিল নেমে
অন্ধকার পৃথিবীর কোলে
সময়ের কাছে হার মেনে সে গিয়েছে চলে
অনেক অনেক দূরে
আর ফিরবে না বলে…
পাথরের বুক থেকে জলের ধারা বইতে দেখে
স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম পাথরের উপর
একবার মাথা ঝুকে পড়ে ছিল মাটিতে
স্রষ্টার পায়ের কাছে
তারপর সটান দাঁড়ায়ে হেঁটে গেছি…
সব জ্ঞান চাপা পড়ে রয়ে গেছে পুঁথির ভেতর…
আমাদের কীর্তনিয়া চাঁদ
– গোলাম রহমান
নিকটাত্মীয়ের মত চাঁদ কী কখনো
পৃথিবীর কাছাকাছি নেমে আসে!
হয়তো আসে, হয়তোবা আসে না।
জানি না সঠিক, দেখেছি কেবল
সাগর মহাসাগরের বুক একবার
স্ফীত হয়ে ওঠে আবার চুপসে যায়।
আমাদের হৃদয়ও কি আন্দোলিত হয়?
জানা নেই, অনেকটা দুর্বোধ্য ব্যাপার।
জলপদ্মের সাথে একটা মধুর সম্পর্ক আছে
চাঁদ নেমে আসে জলে নিজেকে উজার করে
এত্তো এত্তো জলকমল ফোটাতে।
প্রকৃতিকে মাতিয়ে তুলে অঢেল জোছনায়
জোনাক পোকারা অভিমানে ফিকে হয়ে যায়।
পরমার থুতনি ছুঁয়ে প্রেমিক পুরুষ গদগদ,
আদুরে গলায় বলে চাঁদবদনী আমার!
চন্দ্রালোকে শোকাহত হই…
সোহাগ রাতের শেষে দেখি
সেই নারী অচ্ছুত হয়ে পড়ে থাকে
বাঁশবনের আড়ালে নিথর দেহে।
আকাশ থেকে চাঁদ পালায়,
জোনাক পোকারা লাজে মরে
ঘোর অমানিশা নেমে আসে পৃথিবীর’পরে!
হুতুম পেঁচার বুকে ব্যথা জাগে, ঘাড় বাঁকা করে
একবার তাকায় আকাশের চাঁদের পানে
আর একবার তাকায় বাঁশবনের নীচে
তারপর উড়ে যায় কীর্তিনাশার দিকে!
এই খানে ছিল এক নদী
– গোলাম রহমান
কুলকুল ধ্বনি তুলে যেই নদী একদিন বয়ে যেত
বুকে তার জেগেছে অনেক ডুবোচর
পালতোলা নৌকা ভাসতে দেখবে না আর
শুনবেনা আর পরিযায়ী পাখিদের কলোতান
হারায়েছে তার ভরাট যৌবন, এখন সে নিষ্প্রাণ
কে তাকায় ফিরে রূপহীন নদীটির পানে!
বুক তার গিয়েছে ভরে শৈবালদামে
মাঝে মাঝে কিছু ডাহুক ছানার দেখা মেলে।
সেই নদী আজ নেউলের আবাস
তীরে তীরে ভরা খাক আর কাশ।
দু’পাড়ের মানুষের গালে হাত, নির্বিকার!
কোনোও এক জোছনা ভরা রাতে শ্রাবণীর সাথে
জল এসে ভরবে কী বুক তার
ফিরে পাবে কী হারানো যৌবন
জানি না আমি, জানে না সেই মড়া নদী!
হয়তো দেখবে একদিন ইতিহাসের পাতায়
লেখা হয়ে আছে- এইখানে বয়ে যেত
খরস্রোতা নদী কোনো এক দিন…
বুক ভরা জল ছিল, ছোট ছোট ঢেউ ছিল
তার নাম ছিলো না কোনও…
নিয়তি
– গোলাম রহমান
তোমার সকল ব্যথা হৃদয়ে অনুভব করে নিয়ে
চোখের জল চোখেই শুকালাম আজ!
নিয়তির ঘাড়ে চেপে দিয়ে সব কাজ
সময়ের কাছে দাবী থাকে
সকল সহজ কাজ যাহা আমাদের নয়
উহা বহিবার ভার!
অমানিশার আঁধার কেটে যায় কী তাতে
উহা জানে কেবল পাথর সময়
আমরা জানি না তাহা
আমাদের চোখে আসে জল নোনাজল
সময়ে খসে পড়ে প্রেয়সীর হাতের রুমাল
তবুও আমরা স্থির থাকি নোনা জল নিয়ে
তাকায়ে রাতের আকাশের পানে
কুয়াশার জাল ছিঁড়ে
যদি নবীন আলোর দেখা পাওয়া যায়
কূহেলী কূহেলী শুধু কূহেলীকাময়
এই অসাড় ধরায়
সব জড়তাকে করে ক্ষয়!
কবি পরিচিতি

গোলাম রহমান। জন্মস্থানঃ বরিশাল।
বর্তমান নিবাসঃ ঢাকা, বাংলাদেশ, ফোনঃ ০১৭১০৮৯৫২৫০।