মনোজ কান্তি বিশ্বাস – কবিতা ( নিত্য দহন, কিছু অভিমান, অন্ধকারের আলো)

নিত্য দহন

– মনোজ কান্তি বিশ্বাস

তীব্র গরমে হালকা ঘুম পেয়েছিল
স্বর্গ নরক তখন শিয়রের কাছে
এসে দাঁড়ালে আমি দ্বিধান্বিত হই!
নব্বই ডিগ্রি এঙ্গেলে,
নরক যেন ক্ষুধার্ত বাঘের মত বসেছিল-
সেও অনেক দিন ঘুমাইনি
শ্মশানের ডোমের মত,
ছাইভস্মের গল্প বেশিক্ষণ জমল না
অত:পর, আমাকে ভয় পাইয়ে দিতে
নরক ক্রোধে একাল-সেকাল ও
পরকালের গল্প- বক্তব্যে শোনালো।

পাপীর বোঝা বইতে বইতে বড্ড ক্লান্ত-
পৃথিবীর পাপীরা তার কষ্টের কারণ,
এত বোঝা সে আর বইতে পারছে না।

স্বর্গ একটু মুচকি হেসে
আমাদের গল্প শুনে বিদায় নিয়ে
সে নিশ্চত জেনেছিল আলবোলায়
আমার মৃত্যুর পর আমাকে, আত্মাকে
নরকই পেয়ে যাবে।

চোখ-মুখ-মাথা চুলকিয়ে ভাবছিল-
স্বর্গে দিন দিন দেবতাদের
রাজনীতির যাঁতাকলে দেবশূন্য, জনশূন্য,
ঘুষ বিনিময়ে কিছু লোক স্বর্গে নিলেও
মন্দ হয় না, কাজ-অকাজে লোকের অভাব!
দেবতাদের কিছু আসন এখন
দেবরাজনৈতিক নেতার দখলে
স্বর্গে রাজসভা অচল হতে চলেছে
এটাও ভাবনার বিষয়!
আমি তখনও স্বর্গ আর নরকের মাঝপথে,
দেখি ঘুম ভেঙে জেগেছি মাত্র!

কিছু অভিমান

– মনোজ কান্তি বিশ্বাস

আমাদের কিছু অভিমান
অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি হয়ে গেছে,
আমাদের কিছু ভালবাসা
অস্ফুট গোলাপ হয়ে ঝরে গেছে।
ঝরে গেছে কিছু না ফোটা বকুল
স্বপ্নের ডালপালা শুকিয়ে গেছে
কোনো মাঘি কুয়াশায়,
আমাদের স্বপ্নেরা প্রতারণায়
ঝাউগাছে ঝিমিয়ে ঝরেছে!

আমাদের সুন্দরবন এখন
পুঁজিবাদের শোষণে জর্জরিত
বনদেবতা এখন নির্বাচনের হাওয়ায়
মাঠ গরমে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বনদেবীর আসনে স্বেচ্ছাচারী অন্য কেউ!
আমাদের কল্যাণ লেবাস মোড়ানো।

আমাদের ভাবনা চৈত্রের খর তাপে শুষ্ক
দেহ বসন শূন্যতায় কালবৈশাখী হয়ে যাচ্ছে।
কার চোখে রাগ কার মুখ অভিমানে ভরা
নিত্য অনিত্য সব সারসের কণ্ঠস্বর!

অন্ধকারের আলো

– মনোজ কান্তি বিশ্বাস

অন্ধকারে যে আলো আছে
খুঁজেছ কি তারে?
যে আলো যুগ যুগ ধরে এনেছে
পূর্বপুরুষ, আত্মীয়-অনাত্মীয়রা
অন্ধকার থেকে এসে চলে গেছে অন্ধকারে
তাঁদের আলোয় আজও আমাদের
সুবর্ণরেখায় পথচলা নিত্য প্রবাহিণী।
আমাদের বিবর্ণ অতীতে
যারা একদিন সত্যের আলো জ্বেলে ছিল,
নিকষ কালো ধুয়ে তারে পেয়েছিলো
গুহান্ধকারে, হৃদয়ের ধ্যানগম্ভীরে
জ্বলে উঠেছিলো প্রদীপ্ত সূর্য-
সে আলোতেই আমরা হৃদয়ে আলো জ্বালি।
অন্ধকারে যে আলো ছিল
জোনাকি বুঝি প্রথম দিয়েছিল বোধ,
তারপর দিনরাত আলো খুঁজে ফেরা
আমরা কি পেয়েছি সে আলোর সন্ধান?
সন্ধ্যার অন্ধকারে যে আলো আসে
ভোরের বোধের সীমানায় যে আলো হারায়
আমরা আজও পাইনি তার খোঁজ!
অথচ আলোর মশাল জ্বেলে
অন্ধমনে নিত্য হারাই আলো, আন্ধকারে!


কবি পরিচিতি

মনোজ কান্তি বিশ্বাস। জন্ম ১৯৭৫ সালে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার মাইটভাঙ্গা গ্রামে। বটিয়াঘাটা হেড কোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, বটিয়াঘাটা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজ থেকে বাংলা সম্মান সহ এম এ পাস। কর্মজীবনে একজন গবেষক ও স্বনামধন্য অধ্যাপক। গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর দুটি গবেষণার প্রজেক্টের সাথে। বর্তমানে কর্মরত আছেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে মোংলা উপজেলায় অবস্থিত মোংলা সরকারি কলেজ-এ ২০০২ সাল থেকে।

স্কুল জীবন থেকে কবিতা লেখার সূত্রপাত। কলেজে পড়াকালীন সময়ে কবিতা ও প্রবন্ধ রচনায় বেশকিছু পুরস্কার পান তিনি। এসময় বেশকিছু দৈনিক পত্রিকায়ও তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। এছাড়া তাঁর লেখা কবিতার বই ও শিক্ষার্থীদের জন্য বইও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে যুক্ত আছেন বিভিন্ন সৃজনশীল লেখা-লেখির সাথে। বেশি পছন্দ কবিতা পড়া ও লেখা। নদী, প্রকৃতি, ঋতুবৈচিত্র ও জীবনবোধের প্রকাশই তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।