টই টই সারাদিন
– বিভূতি দাস
টই টই ছুটির সারাদিন ফেসবুক ঘুরে
ডাংগুলি প্রেম চলে টাইম লাইনে লুকিয়ে চুরিয়ে
গল্পের বই নয় – নয় হোমওয়ার্ক
কামনা একটাই, যেন থাকে শুধুই.. নেটওয়ার্ক
ভাগ নেই এখানে সবাই সমান
প্রেমের সুতোয় চলুক মাঞ্জার টান।
মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ অথবা ট্যাবলেট
আঙ্গুলেরা কি বোর্ডে, হোক কাজ গুবলেট
খাবারে রুচি নেই, চোখ আছে স্ক্রিনে
কে যে কাকে খুঁজে বেড়ায়, কে বা তা জানে
কত কথা, জলভরা ভালোবাসা, রাগ –অভিমানে
সকাল গিয়ে দুপুর পেরোয় ছুটির সারা দিনে।
মেজাজ বিকল হয়, লিঙ্ক হলে ফেল
মনে হয় সভ্যতা যাবে রসাতলে, নন-সেন্স, যত সব বে-আক্কেল
ছট-ফট করে মন – জল চায় – সিগারেট পোড়ে
বিড় বিড় করে মুখে, হবেনা কিছুই যেন, সব গেল উড়ে
তেতো লাগে বিরিয়ানি, পানীয়টা নিরস, বাকি সব বাদ
ভেবে ভেবে ক্লান্ত, এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, ছুটিটাই বরবাদ।
ডিজিটাল বাসনা
– বিভূতি দাস
১.
চারিদিকে নানা রঙে উজ্জল লেখা – চাহিদা
সেই ছোট থেকে দেখছি-পুষে রাখছি মনের ব্যাথা
বছর গুলো পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে – আশা বাড়ছে
পথ খুঁজছি নাগালের – লোভের শিকড় রস খুঁজছে
সহজ পথ, পাশের বাড়ীর অবোধ শিশু নির্ভয়ে খেলছে
বাসনা তাতাচ্ছে সামাজিক অসুখ, বোধ হারাচ্ছে।
২.
নিত্য দিনের মায়ের হাতের খাবার ভাল্লাগেনা
খেতেই হবে বোকা বাক্সে দেখানো নানান কল্পনা
দুধ-মুড়ি! অখাদ্য, অনেক ভালো রাস্তার চাউ
মুখে লেগে থাকে উষ্ণতা, অম্বল মিলে যাবে ফাউ।
৩.
বাবা-মা দুজনেই ব্যস্ত, সময় কোথায় গল্প শোনাবার
কাজের মাসি নয় সে শশী, চলে না কোন আবদার
হাসি নেই প্রকৃতির পাঠ নেই, রং পেন্সিলে কারাগার
দুজনের নানা বাসনা চাপ বাড়ায়, উপায় নেই বাঘার।
৪.
যা দেখছে সব চাই – এক্ষুনি, নইলে দুর্ভাগা মনে হয়
দুজনের রোজগার, কেন তবে দেরি? অপেক্ষা সয়
প্রয়োজন বা অপ্রোয়জনের বিচার নয় – পেতেই হবে
এ এক অদ্ভুত সময়, বিকার গ্রস্ত জীবন বিফলেই যাবে।
কিছু কথার – গাথা
– বিভূতি দাস
গলায় আমার তুলসী মালা – চন্দনে মাখামাখি
কে বলে ভাই আমার নামে – হরিদাস মিথ্যা বাদী!
মুখে আমার হাজার তুলসী – চিবাই সাদাই যথা তত্থা
হরির নামের ঝুলি হাতে – লোকের কেন মাথা ব্যাথা।
হরির কথা হরিই জানে – অন্যের জন্য নয়
হরি যা করছে দেখছ – এতো কিসের ভয়।
বাতাসা আর নকুল দানা – এটাই সবার প্রাপ্য
ক্ষীর -ননী মন্ডা-মেঠাই এটা কেবল হরির জন্য
দেখলে হবে-খরচা আছে, হবেনা এ সব সহ্য।
ঘন্টা বাজাও, আজান হাঁকাও, কেউ শোনেনা কথা
উপর ওলা সদাই বলেন, ওরে বুকে বড্ড ব্যথা
তোরা না থাকলে পরে কে গাইবে গাথা।
কিছু আছে, ভীষন পাজি – ভুল ধরে সব খুটিনাটি
এত সাধের স্বপ্ন দেখা – আশার আশায় বসে থাকা
থাকনা ক-দিন চোখ বুজিয়ে – করিস নে ভাই মাটি।
মেশিন দেব – পয়সা দেব – দেখতো সবাই খুঁজে
নিন্দার যন্ত্র আছে কোথায়, জানিস তোরা কেউ
আন্দলনে না নামলে এবার – সবাই যাবি ফুঁকে।
পলাশ
– বিভূতি দাস
পলাশ রাঙা ঠোঁটের কোলে
মায়াবী হাসির ঝিলিক
ভরাতে দাওগো এ মন
আরো নাহয় থাকলে খানিক
সূর্য গেলে পাটে
আঁধার মোটেই হয়না তাতে
আলো-আঁধারের গোপন খেলায়
আকাশ আরোই রঙে মাতে
এসোনা খেলার ছলে
ভাসাই এ মন নদীর কুলে
প্রাণের টানে হৃদয় মেলে
হারিয়ে যেতে যেতে গেয়ে গান হেসে খেলে
হারিয়েই যায় যদি পথ গোধুলির অবসানে
ছায়াপথের আলোয় তারে খুঁজি এসো সংগোপনে
জোনাকির সাথে সাথে গায়েতে আঁধার মেখে
জানতে চাইবে নাকি জীবনের হাজার মানে।।
এমন হোলে কেমন হতো
– বিভূতি দাস
কেমন হতো? যদি পৃ্থিবীর সব গরীব মানুষ গুলো
এক সাথে বেশ কিছু দিনের জন্য শীত ঘুমে যেত
সব শ্রমিক এক সাথে হাতে হাত রেখে কাজ ভুলে যেত
ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই, রান্না ঘর রাধুনী শুন্য হতো
কেবল ধনী মানুষ গুলো চার পাশে অনন্ত বৈভব নিয়ে থাকত
রান্নার লোক, কাজের লোক, কারখানার শ্রমিক, কেউ জেগে নেই
হাঁক-ডাক করে বিশ্ব-চরাচরের কোথাও পেতে না কাউকেই
তবে এমন হোলে কেমন হোত? ওহে বন্ধু ভেবে দেখতো।
ঐ যারা বাঁচার জন্য উদয় অস্ত পেটের দায়ে জীবন করে ক্ষয়
ভালোলাগা বা ভালোথাকা নয়, মানব জন্মের বোঝা বয়
লক্ষ লক্ষ মিটার কাপড়, বাড়ী, ফ্লাট, বিলাস দ্রব্য তৈরী করে
ছিন্ন কাপড়ে চাল-চুলো হীন, বিলাস হীন জীবনে বেঁচে মরে
আবার যদি ঘুম ভাঙে ওদের, কি দেখবে ওরা শীত ঘুম ভেঙে
সত্যি লজ্জা পাবে! নাকি অন্ধকার পৃ্থিবী দেখে – হাসবে!
কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে।
প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।