পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা (সায়াহ্নে, বিরহ ঝড়, যখন চৈত্রমাস, কমদামী আমি, ব্যথা যখন)

সায়াহ্নে

– পারমিতা ব্যানার্জি

মনের দেয়ালে
আছড়ায় খেয়ালী ঝড় ।
আঁকাবাঁকা পথে
আটকে দিতে চায়
দীর্ঘ পথের রিলে রেস।

দগ্ধ বুকের ওঠাপড়া
স্থির হতে গিয়ে থমকে যায়।
বাছাবাছি খাবার টক্।
ওষুধের বোতলে
পুরোনো মন চাবি ঘোরায়।

বাস্তবিকই
জীবনটা খুবই ছোট।
তবু সময় যেন
কাটতেই চায় না।
তেঁতো মুখ করে চলেছে।

বিরহ ঝড়

– পারমিতা ব্যানার্জি

কালবৈশাখী এলো
বছরের প্রথমে, এ সন্ধ্যায়।
সাথে শিলা বৃষ্টিও এলো
যখন মধ্য বসন্ত।
ঝটকায় নামলো পারদ…
ঠাণ্ডা হ’ল বুঝি প্রাণ!

সত্যিই শীতল হয় সব?
থমথমে আকাশ
আশঙ্কা জাগায় জীবনভর
এক ঝড়ের।
কালবৈশাখী রূপে
যেন জীবন তাণ্ডবের ছবি।

চাই না কেউই, তবু আসে,
আসতেই হয় তাকে।
কালবৈশাখী যেন
বসন্তের বিরহ যন্ত্রণা।
থমকে দাঁড়ায় প্রেমের গল্প।
সাথে বৃষ্টির মধু-কান্না।

যখন চৈত্রমাস

– পারমিতা ব্যানার্জি

সত্যি সত্যি কী চৈত্রমাসে
কারো কারো চোখে
সর্বনাশের কথা লেখা থাকে!
তবু চৈত্র যখন আসে,
এক আকাশ কর্কশ রোদ
আছড়ে পড়ে উষ্ণ বুকে!
খাঁ খাঁ করে শূন্যতা।
বড্ড একা লাগে তখন।
যেন দুপুর আকাশে
নীল গভীরতায় উড়ে চলা
নিঃসঙ্গ এক চিল।

চৈত্র তো বসন্তেরই…
তবু কেন উগ্র হয়ে ওঠে সে!
চৈত্র যেন এক
একাকীত্বের ভালোবাসা!
মুগ্ধ নিজেতেই,
মগ্ন আপন প্রেমের মূর্ছনায়!

কমদামী আমি

– পারমিতা ব্যানার্জি

স্যাঁত স্যাঁতে এক গদ্য দুপুর।
কোথাও কী বৃষ্টি হলো!
ঘুরপাক খায় এলোমেলো
শব্দগুলো।
লিখে ফেলি যা ইচ্ছে তাই…
কেউ কি হাততালি দেয়?
বেশিরভাগই এড়িয়ে যাওয়া
পছন্দ করে।
নয়তো আমি চাঁদের হাটের
মধ্যমনি, কাব্য ঘরে।
লিখতে আমি ভালোবাসি,
তাই তো আসি।
সাজিয়ে কলি ঝুলিয়ে ঝুলি,
বাজাই বাঁশি!
এইটুকুতেই সুখী আমি,
যখন তখন থমকে দাঁড়াই।
আমি যে কমদামী।
সবার শেষে সবাইকে
ভালবাসা দিই এক সমুদ্দুর।

ব্যথা যখন

– পারমিতা ব্যানার্জি

আজ যখন সরেই গেছো দূরে,
কাঁটার ঝোপে বন্ধ ফেরার পথ।
অবসর তো নেই তাকাতে ঘুরে।
হেলায় পড়ে আছে জীবন রথ!

হয়ত সেদিন ছিলে কত কাছে,
দূরের তারা অবাক হেসেছিল _
শহরের ঐ হলুদ আলোর নীচে
আমাদের যত কথা জেগেছিল।

ফেরারী পাখি মুক্তি নেশাতুরা
তোমার চোখে মোহ স্বপ্নজালে,
হৃদয় হ’ল রঙিন রাংতা মোড়া।
তারা ফুটেছিল সে সন্ধ্যাকালে।


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।