পথের চলা
– সুমিত্র দত্ত রায়
সূর্যের তেজে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাহ।
চেয়ে দেখ, তবুও পথের ডাকে
মুক্তির আশ্বাসে কত না মানুষ!
নানা ছন্দে আর নানান কাজে
ওদের ক্রমাগতই এগিয়ে চলা।
সামনেই ওদের পেরোতে হবে
অনেক ভয়ঙ্কর আর দুর্গম পথ,
সাথে আছে দুর্নিবার খরতাপ।
মানুষের মিছিলে সবার সাথে
কখনো কি হেঁটেছ, বন্ধু আমার?
যদি না হেঁটে থাক – জেনে রেখো;
কিছুতেই মুক্তি কিন্তু মিলবে না।
হাঁটতে তোমাকে হবেই একদিন,
আলোময় ভোরে, নয় অন্ধকারে।
তাই আজ সময় থাকতে থাকতে
পারো যদি কদমে কদম মেলাও।
নইলে একদিন যে ইতিহাস হয়েই,
সবার কাঁধে ভর দিয়ে চলবে তুমি।
সক্কলে মিলে যেখানে তোমায় নিয়ে
মিছিল করবে। দেখবে, ওরা হেঁটে
চলেছে, শব চলবে তুমি চলবে না।
তপ্ত ধুলিকনাও ছাড়বে না তোমায়;
নিজেকে লুকােলে। সে সময় কিন্তু
আর বেশীদূরে নয়, খুব কাছাকাছি।
এখনো সময় থাকতে নেমে হাঁটো
সবাকার মাঝে। বোঝ পরিতৃপ্তি,
আর খোঁজ আপনার মমত্ব বোধ,
আজ এখন তুমি দাবদাহে আছো,
আর আছে নতুন পরিক্রমার টান।
হাঁটতে শুরু করলে তখন দেখবে,
সামনে সব পথই সরল মনে হবে।
স্মর্তব্য
– সুমিত্র দত্ত রায়
বাতি জ্বেলোনা, ভোর হয়ে আসছে,
অন্ধকারেই থাকতে দাও কিছুক্ষণ।
স্মরণে আনতে দাও সব মলিনতা-
শেষ বারের মত ঝালাবো ইতিহাস।
কবি, রাত তারা জেগে ওই আকাশে,
রূপসী চাঁদের মায়া তোমার আশায়;
আবার কি তুমি ভেসে যেতে চাও না,
সেই আলোর ছটায়? শুধু একবার।
একদম নয়। নীরবতা ঘিরছে আমায়,
কোন সাড়া নয়! স্তব্ধতার বেষ্টনী শুধু।
একটানা ঝিঁঝির আওয়াজই; মুখর
মনকে ঘুম পাড়ানী শুনিয়ে চলেছে।
মরীচিকা জ্যোৎস্না আর ডাকব না,
আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
ওগো বন্ধু আমার, বাতি জ্বেলো না,
অন্ধকারে আমাকে থাকতে যে হবে।
আর কিছু পরে আকাশ লাল হবে;
সব তারাই তখনো থাকবে আকাশে,
থাকবে গোপনে। থাকবে এই মনে।
নতুন ভোর দেখার আকুতি আমার।
কোকিলের কুহুতান, পাখির কাকলী,
বিহানে ভোরাই গেয়ে যাবে। তাইতো-
মনকে শূন্য়তায় চাই, পূর্ণ করবো বলে।
নব দিবাকরের সেই পুণ্য স্নিগ্ধতায়।
শেষ বারের মত হিসেবে আনতে চাই-
কলুষতার আবক্ষ প্রাচীর, আর জীর্ণ
মলিন এই বস্ত্রখণ্ডের মায়াবী অতীত,
বাতি জ্বেলো না আমায় ভাবতে দাও।
পাথর প্রতিমা
– সুমিত্র দত্ত রায়
কোণে বসে আছে
তবু কানায় কানায় ভরা!
দিগন্ত বিস্তৃত পর্যবেক্ষণ শেষ।
এখন দৃষ্টি নিরাকার,
দীপ্তি নেই, নেই হতাশাও,
তার সামনে এখন শুধু তুমি।
তার কাঙ্খিত তুমি,
তার বিস্মৃত তুমি,
তার চিরসখা তুমি,
তার কালঘুমের তুমি,
একসাথে একই দৃশ্যপটে
শুয়ে আছ একই কোণায়।
কোণে বসে আছে-
শুধু কানায় কানায় ভরা,
নেই একবিন্দুও নির্ঝর!
সবটা জল বরফ এখন,
পড়ে থাকা নিষ্প্রাণ
দেহটাও শীতল যেমন।
এক সময় এক বৃদ্ধা আসে,
বোঝে তার বরফ শীতলতা!
শেষ খুঁজে পায় না,
অন্তিম পরিণতি ভাবতে পারে না,
তবে কি আদর্শ সৈনিক আজও
ভোলেনি প্রিয়ারে?
যাত্রা পথ দোঁহে মিলে করিবে উজ্জ্বল?
তা কীভাবে হয়?
এখন নবজাতক পাথরের কোলে,
অবিশ্রান্ত ধারা বর্ষণ।
—উপরের কবিতাটি Lord Tennyson এর লেখা Home they brought her warrior dead কবিতার ছায়া অবলম্বনে এই রচনা।
আলো আঁধারে
– সুমিত্র দত্ত রায়
ভোরের আলো ছড়িয়ে
সূর্য, পূবাকাশে প্রাতে।
তবু নতুন সকাল-
অক্ষ, কালের তফাতে।
নয়ন তারা নির্ঝর,
পলক ভরা দর্শনে।
প্রতি নিমেষ আলাদা,
কথা বা ভাষা বর্ষণে।
কালো মেঘ চাপা রোদ,
যদিও কিরণে ম্লান!
মনের ছায়ায় আঁখি,
ঘুম পাড়ানীর গান।
মেঘের সাধ্য তো নেই ;
আলোকে ঢাকবার,
বিজলী চমকে ঘুম ;
পলক মুক্ত হবার।
আবার সোনালী রোদ,
পূর্ণ চোখে নেই ক্রোধ।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।