চোর বনাম মহাচোর
– বিভূতি দাস
মধুসুদন, জামিল, এরা সত্যই অভাবি মানুষ, কাজ নেই
জমি-জিরেত, পুঁথিগত শিক্ষা নেই, নেই সামাজিক সম্মান
তবুও ওরা শিখেছিল, না বলে নেওয়া পাপ, চুরির সমান
ক্ষুধার দাবানলে পুড়তে পুড়তে তাদের সামাজিক জ্ঞান
অপরাধ বোধ হেরে যায়, তাদের সততা ধাক্কা খায়
অন্যের ভরা ক্ষেতে একটা কুমড়ো তোলে সুযোগ বুঝে
ভাগ্যের পরিহাস, ধরা পড়ে যায় দক্ষতার অভাবে
জোটে লাঞ্ছনা, হয় কুমড়োর দামের একশ গুন জরিমানা
সত্য এটাই, খাবার কেনার সামার্থ থাকলে – একাজ করতনা
লোকে বলে, ওরা চোর, তবু কেউ একবারও ভাবলো না,
তার প্রতিবেশীরা ও একবার বল্লনা, না না ওরা চোর না।
ওরা পাশাপাশি পাড়ায় থাকে, গনতন্ত্র কি, ওরা তা জানেনা
জানেনা কি তাদের অধিকার, ভোট দেয়, দিতে হয় বলে
সব্বাই দেয়, ওদের উঠানে এসে হাত জোড়ে মিস্টি কথায়
সেই জরিমানার মান্যি-গন্যি বিচারাকরা ভোট দিতে বলে যায়
ওরা কেবল অবাক হয়ে দেখে, ভাবে আগের জন্মের ফল
মধু বা জামিল জানেনা, গরিব হওয়া মানেই খুড়োর কল
যত খুশি নাচিয়ে যাও, গুছিয়ে নাও, কেউ পাবেনা এর তল
ভালো পোশাক, গাড়ী, শানিত ভাষায় মিথ্যার ফুলঝুরি
সাথে নন্দী, ভৃঙ্গী, শুধুই মিথ্যার বেসাতি ঝুড়ি ঝুড়ি
গরীব মানুষ গুলো আবার আশা তরুতে বাসা বাঁধে
যদিও সামাজ শিখিয়েছে, ওরা এক দিনিই আসে দায়ে
প্রকল্পের টাকা তছরুফ হয়, কমিশনে বিল বানায়
পাশ হয়ে যায় টেবিল হতে টেবিল, সিগনাল খোলা।
বিজ্ঞাপন হয়, ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন, খরচ অনেক টাকা
তবু ও যদি এরা দু মুঠো পেত ! জন্মাবধি অভ্যাসে খাওয়া আধপেটা
কেই বা দেখাবে পথ, তবু বেঁচে আছে কপাল জোর
শোনে অনেক কথা, সাহসে কুলায় না বলতে, মহাচোর…মহাচোর…।
বেশরম-কাল
– বিভূতি দাস
বেশরম যখন তখন ঘামাচির একি জ্বালা
শান্ত হয়না মোটেই, নিচ্ছে শুষে আমপোড়া
সুখ নেই বটের ছায়ায় গামছা পেতে, পান্তা ভাতে
হাঁসপাস করছে জীবন, চলছে প্রখর দহন
মহাকালের কল-কাঠিতে বাংলায় গ্রীষ্ম আসে।
ব্যাঙ বাবাজী গামছা কাঁধে চোখ ঢেকেছে সানগ্লাসে
ছেড়ে পুকুর ইধার-উধার একটু ছায়া খোঁজে
লেবু-জল কুলফি মালাই বাবু-বিবি খাচ্ছে সবাই
কাঠি-বরফ চুসে চুসে দাদা-দাদী মরছে কেশে
ছাতা মাথায় বলদ দুটো ভর দুপুরে লাঙ্গল চষে।
বাসে ট্রেনে আম জনতা অফিসের কি মমতা
সকাল হলেই ছুটছে সবাই কালটা গ্রীষ্ম বোলেই
ঠান্ডা ঘরে – পাখার নিচে সময়টা বেশ ভালোই কাটে
একটু সময় বেশী থেকে বেরিয়ে পড়ে রোদটা বিদায় নিলে
পায়ে পায়ে বাড়ীর পথে ফেরে সবাই দলে দলে।
নিরীহের প্রশ্ন
– বিভূতি দাস
বোলবে? হে মহামতি সাংসদ
গনতন্ত্রের একনিষ্ঠ সদা জাগ্রত প্রহরী
বিপন্ন করে সাধারণ মানুষের জীবন – মান
আর কত রক্ত হলে মিটবে আশা, জয় হবে সুনিশ্চিত
অধিকার কেড়ে উড়াবে তোমার কাঙখিত বিজয় কেতন
ভুলুন্ঠিত গনতন্ত্রে দিকে দিকে বাজাবে আনন্দ লহরী।
বোলবে? হে মহামতি সাংসদ
তোমার ভুমিকা কি? গনতন্ত্রের অধিকার রক্ষায়
মুখোশের আড়ালে কেবলি শয়তানি ফিস ফিসানি
নাকি সাধারনের রক্তে পা রাঙিয়ে যাবে ক্ষমতার মক্কায়!
ওড়াবে ফানুশ – সাধারনের দেওয়া করের টাকায়
সাদা পোষাকে, ঠান্ডা ঘরে – লকলকে জিভে চেটে যাবে
নামি-দামি খাবার, তৈরি হয়েছে যা সাধারন মানুষের মজ্জায়।
বোলবে? হে মহামতি সাংসদ
পাহাড় প্রমান মিথ্যা-চাতুরিতে কেড়ে গরীবের অধিকার
আর কতকাল, কতকাল চালাবে গুছিয়ে নেবার সংসার
বঞ্চিতেরা জাগছে, সাবধান, রেহাই পাবে কি তুমিও
যা কিছু আছে, সব ভালো কি তোমাদের পিতৃদত্ত অধিকার
এ দেশ সবার, হাজার বার অধিকার আছে শান্তিতে বেঁচে থাকার
দেখেছ কি? তোমার শুভ্র পোষাকে নিরন্ন মানুষের রক্তের দাগ
যা এক দিন শুসে নেবেই, তোমার অনধিকার বৈভব প্রাকার।
দ হ ন
– বিভূতি দাস
ঘামে ভেজা শরীরে
রোদে ভাজা দুপুরে
সবুজেরা হাসি ভুলে
আছে সব ঝিমিয়ে
আসমানে মেঘ নেই
পানি নেই পুকুরে
বোলে যায় মহামতি
শোধ দেবে প্রকৃতি
সুদ আর আসলে
ওজনের চাদর ছিঁড়ে
কসমিক ধেয়ে আসে
হলদে রুপ ধরে ।
দহনের ঊষ্ণ শ্বাসে
জীবন ফুরিয়ে আসে
ঘুমেরা রাত জাগে
উদোম বেশ বাসে
ঘামাচিরা হাসি খুশি
মেতে আছে অহর্নিশি
লজ্জার মাথা খেয়ে
হাত চলে নেচে নেচে
লস্যি আর সরবতে
নেই কোন ঝগড়া
যেটা থাকে ধারে কাছে
সেটাকেই ধর ধর, পাকড়া।
ভালো থাকা কি যায়
– বিভূতি দাস
ভালো থাকা কি যায় ?
নিতান্ত ক্ষণস্থায়ী আধারে দ্রবীভূত ইচ্ছার মিশ্রনে
ক্রয় ক্ষমতার নিরিখে মাপা ভালো থাকা, সমাজের আদুল মননে
বহুমূল্য বাহন পোষাক, খাবার, ফ্লাট, নান্দনিক অঙ্গাভরনে
ঢাকা দেবার অদম্য ইচ্ছা মনের দৈন দিন, ভাঙা মুকুরে, প্রতিফলনে।
অসহ্য সমস্ত তাপ নিশ্চিন্তে মিশিয়ে বাতাসে সুখেই দিন কাটে
যদি হয় হোক ভীষন বিপর্যয় তাতে কিই বা যায় আসে
যে আঁচলের ছায়ায় মিলত অনাবিল শান্তির ক্ষণ, বুক ভরা শ্বাস
উন্নয়নের অজুহাত, অধিকার দিয়েছে সরিয়ে দেবার, অর্থের আশ।
দামি টেবিল-চেয়ার সব মেহগনি, ততধিক দামি খাবারের সুবাস
জানালার ফাঁক গলে মিশে বাতাসে পৌঁছায় জলঢালা ভাতে
কে পাবে বেশী একটা রুটি, তাই নিয়ে চিৎকার, ঝরে নোনা পানি
খেতে গিয়ে, কানে আসে পাঁচিলের ওপারে পড়ছে বাঁচার দীর্ঘশ্বাস ।
ঘুম ভাঙ্গে হটাৎ মধ্য রাতে, শোনা যায় বাচ্চাটা কাঁদে ক্ষুধায়
বুকের দুধে নাহি কুলায়, খেদে বলে মা, মর না আপদ হাড় জুড়ায়
আরো কত বেদনার, দুখের কথা ভাসে কেবলি স্তব্ধ রাতের আঙিনায়
অন্তরে বেঁধে যদিবা রাত আঁধারে, নতুন সকাল শুরু বাঁচার আশায়।
কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে।
প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।