একদিন শেষ হবে!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
একদিন শেষ হবে জীবনের খেলা,
হয়তো ভাববে বসে গোধূলির বেলা।
উড়ে যাবে মাছরাঙা ঠোঁটে নিয়ে শোক,
নীরবে ডলবে আঁখি জারুল অশোক।
ডাকলে মায়াবী ছায়ে থেকে থেকে পাখি,
মেলবো না আমি আর ক্ষণকাল আঁখি।
হেরে যাবে চিরতরে চির চেনা ক্ষণ,
বুঝবে না এ’ হৃদয় কে ছিলো আপন।
খুলে যাবে দূরাকাশে মেঘের কপাট,
পড়ে রবে ছেঁড়া শ্বাস শ্যামলা এ’ বাট।
শিমুল পলাশ করে পরমায়ু ক্ষয়,
দিবে না সেদিন আর অযথা অভয়।
উঠেও নদীতে নেচে বিনোদিয়া ঢেউ,
বারেক সে’ নামে আর ডাকবে না কেউ।
ঘাসের ডগায় বসে ফড়িঙের ছানা,
গড়বে খুশি যা ছেনে বেদনার দানা।
শালিকের গালে দেখে অগোছালো পানি,
করবে দখিনা বায়ু মৃদু কানাকানি।
স্বজনের বুকে জাগা বিলাপের তীরে,
ঘুরবে যাপিত স্মৃতি বারে বারে ফিরে।
দাঁড়িয়ে সে’ আছে ভেবে হিজলের ছায়,
খুঁজতে যাবো না শেষ ব্যাকুল মায়ায়।
সবুজ মাঠের দোল ফসলের গীতি,
ভুলে যাবো সুফলা এ’ জননীর প্রীতি।
আজও আছি বসে!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
সেই যে গেলে আমায় রেখে আসবো বলে ফিরে,
আজও আমি বসেই আছি গুড় এ’ নদীর তীরে!
দেখে ঢেউয়ের লুকোচুরি
অপেক্ষাতেই উড়াই ঘুড়ি
মান অভিমান সঁপে স্মৃতির জালে –
গায় কি তবু দুষ্টু শালিক হিজল গাছের ডালে!
রাঙা ঠোঁটের মাছরাঙাটা রচে যখন হাসি,
আছড়ে পড়ে ঝির ঝিরে বাও কিশলয়ে আসি।
শিখছে যা লাফ ব্যাঙের ছানা
আর কি শুনে কাকের মানা!
ব্যাকুল কথা যায় রেখে এই ভালে –
গায় কি তবু দুষ্টু শালিক হিজল গাছের ডালে!
বাম পাশের ওই ধানের ক্ষেতে দেখে ফিঙের খেলা,
কতোই এসে ধড়ফড়ে মেঘ সাজায় নতুন ভেলা।
দৌড়ে খুঁজে শুষ্ক ধূলি
ঘাস ফড়িঙের কোলাকুলি
সরষে ক্ষেতের বক্ষ চিরা আলে –
গায় কি তবু দুষ্টু শালিক হিজল গাছের ডালে!
যায় সুদূরে অনেক বক-ই এঁকে নিখুঁত সারি,
সূর্য গেলে শেষ বিকেলে অস্তাচলের বাড়ি।
গরুর খুরের শব্দ শুনে
হংস আশার প্রহর গুণে
জল হারা আধ কলমি ঝরা খালে –
গায় কি তবু দুষ্টু শালিক হিজল গাছের ডালে!
এমনি করেই দিন চলে যায় আঁধার নামে হেসে,
জোনাক জ্বালে সাঁঝের বাতি ঝোপ-ঝাড়ে ফের এসে।
শ্যামলা ঢালে একলা বসি
আমি দেখি কালের শশী
রাখতে স্বপন রাঙা ভোরের পালে –
গায় কি তবু দুষ্টু শালিক হিজল গাছের ডালে!
তোমাকে খুঁজতে যাবো!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
তোমাকে খুঁজতে যাবো হে আমার সারি!
তোমাকে খুঁজতে যাবো হিম হিম হিজলের ছায়,
যেখানে অবাধে খেলে শালিকের দল
বিকেল হলেই এসে পথ চেয়ে অজানা মায়ায়।
খুঁজবো তোমায় আমি থেকে অপলক
অস্ফুট আশায় জাগা সুহাসিনী নীরদের দ্বারে,
দেখবো ব্যাকুলে চেয়ে শ্যামলা সে’ ঢাল
ওখানে থাকতে পারো অভিমানে ভেবে বারে বারে।
থাকলে আনত শিরে ভুখা মাছরাঙা
শুধাবো তারেও ডেকে ‘দেখেছো কি মায়াবী দু’ আঁখি?’
ছুটবো তৃষিত পায়ে বকুলের আড়ে
অপেক্ষায় আছো মেনে উঠে যদি মরালীরা হাঁকি।
কতোটা স্বপ্নের ধন পাল তোলা নাও
এখনো স্মরণে আছে দেখলেই গাইতে যে গান,
ক্লেশিত শরীর নিয়ে যাবো গোধূলিতে
কিঞ্চিতও এ’ কানে এলে দোয়েলের সুচেনা জবান।
তবুও না পেলে দেখা ফিরবো না বাড়ি
যতই ধরুক অমা অবশেষে মেঠো পথ ঘিরে,
নিভৃতে ঘুমিয়ে যাব ঘাসের উপর
তোমার সবচে’ প্রিয় এই ছোট যমুনারই তীরে।
হুশিয়ার হে কাণ্ডারী!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
বেঁধেছে হিঙ্গুল মেঘ বাসা এ’ মননে
হেরেছে স্বপ্নের চেনা জ্যোতি,
দুখের দহনে মন করেছে স্বীকার
ম্লান পেয়ারার কাছে নতি।
কি ছিলো আমার ভুল ভাবি অবেলায়
নিথুয়া পাথারে একা রয়ে,
দেয় না জবাব কিছু ক্লেশিত সফেন
উড়ে যায় আপনারে ক্ষয়ে।
অকালে দিনের শেষে নেমে আসে রাতি
স্মৃতিগুলো করে আহাজারি,
শুনে তা নক্ষত্র জেগে নীলিমার বুকে
হাঁকে ‘হুশিয়ার হে কাণ্ডারী!’
একবার দাঁড়াতে চাই!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
করবে দখিনা বায়ু মৃদু কানাকানি
ছড়ায়ে পুষ্পের ঘ্রাণ মেখে দিতে নিশাচরী ভালে,
হঠাৎ দাঁড়াতে চাই তোমারি বাঁ পাশে
এমনই আবহ যেচে কোন এক নিশুতির কালে।
হয়তো আমায় দেখে সেই সুধাকর
ভীষণ অবাক হবে আঁখি থেকে ক্ষয়ে গেলে শোক,
খুশিতে ডাকতে পারে ডাহুকের ছানা
সহসা নজরে পেয়ে নীরদের অভয়া অলক।
দিবেই জানি গো সাড়া জোনাকির দল
সাজায়ে কাতার ওরা প্রস্ফুটিত মালতীর মতো,
এঁদো ডোবা থেকে তুলে ব্যাঙাচিরা গল
ডাকবে মায়ের সাথে সুরে তালে মেতে অবিরত।
ভেবো না করবো ডেকে ফের জ্বালাতন,
দেখবো ললাট শুধু একবার চেয়ে
তারপর চলে যাবো কার্তিকের স্রোতের মতোন।
বলবো না পিছু ফিরে ডাকলেও নিশি
’কেন হে ও’ বুকে দিলে শেফালির চির অভিমান!
আমি কি বলিনি তারে অতি নিরজনে
ক্ষরণ-ব্যাপন রবে দু’জনাতে সমানে সমান।’
কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।