কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস – কবিতা (বিজ্ঞানের যুগ, ভূমিকম্প, ঋতুরাজ বসন্ত)

বিজ্ঞানের যুগ

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

যুগে যুগে অনেক কিছু বদলায়,
প্রাচীন কালের চিত্র নেই এ সময়।
প্রস্তর যুগে ছিল মানুষের আচরণ,
বর্বর হিংস্র শুধুমাত্র অশিক্ষার কারণ।
গুপ্ত যুগে আসতে থাকে পরিবর্তন,
লেখাপড়ায় শুরু হয় নতুন ধরন।
গবেষণা, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান,
গণিতশাস্ত্রে রাখে অনেক অবদান।
যুগের সাথে সাথে নব নব গবেষণা,
আবিষ্কারে আসে কাজের প্রেরণা।
শিক্ষার প্রসারতায় বাড়ে জ্ঞান,
কর্মক্ষেত্রে আনে সফলতার উদাহরণ।
সুবর্ণ যুগ থেকে এলো স্বর্ণযুগে,
বর্তমান বিশ্ব এখন বিজ্ঞানের যুগে।
আকাশ, পাতাল আর বিস্তৃত স্থল,
বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের চলাচল।
বিভিন্ন দেশে আধুনিক যন্ত্রপাতি,
বৈজ্ঞানিকদের বিষ্ময়কর উন্নতি।
পাতালরেল, বিমান অত্যাধুনিক গাড়ি,
বিজ্ঞানের অদ্ভুত আবিষ্কার নতুন বাড়ি।
রকেট যাচ্ছে চাঁদে আর মঙ্গলগ্রহে,
স্যাটেলাইট এনেছে প্রযুক্তি মানুষের আগ্রহে।
সৌরজগতে কি ঘটছে জানে বিজ্ঞানীরা,
ঝড়, বন্যা জানায় আবহাওয়াবিদরা।
দেশ-বিদেশে ভ্রমণে এখন হয়েছে সুবিধা,
দূরের পথ হয়েছে নিকটে থাকা খাওয়ার নাই চিন্তা।
বিজ্ঞানের উন্নতিতে আকাশে, মহাকাশে,
ছুটিতেছে মানুষ জানিবার, দেখিবার সন্ধানে।
বিজ্ঞানের যুগে গণিতশাস্ত্রের অগ্রগতি,
এনেছে সর্বক্ষেত্রে বিপ্লব দিয়েছে অপার শক্তি।

ভূমিকম্প

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

মাঝে মাঝে পৃথিবীর কম্পন,
খুবই অল্প সময়।
ভয়াবহ আকার করে ধারণ,
ঘটায় সমূহ বিপর্যয়।
মর্মান্তিক দৃশ্য দেখা যায়,
দেশে কখনও বিদেশে।
নেপালের পর তুরস্ক সিরিয়ায়,
মানুষ হাহাকার করছে।
ধ্বংস স্তুপ থেকে লাশ আর লাশ,
চারিদিকে শুধু ক্রন্দন।
ভূমিকম্পে মানুষ অসহায় আজ,
মৃত্যুপথে কত পরিবার পরিজন।
সেখানে স্বজন হারানো আর্তনাদ,
শুধু মৃত্যুর মিছিল,
বেঁচে আছে যারা লাখ আহত,
হতাশা অনাহারে রয়েছে সামিল।
সেকেন্ড আর মিনিটের ব্যবধানে,
ভয়ংকর এই কান্ড ঘটে।
জীবনের পরিসমাপ্তি টানে,
কোন কিছু বুঝে উঠার আগে।
বড় বড় দালান কোটা ভেঙে গুড়িয়ে,
কখনো একাকার হয়ে যায়।
ভূমিকম্পে সমুদ্রের পানি বেড়ে,
উপকূলে বন্যার সৃষ্টি হয়।
মানুষ আমরা বসবাসের জন্য,
সুন্দর করে গড়ি ইমারত।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় করে দেয় শূন্য,
স্বপ্ন হয়ে যায় ধূলিসাৎ।
ভূমিকম্পে হয়তো এইভাবে ধ্বংসের,
শিকার হতেই থাকবো।
স্রষ্টার সহায় গবেষণা আর বিজ্ঞানের,
সাফল্যে প্রতিরোধ করে চলবো।

ঋতুরাজ বসন্ত

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

বসন্ত এসে গেছে, নতুনের আগমন,
ঘরে বাহিরে আজ সবার পুলকিত মন।
সব জীর্ণ কাটিয়ে ফাগুন এসেছে,
প্রকৃতি যেন অপরূপ সাজে সেজেছে।
মানুষের অন্তরের ভালবাসা আজ,
ভিন্ন মাত্রায় করছে যেন প্রকাশ।
পহেলা ফাল্গুনে হয়েছে মন প্রাণবন্ত,
এসেছে দুয়ারে ঋতুরাজ বসন্ত।
গাছে গাছে ফুটেছে ফুল রঙিন হয়ে,
মনটা ক্ষণিকের তরে রাঙিয়ে দিয়েছে।
হলুদ পোশাকে মাথায় পরেছে ফুল,
ছোট ছোট সোনা মনিরা আনন্দে ব্যাকুল।
গানে গানে মেতেছে যেন পাখনা মেলে,
সাময়িক দুঃখ কষ্ট বেদনা ভুলে।
কোথও কোথাও অনুষ্ঠানমালায়,
রকমারী শাড়িতে নৃত্য পরিবেশনায়,
আজকের দিনটিকে উৎসবের মেলায়,
ভালবাসার বন্ধনে রাখতে চায়।
পার্কে, নদীর তীরে, বসে নিরালায়,
আবেগে আপ্লুত আজ দু’জনায়,
মধুর বসন্ত প্রতি বছর আসুক,
শান্তি সোহাগের বারতা বয়ে আনুক।


কবি পরিচিতি

কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। জন্ম জুলাই ২, ১৯৫৫, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার কাষ্টবাড়িয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে। পিতা – হৃদয় চন্দ্র বিশ্বাস, মাতা – ফুলমতি বিশ্বাস।

ছোট বেলা থেকে একটি সংগ্রামশীল পরিবারে সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন লেখাপড়ার পাশাপাশি আবৃত্তি, গান ও মঞ্চনাটকের সাথে যুক্ত হন। গনিতের অধ্যাপক হলেও সাহিত্যের প্রতি তাঁর ভালো লাগা আজীবন। কর্মজীবনের অবসরে থেকেও সাহিত্য চর্চায় নিজেকে সম্পৃক্ত নিরলসভাবে।

স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা, বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও সাহিত্য পত্রিকায় তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সহজ ভাষায় ছন্দ মিলের উপস্থাপনায় লেখা তার কবিতাগুলো পাঠ করে পাঠকেরা সামান্যতম আনন্দ পেলেই কবি নিজেকে ধন্য মনে করবেন।