ঘুমালে কি সুরবালা!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
আমাকেই ভেবে গাঁথবে না বলে
তৃষিত কথার মালা,
ঘুমালে কি সুরবালা!
কুলু কুলু রবে এঁকে বেঁকে চলা
তটিনীর কোন কূলে,
আমি চেয়েছিনু রবো দু’জনাতে
পুষ্পের মতো ঝুলে।
অন্তরে রচে বনানীর প্রীতি
শুনলে না তব পাপিয়ার গীতি
ডানা ঝাপটায়ে ডাহুকেরা আজ
চিন্তন করে ফালা –
ঘুমালে কি সুরবালা!
নীরব নিশীথে আপনাকে ক্ষয়ে
জ্যোৎস্নারা করে ধুম,
আমি কি গো পারি ক্ষণিক ঢুলতে
অক্ষিতে যেচে ঘুম!
যদি ভাবি যাবো শ্যামলা সে’ ঢালে
হুতোম যে ডাকে খড় হারা চালে
মৃদু সমীরণ কানাকানি করে
বাড়াতে বুকের জ্বালা –
ঘুমালে কি সুরবালা!
দিবি না রে সখা!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
বিকেল হলেই নিরজনে বসে দু’চোখের নীরে ভাসি,
দিবি না রে সখা একবার এনে শাপলা ফুলের হাসি!
কাজলা বিলের হংসের সারে
এ’ হৃদয় ছুটে শত আবদারে
তবুও কি দেয় থোকা থোকা মেঘ সান্ত্বনা কাছে আসি!
দিবি না রে সখা একবার এনে শাপলা ফুলের হাসি!
সেই যে খেলতো সর্ষের ক্ষেতে ফিঙে ক’টা লুকোচুরি,
ওরাও আসে না কে করেছে বল বাচ্চা ওদের চুরি?
গম ক্ষেতে গড়ে ছটফটে ঢেউ
খুঁজে কি সমীর ক্ষ্যাপাটে সে’ ফেউ!
হিজলের শাখে শালিকও যে রোদে হয় নাকো উচ্ছ্বাসী!
দিবি না রে সখা একবার এনে শাপলা ফুলের হাসি!
থমকে দাঁড়াই খালের বাঁ পাশে দুলতো যেখানে লগি,
চিরতরে গেছে জানিস কি তুই সুচতুর কানাবগি?
দেখে যে পালাতো মাছরাঙা আগে
ওরেও তো খুঁজি খুবই অনুরাগে
চাইলে কি মিলে নাতিদূরে জাগা ফাদুয়ার ক্ষীণ কাশি!
দিবি না রে সখা একবার এনে শাপলা ফুলের হাসি!
ঘাসের ডগায় চষবার তরে জোড়া ফড়িঙের প্রীতি,
মনে আছে তোর কলাইয়ের ক্ষেতে দোয়েলের সেই গীতি?
সিমের মাচায় পেঁচকের দল
অযথা-ই সাজে নাচুনে পাগল
দেখেও কি হয় নীচু ডালে টুনি অবেলায় মিঠা ভাষি!
দিবি না রে সখা একবার এনে শাপলা ফুলের হাসি!
যদি পাই ছোট্টবেলা!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
খোঁজ করি সেই ছোট্টবেলা
ছিঁচকাঁদুনে মেঘে,
থাকবো ভেবে ধুল মাখা গায়
গুলতি নিয়ে জেগে।
দোল খাবো রোজ চুপটি ঝুলে
চললে গরুর গাড়ি,
নেংটা হয়ে ছটফটে খাল
সাঁতরে দিবো পাড়ি।
ছাগ বেঁধে এক ক্ষেতের আ’লে
উঠবো আমের গাছে,
কাঠ ফাটা রোদ রাখবো ঢেকে
দাদীর ঘরের পাছে।
কিচ্ছা গানের সেই যে দাদু
যতোই ছড়াক হাসি,
সুযোগ পেলেই জল ভরে তার
নৌকা দিবো ভাসি।
অথচ
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
খুব ভাবতাম রোজ একদিন আসবেই মেনে
হোক না বেভুলা হয়ে অবশেষে বকুলের ছায়,
ছিপছিপে কাঁদা-জলে বিলের তলায়
হঠাৎ আটকে পড়া এক জোড়া খলশের মতো
আবার মাতবো দোঁহে খুনসুটি গড়ে নিরালায়।
কিংবা রাখাল হবো পাকুড়ের তলে
বাঁশরির সুরে বেঁধে অবাধ্য ধেনুরে
সতেজ ঘাসের ঢালে জাগা কোন তটিনীর তীরে,
এ কথাও ভাবতাম খুব সযতনে
গাগরি কাঁকালে তুমি আসলেই একবার ফিরে।
রাখতাম না সুদূরে কাকতাড়ুয়ার হাসি
সরষে ক্ষেতের মাঝে ফিঙেটার ভীরু আলাপন,
এলেই শীতের প্রাতে ভাবতাম থেকে পাশাপাশি
কাটাবো দু’জন সুখে এখানেই বাকিটা জীবন।
অথচ আসোনি তুমি রাখোনি সে পণ
বরং দিয়েছো গড়ে এ’ হৃদয়ে বিষাদের গিরি,
যেখানে ভাবনা আজ বড় অসহায়
ক্ষয়িষ্ণু যৌবন ঠেলে দিশেহারা চেনা ধানসিঁড়ি।
খুঁজবি রে সখা!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
ভাববি রে সখা তুই খুব নিরজনে
যেদিন খেলবে মিলে ছেঁড়া স্মৃতি দু’চোখের নীরে,
গাইলেও সারি গান দখিনা সমীর
হয়তো সেদিন আমি থাকবো না মানুষের ভিড়ে!
তৃষ্ণার্ত আশায় বসে তটিনীর পাড়ে
দেখবি হতাশে একা সুদর্শন যদি যায় উড়ে,
অদূরে থাকলে ক’টা হংসের ছানা
নিশ্চয় সান্ত্বনা দিবে ওরা ডেকে সোহাগিনী সুরে।
সতেজ ঘাসের পাশে ফড়িঙের খেলা
করলে বিকেল বেলা শালিকেরে বেশ জ্বালাতন,
ষোড়শী মেঘের দেশে পৌঁছবার আশে
আমাকে ভেবেই তোর জানি হবে উতলা ও’ মন।
যাচবি গমের পাশে সরষের ক্ষেতে
অস্ফুট ব্যথার ভূমে ছড়ায়ে সে ছাগলের ছল,
হঠাৎ ডাকলে কাক কুহেলির আড়ে
হারানো দিনের ধারা গড়ে দিবে যমুনা অতল।
তবুও খুঁজবি ধেয়ে গোধূলির তলে,
রাখালি বাঁশির সুর নয়তো বা ডাকাতিয়া গলে!
কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।