সুমিত্র দত্ত রায় – কবিতা (অধরা, সেই প্রথম, মন ক্যামেরা, ডুয়েল)

অধরা

– সুমিত্র দত্ত রায়

কিনতে যা চাইছো
ওই চেতনা,
কেনার সীমা ছাড়িয়ে।

কাড়তে যা চাইছো
তাতো যাতনা,
পুরো নাগাল পেরিয়ে।

ধরতে যা চাইছো
সেতো ছোঁয়া,
পাই কাছাকাছি এলে।

কাছেই যা চাইছো,
শুধু ধোঁয়া,
সব পরিচয়ের মূলে।

সেই প্রথম

– সুমিত্র দত্ত রায়

গুঞ্জন থেমেই গেছে,
নিকষিত কালো বনে
বৃষ্টিধারা রিমঝিম ,
ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ পূর্বাভাস।

অশনিসংকেত দূরে,
বনপথকে জনপথ
করবো বলেই আশায়,
অবিশ্রান্ত পথচলা।

সিঁথিপাটি রাঙামাটি,
ঘোমটায় ঢাকা পথ
গর্জনের সমারোহে,
আকাশের ঘন নীলে।

মনপথ বনপথে
চলতেই উৎসুক,
দুর্নিবার এ প্রতীক্ষা
শ্রান্ত তবুও পথচলা।

বিহানে অরুণের রথ,
বিহংগের কোলাহলে
বিজন গোপণে ওঠে,
জাগ্রত প্রাণ স্পন্দন।

মন ক্যামেরা

– সুমিত্র দত্ত রায়

সেই যখন ভেবেছিলাম
ভালবাসা অমর অক্ষয়;
সংশয় ছিলোই না মনে।

কিন্তু আজ তো ভাবলাম
ভালবাসা একক গভীর;
সংশয় জাগলো মনেতে।

বিশ্বাস তো মূল চাবিকাঠি।
সংশয় মুছবো ভেবে মনে
ঘসলাম কালের ইরেজার!

কাল বদলেছে আজ তাই
ঘসাঘসিই তো সার হলো,
জটিলতা বাড়লো হৃদয়ে।

অলীককে দূরে রাখলাম,
ছবি তুলি মন ক্যামেরায়
বঞ্চনা ক্লান্ত হবার আগে।

ছবিতে সবটা তো এলোনা,
প্রয়োজন মতোই তুললাম
হিসেব করে, ডিলিটে হাত!

আজ ঐ ক্যামেরায় আমি,
এক ধ্রুব সত্যকে পেলাম
ভালবাসাই অক্ষয় অমর।

ডুয়েল

– সুমিত্র দত্ত রায়

এখন কিন্তু আমি একদম নিরস্ত্র।
বারুদের গন্ধে চারদিক ভরপুর
জখম! কেউ না কেউ তো হবেই,
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আজ ডুয়েল।

তুমি নিজে এসে বান তুলে দেবে
আমারই জীবন বাঁচানোর জন্যে-
ভাবার মতো স্পর্ধা আমার নেই,
কিন্তু অবাস্তবও ভাবতে পারি না!

আর নিজেই তোমায় জিতিয়ে দেব
হ্যাঁ,আমি প্রস্তুত, রিভলবারটা দাও,
তোমার হাতের ও রক্তকরবী চাই।
মরণ কলুষমুক্ত যে নিঠুর আঘাতে।

আপন সত্তারে বাঁচাতে নিজে যতই
স্বার্থপর হই না কেন – বন্ধু আমার,
তুমিও তেমন হবে ভাবতে পারিনা!
হয়তো পুরানো অধিকার দোষে।

সঠিক জয় কিসে? ত্যাগে না ভোগে!
জ্বালানি সম্বল করে কার্তুজ ছুটছে।
কে যে লক্ষ্য তার কেউ তা জানি না,
ভালো হয়! হারালেই সবার অলখে।

কালের ঘন্টার ধ্বনি ঢং…ঢং…ঢং…।
আজকে ডুয়েলে শুধু সেই মারা যাবে
নিজ হতে অন্যকে যে বেশী ভালবাসে।
জীবনের চেয়েও তাই- এ মরণ দু্র্লভ।


কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।

আমি ছেলেবেলা থে‌কে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু,  আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।