আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস
শহীদের রক্তের বিনিময়,
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা পেয়েছি।
রফিক শফিক বরকত ছালাম,
তোমাদের ভুলবে না কেউ শপথ নিয়েছি।
১৯৫২সালে ঢাকার রাজপথ,
পাক হায়েনাদের গুলির আঘাত।
কেঁপে উঠেছিল সমস্ত ঘরবাড়ি,
রক্তে লাল হয়েছিল পিচ ঢালাপথ।
আমাদের প্রাণের মাতৃভাষা,
যাদের ত্যাগের বিনিময় অর্জিত।
প্রতি বছর স্মরণ করবো আমরা,
শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে থাকবো গর্বিত।
সারাবিশ্বের মানুষ আজ একসাথে,
পালন করি এই রক্ত ঝরা দিনটি।
শহীদ বেদীতে পুস্পমাল্য অর্পণ,
“আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-টি।
২১শে ফেব্রুয়ারি ফিরে আসে ফাগুনে,
আমরা সালাম জানাই নত মস্তকে।
তপ্ত রুধির ধারা, মরে নাই তারা,
পৃথিবী জুড়ে পালিত হচ্ছে অমর একুশে।
তোমার চেতনায় উদ্ধুদ্ধ জাতি যেন,
পথ ভুলে না যায় ভবিষ্যতে,
অতীতের মত সহিবে না অত্যাচার,
স্বাধীনতা আর বাংলাভাষাকে সমুন্নত রাখবে।
সুন্দরবন
– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস
সুন্দরবনের বৃক্ষরাজি,
মনোমুগ্ধকর দৃশ্য,
শীতের সময় সাঁজে অপরুপ,
পর্যটকদের করে আকৃষ্ট।
সাগরের তীরে সুন্দরবন,
রকমারি গাছে ভরা,
শাল শেকন কেওড়া গোলপাতা,
আর গেওয়া কাঠের গোড়া।
বনের ভীতর পশুপাখি,
আছে যেমন প্রচুর,
হরিণ বন মোরগ শেয়াল,
আর রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
জেলেরা যায় মাছ ধরিতে,
কয়েক মাসের জন্য,
সরকারের অনুমতি পেয়ে,
আর্থিক লাভ করে হয় ধন্য।
সুন্দরবন একটা পর্যটন কেন্দ্র,
দেশ বিদেশের অতিথিবৃন্দ,
স্বপরিবারে আসে ভ্রমণে,
উপভোগ করে অনেক আনন্দ।
বছরে একবার হয় রাসমেলা,
নৌকা লঞ্চ ট্রলার নিয়ে,
হাজার হাজার বিনোদন প্রিয়,
লোকজন উৎসবে আসে।
সুন্দর বনের নদী খালে আছে,
অনেক প্রকার মাছ,
সাগরের তীরে বসে সূর্য ওঠা ও ডোবার,
দেখে এই অপার সৌন্দর্যের সাঁজ।
সুন্দর সুন্দর অনুষ্ঠান মালা,
থাকে স্বেচ্ছাসেবক ডাক্তার নার্স,
পুলিশের থাকে কড়া নজরদারী,
কোস্ট গার্ডের ব্যাপক চার্জ।
এখানে মানুষ আসে অবকাশে,
দূর দূরান্ত থেকে আনন্দ ভ্রমণে,
হলদিরচর করমজল আর হীরন পয়েন্টে,
মৌয়ালী বাওয়ালী আর শিকারীরা,
গোলপাতা মধু সংগ্রহ আর হরিন শিকার করে।
সুন্দর বনের বাঘ আর বাঘের পায়ের চিহ্ন,
সবই ভ্রমণকারীদের মন কাড়ে।
খেয়াঘাট
– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস
ও মাঝি, মাঝি ডাকি তোমারে বারবার,
পারের আশায় বসে আছি এপার।
নদীর জলের ঢেউ লাগে কিনারায়,
ব্যস্ত যেতে হবে কাজে ডাকি তোমায়।
সারাপথ দ্রুত এসে খেয়াঘাটে দেরী,
তাইতো প্রচলিত, কত কথা মনে করি।
কখনো আকাশে মেঘে বিজলী চমকায়,
ভয় ভয় নৌকায় উঠে বিপদ ঘটায়।
নদীমাতৃক আমাদের এই দেশে,
খেয়ার প্রচলন আছে আদি যুগ থেকে।
অনেকের আছে খেয়াঘাটের অভিজ্ঞতা,
আনন্দের উচ্ছ্বাস আর স্বজন হারানোর ব্যথা।
কখনো শোনাযায় খেয়ার মাঝির কর্কশবানী,
যাত্রীদের রুঢ় আচরণের একাকার ধ্বনী।
আজ অনেক হয়েছে সেতু,ফেরিঘাট,
নদী দখল করেছে যান্ত্রিক নৌকায়, খেয়াঘাট।
যাদের দিনে অন্তত কমপক্ষে দুইবার,
হতে হয় নৌকা করে খেয়া পারাপার।
খেয়াঘাটের মাঝির সাথে তাদের সম্পর্ক,
গড়ে ওঠে গভীর দেয়া নেয়ার অন্তরঙ্গ।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের সাথে,
খেয়াঘাটের স্মৃতি মনে প্রাণে মিশে আছে।
কবি পরিচিতি

কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। জন্ম জুলাই ২, ১৯৫৫, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার কাষ্টবাড়িয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে। পিতা – হৃদয় চন্দ্র বিশ্বাস, মাতা – ফুলমতি বিশ্বাস।
ছোট বেলা থেকে সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। গনিতের অধ্যাপক হলেও সাহিত্যের প্রতি তাঁর ভালো লাগা আজীবন। কর্মজীবনের অবসরেও কবিতা লেখেন। সহজ ভাষায় ছন্দ মিলের উপস্থাপনায় লেখা কবিতাগুলো পাঠ করে পাঠকেরা সামান্যতম আনন্দ পেলেই নিজেকে ধন্য মনে করবেন।