হেমন্তের কথা
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
হেমন্ত কি ক্ষয়ে গেছে জানো মধুরিমা?
ঢেঁকির শব্দই আজ আসে না যে তৃষ্ণার্ত দু’কানে!
চাঁদনী প্রভাতে কারো বাহির উঠোনে
গরুর মলনও দেখি ঘুরে নাকো ক্ষীণ অভিমানে!
সকালে শালিক ডাকে সুমধুর সুরে
পারবে বলতে শুনে কোথায় সে’ কার্তিকের গীত?
হঠাৎ পেয়েও ছাড়া হংসের দল
পরিপাটি ক্ষেত বিনে ওরাও তো ভুলে গেছে জিদ!
নবান্নের কথা শুধু বাজে মুখে মুখে
দেখি না দু’গাছি নিয়ে দিঘা ধান কেউ ফিরে বাড়ি!
থেকেও চিতই ভাপা সগৌরবে বেঁচে
হয়তো চিনে না শুধু ওরা সেই খেজুরের হাড়ি!
নতুন ধানের ঘ্রাণ কৃষাণীর বুকে
কোথাও কি জানি আজ বুণে কি না সযতনে আশা!
নাইওরে অনেকে আসে খুব খুশি মনে
ব্যাকুলে জাগে না তবু ঘরে ঘরে মিঠা ভালোবাসা!
তোমাকেই খুঁজি আমি দেখে এ’ অরূপ,
বুঝেও ফিরলে তুমি হবেই নিশ্চুপ!
ভুলতে দিলি না তবু!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
নিজেকে সাজালি নীলিমার দেশে তারকার রূপ ধরে,
ভুলতে দিলি না সুদিনের কথা ক্ষণকাল তবু মোরে!
ঝরায়ে যতনে নিভৃতে আঁখি
কাতরায় বুকে ডানা ভাঙা পাখি
ক্ষয়ে ক্ষয়ে মরে আহত আকুতি আশাহত এক দোরে –
ভুলতে দিলি না সুদিনের কথা ক্ষণকাল তবু মোরে!
লহরির ঘাতে অকূল পাথারে বেতাল আজি এ’ তরী,
ঘাঁটি খুঁজে তবু তারি সম্মুখে নিষ্ঠুর বিভাবরী।
মেঘমালা বেঁধে নাতিদূরে ভেলা
আক্রোশে করে স্মৃতি নিয়ে খেলা
অভিমানে খসে স্বপ্নের জ্যোতি তিমিরের বন্দরে –
ভুলতে দিলি না সুদিনের কথা ক্ষণকাল তবু মোরে!
তবুও দাও না তুমি!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
সরষে ক্ষেতের পাশে ছাগলের ছল
চোখেই পড়ে না আর, ক্ষণকাল দেখেছো কি তুমি?
বাহারি শীতের ভোর খোয়েছে জৌলুস
ঘন কুহেলির দল যায় নাকো বলে প্রেমে চুমি।
সেই পাকুড়ের তলে শালিকের ঝাঁক
হিমেল বাতাস সয়ে উঠতো যে ঝগড়াতে মাতি,
পাশে বসা মাছরাঙা কতো তার রাগ
আজকে পাই না যেচে দৃশ্যমান কিছু জাগা খ্যাতি।
আহত দু’চোখ মেলে তবু খুঁজে ফিরি
আবদ্ধ পানার পাশে টাকিদের ধীর বিচরণ,
ক্ষণিক মিলে না ওই টমেটোর ফুলে
মধু লোভী অলিদের পাশাপাশি মৃদু আলাপন।
গাছালির হাড়ি দেখে ভেজা গাছ তলে
ব্যাকুলে সাজাই যদি অবশেষে ছেঁড়া ক’টা আশা,
দু’ একটা বক দেয় তখনি উড়াল
ছিলো না ওদের যেন কোন কালে বাঁশ ঝাড়ে বাসা।
গুমোট আঁধার জাগে এ’ বুকে আমার
অজান্তে হারিয়ে যাই দলছুট অম্বুদের সাজে,
তবুও দাও না তুমি একবার এসে
কাঙ্খিত সজীব সুর ফিরে এই বিকল এস্রাজে।
আজ সকালে
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
আজ সকালে উঠেই দেখি
পাল্লা দোরের খুলে,
দল বেঁধে সব কুহেলিরা
উড়ছে হেলে দুলে।
গাছের ডালে ডাকছে শালিক
উর্দ্ধে তুলে আঁখি,
শিরশিরে বাও সতেজ পাতে
যাচ্ছে চুমু রাখি।
ওমের লোভে ভাবছে কুকুর
ঘাপটি মেরে বসে,
ফিঙে ও কাক ঘরের চালে
রাগছে বিরাগ খসে।
সূর্যটা নেই আগের মতোন
দিচ্ছে না রোদ হানা,
কাঁপছে দেখে ডাক ভুলে এক
ছোট্ট বিড়াল ছানা!
দুঃখের ভার
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
দুঃখরা হলে বোঝা,
হয়তো পারে না সহজে সে’ জন
চাইলেও হতে সোজা!
অবেলায় ছুটে ঘন কালো মেঘ
গতরে উঠলে ঘেমে,
মনে হয় দেখে ওদেরই ওজনে
আকাশ এসেছে নেমে।
লোহার গাত্রে মরিচারা জমে
অবাধে গড়লে বাড়ি,
না পাঁজালে কেউ দিনে দিনে সেও
হারায় মুখের সারি।
সহনীয় জলে ফসলও তো যাচে
অবশেষে আবালতা,
নিড়ানি অভাবে যায় যদি বেড়ে
শ্যাওলার বদ্ধতা!
কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।