পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা (কবিতার ধুলো, জল-ছবি, মন্ত্রাবেশ, ভালো আছো তো, ঝরলো খুশি, শেষ পাতার ছবি)

কবিতার ধুলো

– পারমিতা ব্যানার্জি

অনুভবে অনুভবে
কত কথা আঁকি সুরে।
ঘুরে ঘুরে দূরে সবে
অজানায় যায় সরে।
ছায়া কত হাত নেড়ে
লুকোচুরি খেলা খেলে।
কথাগুলি বহুদূরে
উড়ে গেছে ডানা মেলে।
মনটা যে পড়ে নুয়ে
ঘোরে ঘুরি কানাগলি।
চেয়ে দেখি পড়ে ভুঁয়ে
একরাশ ধুলোবালি।

জল-ছবি

– পারমিতা ব্যানার্জি

এই সবে
এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল।
গাছের পাতা
এখনও জল সপসপে __
রাস্তার ইলেকট্রিক তারেও
সারিবদ্ধ জলের ফোঁটা।
বেশ কিছুক্ষণ ওরা ঝুলছে।
যেন মনে হচ্ছে ওরা
সমবেত সঙ্গীতের জন্য তৈরী।

ওরা জানে না
এখুনি রোদ উঠলেই
হারিয়ে যেতে হবে ওদের…
অথবা
একটু হাওয়া দিলেই __
টুপ টুপ ঝরে পড়বে মাটিতে।
তবু ওরা আনন্দে
গা ঘেঁষাঘেষি করে ঝোলে ।
যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ…

আমি শুধু দেখি।
মনের মধ্যে এঁকে রাখি
ঝলমলে ফোঁটাদের ছবি!
একটা বেরসিক কাক
হঠাৎ বসলো ঐ তারে।
ফোঁটা গুলো টুপ টুপ পড়লো।
স্বপ্নরা টুকরো হলো নিমেষে।
আমি যে হারিয়ে খুঁজি সেই
মায়াবী স্বপ্ন-ছবি ।

ভালো আছো তো

– পারমিতা ব্যানার্জি

কত সুখ হয়নি দেখা।
কত কথা রয়ে গেছে বাকি!
ডানা ভাঙা পাখি
একলা বসে জীর্ণ বাসায়!
মেঘেদের চিঠি
উড়ে গেছে দুরন্ত ঝড়েতে,
ঠিকানা না রেখে।
শূন্য নীল আকাশে পাখিটা
খোঁজে হারানো কথা।
তোমার বুকে যা রয়ে গেছে
বকুল ব্যথা হয়ে।
ঝরা কামিনীর পাপড়ি
পড়ে আছে চলার পথে __
পাগল করা ঘ্রাণে
ব্যাকুল হয়ে ওঠে মন!

তুমি ভালো আছো তো!

ঝরলো খুশি

– পারমিতা ব্যানার্জি

বৃষ্টি এলো বৃষ্টি এলো
অনেক দিনের পরে।
অপেক্ষাতে ছিল যারা,
আনন্দের গান ধরে।

তাদের মধ্যে অন্যতম
কোলা ব্যাঙের ছা!
গাল ফুলিয়ে বলছে সে
আহারে বাহারে বাঃ!

আরো খুশি চাতক পাখি
জল খায় প্রাণ ভরে।
বৃষ্টি বলে, এলামই তো,
ঝরতে অঝোর ঝরে!

শেষ পাতার ছবি

– পারমিতা ব্যানার্জি

এক জীবনে
আমি বেঁচেছি অনেকবার!
যেদিন তুমি আমায়
পাঠিয়েছিলে__
একলা একটি পাতার ছবি।
সেদিন আরও একবার
বাঁচার স্বপ্ন দেখলাম আমি।

“শেষ পাতা”র গল্পটা খুঁজি!
সেই শেষের পাতাটা__
যেটা আমাকে বাঁচতে শেখায়।
সেই পাতাটার ছবিই কী
তুমি পাঠিয়েছিলে!!
কেন পাঠালে?
আমি তো বাঁচতে চাইনি।

তবু কেন লোভ দেখাও?
কী জানি _
আমি সত্যিই হয়ত বাঁচতে চাই!
তাই স্বপ্ন দেখি বাঁচার _
বাঁচি বারবার ।


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।