বিভূতি দাস – কবিতা (উৎসর্গ, থাকবে থাকো, মুখোশ বাসী, গুঁতো খা, টোটকা)

উৎসর্গ (ট্রায়োলেট)

– বিভূতি দাস

বলি হোক বা কোরবানি, প্রাণ যায় সেই অবলার
কার ফরমান কে শুনেছে সেটাই ভাবি সারা জীবন
স্বার্থ ভাবনা এগিয়ে রেখে মুক্তির স্নান হাজার বার
বলি হোক বা কোরবানি, প্রাণ যায় সেই অবলার
এক পুকুরের ভিন্ন ঘাটে পুণ্যের নেশা চমৎকার
অরূপের রূপ সাগরে একই বেশে দাঁড়িয়ে সমন
বলি হোক বা কোরবানি, প্রাণ যায় সেই অবলার
কার ফরমান কে শুনেছে সেটাই ভাবি সারা জীবন।

থাকবে থাকো

– বিভূতি দাস

দ্যাখো ভায়া থাকবে থাকো, দেখিও না আর তেমন কেরামতি
পুরনোদের দিকে তাকিয়ে দ্যাখো, ওরাও আছে আবার নেই এটাই সত্যি
দু-বছরে তোয়াজ তুষ্টি কম হল না, গুণীজনে বলছে বটে থেকেই যাবে
পথটা একটু বদলে নিও, বেছেগুছে ধরো, রোদ্দুরে সেঁকা হাড্ডিতে কি পাবে?

রোদে পোড়া, জলে ভেজা শরীরে প্রকৃতির দান দুর্বার প্রতিরোধ শক্তি
ধুলো কাদায় সবুজ সোহাগে ধন্য এ প্রাণ, ধুলো কাদাতেই তার মুক্তি
কত শত ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু, ভাইরাস এই মাটিতেই হয়েছে লীন
যুগ যুগান্ত ব্যাপী এসেছে গিয়েছে, তবুও মাটির মহিমা হয়নি ক্ষীণ।

ইট কাঠ পাথরে গড়া নগর সভ্যতায় যেখানে হাসির জন্য মূল্য লাগে
সেখানেই থেকো চুক্তির শর্ত মেনে, শতবার ভেবো মাটি ছোঁয়ার আগে
দুরন্ত তপন আর অফুরান পবনে তৈরি জীবনী শক্তির সহজে হয় না হ্রাস
যতদিন থাকে সে প্রকৃতি মায়ের আঁচল জড়িয়ে, অবহেলে হারায় ত্রাস।

মুখোশ বাসী

– বিভূতি দাস

মুখ বেঁকানো ঠোঁট উল্টানো ভেংচি গুলো করছে ভীষণ ছটপট
কেউ বোঝে না মুখোশের নিচে কোন ছবিটা লটপট
গোঁপ নাচানো গুপি হাসি, তার দিন হয়েছে শেষ
কমলা ঠোঁটের ঝলসানো প্রেম, সেও হয়েছে নিরুদ্দেশ।

ফোকলা হাসি; দেঁতো হাসি; ফুচকা ওয়ালার মিচকে হাসি
চাঁদু মুদির কাষ্ঠ হাসি, আতান্তরে সব হয়েছে মুখোশ বাসী
এক ঘরেতে দাদা বৌদি, হাসতে হাসতে কি আসছে কাছে!
নাকি হাসির দরজায় ঝুলিয়ে তালা তারাও বেশ বিগড়ে আছে।

টোলপড়া গোলাপ রাঙা পাতলা চিকন অধর; মন কাড়ে না বহুদিন
ঝিলিকমারা নাকচাবিটা দেয় না উঁকি, ভুলকরে ও একটা দিন
যেন লেবু লঙ্কায় ঝুলিয়ে মালা ছফুটের দূরত্ব রাখছে বজায়
মাথায় টুপি, মুখে চুসি চোখের মণি ঘুরছে এক অজানা শঙ্কায়।

লাফিং ক্লাবের ঝাঁপ বন্ধ, নেই সেখানে গোমড়া মুখের কসরত
ঘুঘু পাখীটা উঁকি দিয়ে যায় যখন তখন পেলেই একটু ফুসরত
ফলস সিলিঙের ফাঁক ফোঁকরে বিস্তার উই রাজত্বের পূর্বাভাস
হা হা হি হি সব বেপাত্তা, সবুজ পাতায় শুধুই শীতের দীর্ঘশ্বাস।

গুঁতো খা

– বিভূতি দাস

চোখের কোণে হাসির রেখা হাসছে দ্যাখো গিনিপিগের ছা
বলছে ওরা ঠোঁট নাড়িয়ে খাঁচায় বসে, একটু গুঁতো খা
জন্ম থেকে দাদাগিরি ছুতোয় নাতায় দিয়েছিস আবিস্কারের ঘা
পট পটা পট তুলছিস পটল আরো বছর দুয়েক পেটটা ভরে খা
যেমন খুশী অঙ্ক কষে বিষ ঢেলেছিস দিন দুপুরে খাঁচায় পুরে
দ্যাখ না এখন কেমন লাগে পাংশু মুখে জড়সড় বদ্ধ ঘরে
সাজের বাহার গোঁপের বাহার সব ঢেকেছে জম্পেস এক মুখোশ
কানের গোড়া রক্ত বর্ণ মুখে দড়ির দাগ, করছিস কেন আপসোস!

টোটকা

– বিভূতি দাস

মন খারাপের গোলি আছে, লাল পেঁয়াজের ঝাঁজ
সব ব্যথাতে মিলবে আরাম, মাথায় পড়লে বাজ
খালি পেটে ডাকলেও শেয়াল, হুকুম মেনেই চলছে রাজ
চেটে দ্যাখে শুকনো শরীর, হায়না গুলোর নেই লাজ।

ধম্ম ষাঁড়ের শিঙের গুঁতোয় মন জমিনে ধুলোর ঝড়
গোকুল আকুল দুর্নীতির অন্ধকারে পোষা জনগণ চিবোয় খড়
জান মাতিয়ে মাখন খায় যমের দোসর ধন কুবের
বে-ঘোরেতে যাচ্ছে জীবন মামা দাদা নেই যাদের।

গোদের উপর বিষ ফোঁড়া মারণ বীজ ভাসছে হাওয়ায়
ঠান্ডা ঘরের রিপোর্ট দেখে সবটুকু কি বোঝা যায়
খেয়াল খুশীর নাগর দোলায় ঘুরছে নিত্য নতুন ফরমান
জানতে বড় ইচ্ছে করে কোথায় কার কতটুকু অবদান !

ছলের খেলায় চতুর গুঁটি ব্যস্ত সদাই, বিনিয়োগের রাখতে মান
মিক্স ম্যাচেতে মুনাফা ফিক্সড, হলেও গোটা পৃথিবী গোরস্থান
কার রোজগার খাবে কে, না থাকলেও সঠিক বিধান
অজ্ঞ বিজ্ঞ এক সারিতে লাভ ক্ষতিতে টনটনে জ্ঞান।


কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে।

প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।