গ্রামের প্রাণ
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
গরীবের ছেলে ভোলানাথ ভোলা সহজ সরল প্রাণ,
দিনমান তার খুঁটিনাটি চলা বাড়াতে গ্রামের মান।
খুশিতে সে করে বৃক্ষ রোপণ পরের জমিন খুঁড়ি,
অন্তরে আশা গৃহগুলি হবে পাখির স্বপ্নপুরী।
পর মঙ্গলে যেচে করে কাম নেয় নাকো চেয়ে টাকা,
না দিলেও কেউ হাসি তবু তার স্বর্ণের মতো পাকা।
চলার আধারে সাফ করে পথ রাখতে তা পরিপাটি,
গর্ত দেখলে পারে না সে যেতে না দিয়ে দু’ডালি মাটি।
খুব মনে আশা খেলোয়াড় হবে একদিন বড় বেশ,
ফুটবল মাঠে রোজ গড়ে তাই বাহবার সমাবেশ।
এগাঁও ওগাঁও খেলতে সে যায় ডাক দিলে কভু কেউ,
যাদুর ছোঁয়ায় এনে দেয় তারে সুনামের যতো ঢেউ।
সকলেই বলে হতো যদি ভোলা ধনিনীর সন্তান,
একদিন তার ভাঁড়ারে জমতো গগনচুম্বী মান।
সেদিন অচেনা ভদ্রের বাবু পেয়ে তার পরিচয়,
সুধালো ভোলা রে যাবি মোর সাথে করবি শহর জয়?
অজানা আশায় বুকখানি তার খুশিতে উঠলো ভরে,
সাড়া দিলো সাথে দু’ফোঁটা অশ্রু মুক্তোর মতো ঝরে।
সকলে বললো ভাবিস নে ভোলা বিশ্বাস রাখ মাথে,
আল্লার দ্বারে খয়রাত দিমু দোয়া রবে তোর সাথে!
খেলবি যখন বড় বড় মাঠে বাঞ্ছা মননে পুষি,
দুনিয়াতে আর কে হবে বলতো আমাদের মতো খুশি?
ভোলা শেষে তাই শহরেই গেলো মুছে অস্ফুট ঘাম,
সকলে দিলেও খুশিতে বিদায় নীরবে কাঁদলো গ্রাম।
ডাহুকের গান
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
তোমাকে খুঁজতে গিয়ে আমনের ক্ষেতে
পিছলা আলের পাশে দেখি এক বলাকার ফাঁদ,
চৌদিকে দুলছে তার হিমেল বাতাসে
সোনালী ধানের শীষ হাসিতেই গড়ে বাঁকা চাঁদ।
ক্ষুধার্ত ক্ষেপাটে ঢোরা খেয়ে ছোট টাকি
ফেললো আমাকে দেখে বার দুই বিরক্তির শ্বাস,
অদূরে দাঁড়ায়ে ছিলো হটটিটি ক’টা
পালায়নি তবু উড়ে ডেকেছিলো গলা ছেড়ে হাঁস।
জিজ্ঞাসিনু ঢের ডেকে ‘বলো পানকৌড়ি!’
ওরাই দু’জনে ছিলো সাবধানে কচুরিপানার আড়ে,
বুঝেও দেয়নি সাড়া শালিকের মতি
যদিও দেখেই ঠেলে ঢুকেছিলো কলমির ঝাড়ে।
হারায়ে স্বপ্নের সারি ফিরছি যখন
মেঘের উদরে ছুঁড়ে অবশেষে ছেঁড়া অভিমান,
তখনি উঠলো বেজে খাগড়ার বনে
ভীষণই মধুর সুরে পাশাপাশি ডাহুকের গান।
হৃদয়ের আকাশ
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
আমার হৃদয় হয় না পয়োদ হারা
পাশেই উড়ে চিলের আহাজারি,
ক্ষণ-প্রতিক্ষণ বয়ে দুখের ধারা
সেই আকাশটা ভীষণ নীলের বাড়ি।
দিনে ক্ষণিক সূর্য দিলে দেখা
রাত্রে শশীর ঘোমটা থাকে বেঁকে,
ব্যঙ্গ সুরে বিজলী আঁকে রেখা
যায় যখনি ঘোর আঁধারে ঢেকে।
চাইলে দিতে স্নিগ্ধ পরশ মাখি
হিমেল বায়ু বৃষ্টি থামার শেষে,
ফের মেলে না তবু সতেজ আঁখি
রামধনু আজ খিল খিলিয়ে হেসে।
পাক-প্রকৃতি দেখে বেহাল দশা
দিলেই কভু সবুজ আঁচল পাতি,
হঠাৎ খসে ঋক্ষ করে গোসা
কাড়তে শুধুই সলতে হারা বাতি।
এক খুকির কথা
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
বসে আছি একা টঙের কিনারে
এক খুকি এসে কয়,
দাও না বেড়ার বন্ধন খুলে
আমি কি আপন নয়!
ওপাড়ে দেখেছি পড়ে আছে কতো
টসটসে পাকা জাম,
কুড়িয়েও খেলে করবো না বলো
হরষে তোমারি নাম!
বললুম তারে বাঁধা নেই খুকি
আরও খুশি হবো জেনে,
স্বচ্ছ পানিতে ডুবিয়ে তা খাবে
এ কথা নিলে কি মেনে?
মায়া ভরা চোখে চেয়ে সে বললো
লুকালেই অনুরাগ,
ধুয়ে এনে বুঝি তোমারে দিবো না
সমাদরে ক’টা ভাগ!
জানি না যে কেন সহসা জমলো
অক্ষি কোটরে পানি,
মনে হলো শুধু নিশ্চয় আমি
নই ওর মতো জ্ঞানী!
স্বপ্নিল নদীর ধারা
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
একটা নদীর প্রেমে হাবুডুবু খাই
স্বপনে সম্মুখে পাই তারে শুধু আমি,
গভীর মায়াবী তার টলটলে জল
দানে এ’ হৃদয়ে আশা বুঝি তা নিশ্চিত
হীরকের চেয়ে নয় গুণে মানে কিঞ্চিত অদামী।
দেখতে দু’অক্ষি ভরে লহরির খেলা
চন্দ্রের আহ্বানে একা ওই বুকে বেয়ে চলি তরী,
জোছনার ধারে এনে রূপালী আবাস
আমাকে তখন যাচে চুপিসারে সেই বিভাবরী।
বুঝাতে পারি না আমি ক্ষীণ ভাষা দিয়ে
কেমনে বেড়ায় ভেসে স্রোতের সে’ সুর,
তবু রচি আনমনে হয়তো বা হবে
অভিসারিণীর কোন সাজা দেয়া রূপালী ঘুঙুর।
খুব উদ্বেলিত হই দেখে তার রূপ
খুশিতে হৃদয়ে গাঁথি কাঙ্খিত এ’ ছিরি,
পাশেই যখন দেখি জেগে আছে এক
জোড়া ডাহুকের ডাকে চির চেনা স্নিগ্ধ ধানসিঁড়ি।
কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।