পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা (হিসেবের খাতায়, কথা কিছু কিছু, মন্ত্রাবেশ, মহাসুখ, আক্কেল গুড়ুম)

হিসেবের খাতায়

– পারমিতা ব্যানার্জি

অকবির খেরো খাতায়
লেখা হয় কত শত কথা
এবং কত না ব্যথা।
কেউ কেউ হয় কী কবিতা!
অকবি ভাবে বসে
এ কেমন তার সংসার !

খেরো খাতায় যত
লেখা লাভ ক্ষতির হিসেব!
ভুলে ভরা সে খাতায়
কোনটা লাভ, কোনটা ক্ষতি
পায় না সে দিশে।
জমা তো হয় না কিছু শেষে।

অকবি তবু লেখে__
লেখার এক ভীষণ তাগিদে!
কত কথা রয়ে গেছে
সেই খেরো খাতার পাতায়…
তবু অকবির মন কাঁদে
ব্যথায় ব্যথায়…

কথা কিছু কিছু

– পারমিতা ব্যানার্জি

কথা ছিল __
ঝড় আসবে ।
আতঙ্কে রাত কাটবে।
বৃষ্টিও আসবে।
বৃষ্টিতে চরাচর ভাসবে।

কথা ছিল __
তারপর,
শান্ত হবে পৃথিবী __
তুমি আসবে __
স্বস্তির বাতাস বয়ে নিয়ে।

এরকম কথা কতই থাকে।
ঝড় আসে __
বৃষ্টিতে ভেজে চারিদিক।
বন্যায় ভাঙে ঘর ।
খাবার ও বাসস্থানের
হয়ে থাকে অনটন!

জানি না
এ কথাও ছিল কি না!

ঝড়ের ও ধ্বংসের শেষে
সুখ হয়তো আসে।
আমার চোখে পড়ে না।
মনে ছাপ রাখে না
তবু কথা থাকে।

মন্ত্রাবেশ

– পারমিতা ব্যানার্জি

অলক্ষ্যে
এক মন্ত্র উচ্চারণ হয়েছিল
সেদিন ব্রহ্মাণ্ডে!
ভূ্লোক দ্যূলোক কেঁপে উঠল।
কী এক সুর লগ্নে
এসেছিল অপার্থিব প্রেম…
হয়তো তোমার আমার জন্য।
উতলা হলো
আমার নদীর মতো মন।
তোমার চোখের দ্যুতি
পিছলে পিছলে পড়ে ছিল
আমার মনের বেদনার ঢেউয়ে।
কী তীব্র সেই দৃষ্টি!
আমার কপোল ভিজে গেলো
উষ্ণ অশ্রুতে।
আমি চোখ বুজলাম!!

মহাসুখ

– পারমিতা ব্যানার্জি

প্রতিদিনই ফোটে ফুল
মধু নিয়ে বুকভরা।
ছোট ফুল বড় ফুল
সব ফুল যেন মনোহরা।
সবাই জানে যে যার
কদর!

নানা রূপ, নানা রঙ্,
ঠমকে ঠমকে জানায়
তাদের ঢং।
রূপ নাকি রস __
কোনটা যে সেরা!!
সেই ভেবে ফুল হয় যে
দিশেহারা!

মৌমাছি গান গেয়ে
মধু লোভে ফুল দংশায়।
আনন্দে মাতে ফুল
মধু যেন দুহাতে বিলায়!
মহাসুখে মধূপের পায়ে
পরাগ মাখায়!

আক্কেল গুড়ুম

– পারমিতা ব্যানার্জি

আষাঢ় শ্রাবণের ঢল্
মানে না টাইম টেবল!

কত শত সন্ধি
ব্যাকরণ না মেনেই বন্দী!

যখন চাঁদ
নদী জলে খানখান
প্রতিফলন প্রতিবাদ!

থাকে আবডালে
কাগজ কলম
মোবাইলও বেয়াক্কেলে!

জীবন _
ট্র্যাক ছেড়ে পিছলোয়।
অকারণ যাপন!


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।