ওরা থাকবেই
– সুমিত্র দত্ত রায়
ওখানে কমা ছিলো –
কেন লেখ নি?
যতিগুলো দাঁড়ি কেন?
ভেবে দেখ নি,
বিস্ময় প্রশ্ন কিভাবে?
আগে ভাব নি!
জানি না –
কমা কি করবে ক্ষমা?
তার অবহেলা,
যতি কি মানবে ক্ষতি?
স্তব্ধতার জ্বালা!
বিস্ময় কি রবে নির্ভয়?
মেনে প্রশ্নের হেলা।
শুধু জানি,
ওরা সবাই আছে, ভরা জগতময়,
ভুলটা আদৌ কোন লেখাতেই নয়!
কার কোথা কতটা, থামা প্রয়োজন –
সেই গণ্ডি মেনেই, কি চলে এই মন?
ভুল যা, তা তো সারা জীবনটাময় –
চলা না চলার পথে, কতই ভুল হয়।
মেনে নিতে হয় বন্ধু, ভুলের জীবন,
ওদের ভুলের জন্য, ওটাই কারণ!
শামুক
– সুমিত্র দত্ত রায়
আপন জনের কাছে
নিজের এ মুখ,
নিশ্চিন্তে খোলসে বন্দী
নীরব শামুক।
দূরভাষে ইতালি বা ফ্রান্স,
বিমানে ওই প্যারিস, লন্ডন,
ট্রেনে হিমগিরি, রাজধানী,
ইচ্ছেমতোই নিশ্চিত ভ্রমণ;
….সবশেষ।
এখন শুধু এককাপ চা,
সুখটানে একমুখ ধোঁয়া,
প্রেয়সীর নেশেল, না দৃষ্টি!
মায়াময় একটুকু ছোঁয়া;
….অনিমেষ।
আপন জনের কাছে
এখন এ বুক,
খোলস মুক্ত, স্ব ভাবে
চলন্ত শামুক।
ডিম লাইটে ঘর।
কাল তরণী
– সুমিত্র দত্ত রায়
গ্রীষ্মের সকালে,
নদীর বুকেতে
বাল্য ছলাৎ ছলাৎ,
আমার ভালবাসা।
বর্ষায় গুমোটে,
ক্ষেত সবুজে
ধানের শীষের ঢেউ,
আমার ভালবাসা।
শরৎ দুপুরে,
ফেরি করে ফেরা
অবসন্ন সে ছেলেটা,
আমার ভালবাসা।
হেমন্ত বাতাসে,
পাতা ঝরা ওই
শঙ্খ বাজিয়ে যুবতী,
আমার ভালবাসা।
শীত কাঁপুনিতে,
লেপের তলায়
গুটিশুটি শীর্ণ বউ,
আমার ভালবাসা।
বসন্ত দুয়ারে,
ফুরিয়ে যাওয়া
রাত পরীর কান্না,
আমার ভালবাসা।
সিন্ধুকে চ্যালেঞ্জ জানানো –
পাথরটা আমার ভালবাসা।
শয্যায় ধুপ বা রজনীগন্ধাও –
আমার; আমারই ভালবাসা।
আলোর দিশারী
– সুমিত্র দত্ত রায়
সক্কালবেলা,
বাবার মেজাজ তুঙ্গে, মাও অসহায়।
“এভাবে শুয়োর পোষাটা সম্ভব নয়।”
দরজা বন্ধ হলো। হতাশ মা বললো,
“গোঁয়ার মানুষটাকে তো তুই জানিস,
আমার আর কিছুই করার নেই বাবা।”
দুপুরবেলা,
ইন্টারভিউ বেশ আশাপ্রদ .দিলাম।
তবু বোর্ডে শুনলাম, “মিষ্টার মিটার,
আয়্যাম সরি, নেক্সটে ফের ট্রাই নিন,
এবারে জি.এম.এর ক্যাণ্ডিডেট আছে।”
সন্ধ্যাবেলায়,
প্রেমিকার কলমে, “জীবন! মোহ ছাড়,
বাঁচার জন্যই শুধু বাঁচা দরকার –
সেটা মনে রেখো। সিঁদুর রাঙা পথের
মাঝে শান্তিনিকেতন, ফালতু ভাবনা।”
রাত্তিরবেলা,
চুল্লু ঠেকে বসা বন্ধু সবাই হাজির।
“দেখ বাবা, বিনি পয়সায় মাল রোজ
কেউ খাওয়াবে? ফেল কড়ি মাখো তেল,
আমি কি তোমার পর! দুঃখিত রে ভাই।”
গঙ্গার পারে,
শূন্য জগতে, শূ্ন্য পকেটে, শূন্য মনে।
বন্ধু সুমনা; “এই যে ওঠো জীবন দা,
খাবার এনেছি গো খেয়ে উদ্ধার করো।
চলার মধ্যেই বাঁচতে হবে তোমায়,”
এই কি সেই “Lady with the lamps?”
ওকে নিয়ে কিছু স্বপ্ন দেখি নি কখনো।
তবু শুরু হলো নয়া পথে যাত্রা আজ,
শুধু সেই কথা, ‘জীবনের জন্যে বাঁচা।’
আহা…
চলার মধ্যেই বাঁচাতে হবে সবার।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।