সব কথা (ট্রায়োলেট)
– বিভূতি দাস
সব কথা কি বলতে পারা যায়
একই রোগের শিকার কতজন
বাসা বেঁধে অন্তরে কুরে কুরে খায়
সব কথা কি বলতে পারা যায়
জীবনের শেষ সম্বল ছিনিয়ে নিতে চায়
আগেপিছে নজরদারি জারি রাখে শমন
সব কথা কি বলতে পারা যায়
একই রোগের শিকার কতজন।
সিদ্ধি (ট্রায়োলেট)
– বিভূতি দাস
সিদ্ধিতে কি মুক্তি মেলে থাকলে মনের দরজা বন্ধ
একের পরে আর এক আসে নতুন লক্ষ্যের গল্প.
সিদ্ধির নেশা নয় যেমন তেমন বোধবুদ্ধি হয় অন্ধ
সিদ্ধিতে কি মুক্তি মেলে থাকলে মনের দরজা বন্ধ
জীবন একটাই লক্ষ্য অনেক আদিঅন্তে নেই সম্বন্ধ
পথের শেষে জাগলেও বোধ সময় সম্পর্ক খুব অল্প
সিদ্ধিতে কি মুক্তি মেলে থাকলে মনের দরজা বন্ধ
একের পরে আর এক আসে নতুন লক্ষ্যের গল্প।
কেন যে
– বিভূতি দাস
কেন যে এমন হয়, বেশতো ছিলি ছোট্ট হাতে জড়িয়ে গলা
সাড়া পেলেই খিল খিলিয়ে আধো বোলে গড়তিস কথার মালা
কোলে উঠেই চুমুতে ভরিয়ে দিতিস; কেটে যেত দুখের বেলা
কেন যে বদলে গেলি, বেশতো ছিলি ছোট্ট হাতে জড়িয়ে গলা।
দিনের শেষে ফিরলে বাড়ি, করতিস সারা দিনের অনেক নালিশ
বকে-দেবো না বললে, ঠোঁট ফুলিয়ে থাকতি শুয়ে জড়িয়ে ধরে বালিশ
আদর করে কোলে নিলে মিটত অভিমান, লক্ষ্মীসোনা হয়ে খাবার খেতিস
তোর হাসিতেই ভুলে যেতাম সব ক্লান্তি, একদিন নয়; প্রতিদিন-অহর্নিশ।
ছুটির দিনে সকাল বিকেল খেলতিস যখন আমার সাথে তোর পছন্দের খেলা
মিথ্যে নয়রে, আমিও হারিয়ে যেতাম, ফেরত চাইতাম গল্পে শোনা ছোট্ট বেলা
ছোট্ট পায়ে টলে টলে দিতিস যখন দৌড়, হাত বাড়িয়ে পিছু নিতাম তোর
ঘোরের মাঝে থাকতাম ডুবে, এমনি করেই কেটেছে কত সকাল দুপুর ভোর।
প্রথম যেদিন স্কুলে গেলি, বাড়িতে ছিল সাজ সাজ রব, খুশীর পালে মন
তোর কল্যাণে মা ঠাকুমা করেছেন প্রার্থনা, যেন দেবী সরস্বতী সদয় হন
স্কুলে গিয়েই সেকি কান্না জুড়েছিলি, গেটের বাইরে অস্থির ছিলাম সর্বক্ষণ
ছুটির পরে বেরিয়ে এলি হাসতে হাসতে, দেখেই আমার জুড়িয়েছিল মন।
যে স্কুলে প্রথম দিনে কেঁদেছিলি, সেই স্কুলই হয়েছিল তোর ভালবাসার ধন
ঝড় বাদলে বা দাবদাহে ও যেতিস স্কুলে, ওখানেই তোর ভালো থাকত মন
পড়া লেখায় ভালোই ছিলি, অভিযোগ পাইনি কোনদিন শৃঙ্খলা বোধও প্রবল
মনের মধ্যে স্বপ্ন বুনতাম অনেক বড় হবি, যাপনে মননে হবি স্বচ্ছ সরল।
স্কুল পেরিয়ে কলেজ গেলি, তারপর আরো, মাঝে মাঝে হলেও নানা দ্বিমত
আমার সাথে আলোচনায় কখনো বা বলতিস সরি, মনে জাগত আশার রথ
দিনের সাথে এগিয়ে চলায় আমারো ইচ্ছা ছিল, নিজ সংস্কৃতিতে রেখে বিশ্বাস
শিক্ষাই দেয় আধুনিক মন, তবুও কেন যেন হটাত হটাত পড়ে চাপা নিঃশ্বাস।
জানতাম তোর ভালো বন্ধু ছিলাম আমি, আনন্দ দুঃখ ভাগ করতিস সবার আগে
ভুল করলে শুধরে দিতাম অভিজ্ঞতা দিয়ে, বলিনি কথা একটা দিনও রেগে
তুই যে আমার এক ব্যাঞ্জন, তোকে ছাড়া কি চলে ? এটুকুও কি ভুলে গেলি
জানি তুই ব্যস্ত ভীষণ সময়ের মূল্যায়নে, কেন যে তবু মনেহয় হৃদয় ভীষণ খালি।
জীবনে আরো অনেক এগিয়ে যাবি প্রতিদিন, হয়ত পাবি অনেক অজানার স্বাদ
সময় নিংড়ানো সুধায় ভরবে জীবন, ধূসর অতীতে ফেরা মানেই সব সাধ বরবাদ
দুটি-পাতা থেকে সময়ের দরবারে ফলবতী মহীরুহ; শিকড়ের থাকতে নেই অভিমান
শিকড়ের কথা কেই বা মনে রাখে বল, শুরু থেকে শেষ অন্ধকারই তার প্রাপ্য স্থান ।
স্ব-ভূমির সংস্কৃতিতে; অনুভবে; জীবন ধারায় শিকড় গভীর ভাবে বিশ্বাসী
আজন্ম যে মাটি করেছে লালন, দিয়েছে ভালোবাসা কি করে হই অবিশ্বাসী
অনুকরণে ভীষণ ভয়, যা কিছু আছে রক্ত মজ্জায় মিশে; হটাত যদি হারাতে হয়
পারবোনা সইতে বেদন, কেহ যদি বলে এই প্রজাতি ভিন্ন, এ স্বগোত্রের নয়।
আগলে রাখি
– বিভূতি দাস
আগলে রাখি দুঃখ গুলো যেন যক্ষের ধন
সুখেরা ক্ষণস্থায়ী, অসময়ে হয় না প্রিয়জন
অসহায় বিষণ্ণতায় দুঃখ গুলোই সাহস যোগায়
জীবন পথে সঙ্গী হয়ে পথের আঁধার কাটায়
নির্দেশে তার চেতনা ফেরে সুস্থ করে যাপন
আগলে রাখি দুঃখ গুলো যেন যক্ষের ধন।
কোথায় ছিলাম কোথায় আছি, হিসেব ভীষণ জটিল
সময় স্রোতের কাল পেরিয়ে ঠিকানা তার অমিল
টিকে থাকার ভাঙা গড়ায় মেলে না রেওয়ামিল
যাপনের পুতুল ঘরে সেইতো নায়ক; গরমিল।
কাল যে ছিল আজ নেই সে, নয়গো কেউ আপন
সময়ের নিঠুর খেলায় কেটে যায় সুখের বাঁধন
সুখেরা ক্ষণস্থায়ী, অসময়ে হয় না প্রিয়জন
দুঃখরা যায় না ছেড়ে আগলে রাখে সারা জীবন।
কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে।
প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।