একবার যেও ঘুরে!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
একবার এসে ঘুরে যেও তুমি
ছোট যমুনার তীরে,
যেথা আছি গড়ে নতুন বসতি
হরেক লোকের ভিড়ে।
নদীর কিনারে টিন ইটে জাগা
জীর্ণ আমার দ্বার,
বৃক্ষের শাখা দুলে তবু রাখে
দিবা-নিশি আবদার।
মমতার টানে পাখালির ঝাঁক
কলতানে থাকে মেতে,
রোজ এসে দেয় নীরদের ভেলা
হিমেল আঁচল পেতে।
জেলে ধরে মাছ বড়শি বা জালে
উচ্ছ্বাসে বেয়ে তরী,
কামার কুমার খুঁজে ফিরে মান
কর্মের বুক গড়ি।
সারা বৎসরই রঙিলা বদনে
গাছে হাসে ফুল ফল,
মাসে মাসে উঠে উৎসব জেগে
বট-পাকুড়ের তল।
গানে দেয় সাড়া কৃষকের মাঠ
সবুজ দোলনে ফুঁসি,
প্রকৃতির দেয়া দেখলে এ রূপ
জানি তুমি হবে খুশি।
তোমাকেই খুঁজি
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
নিত্যই তোমাকে খুঁজি
নির্বিঘ্নে শিশির ঝরা আরক্ত শীতের প্রাতে,
সজাগ সর্পিল পথ মিশে গেছে যেথা
দামাল ক্ষেতের বুক তুলির আঁচড়ে চিরে
আরেকটা দূর্বা ঘাসে জাগা অভিমানী
নন্দিত পথের সাথে।
ব্যাকুলে শুধাই আমি সদ্য বসা শালিককে ডেকে,
আসবে কি সেই ছাগ
গাত্র ভেজা ঘাস দেখে করতো যে বিরক্তি প্রকাশ
শানিত সূর্যের আশে তালহীনে বারে বারে হেঁকে?
প্রাণবন্ত কুহেলিরা দল বেঁধে উড়ে আর
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে হাসে,
সেই দুষ্টু ফড়িঙটা আমাকেই দেখে
অব্যক্ত কথার ছন্দ আঁকে বলে কলমির ক্যানভাসে।
তবুও সাজাই আমি বিক্ষিপ্ত প্রহর
থোকা থোকা মেঘ দিয়ে বিরিক্ষির কম্পমান পাতে,
নির্জলা বিশ্বাস বুকে পড়বেই একদিন ধরা
হঠাৎ লাফিয়ে উঠা খালের সে’ বোয়ালের ছল
নিশ্চয় চাক্ষুষে কারো নয়তো বা হোক হাতে-নাতে।
মেঘের কোলে গীতি
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
চলেছে সাঁঝের বাটে গোধুলির বেলা;
তটিনীর পাড়ে বসে
দেখি আমি ভাব চষে
কেমনে মেঘেরা বাঁধে বারে বারে ভেলা!
কি জানি কোথায় যায় তীরে না-কি নীড়ে!
এই করে প্রেম লুট
ফের হয় দল ছুট
বারেক চায় না কেউ তবু পিছু ফিরে!
এমনই বুঝি বা হয় জীবনের গীতি!
সুরেলা ব্যাকুল আশা
বন্ধনে বাঁধে বাসা
ছেড়ে গেলে থেমে যায় ক্ষীণ যা পিরিতি!
পল্লীর কবি আমি
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
পল্লীর কবি আমি –
আপনার চেয়ে আপনের মান মননে অনেক দামী!
মানুষের মাঝে খুঁজি ফিরি যতো স্বপ্ন আশার ধন,
শ্রদ্ধা ও স্নেহ এ পথে আমার অদৃশ্য গুরুজন।
বাউল গানের সুধা-সুরে সঁপে ভুখা উদরের পুঁজি,
রঙিলা নায়ের পাকা মাঝি সেজে নিশি-দিন তারে খুঁজি।
মেঘের আড়ালে চুপিসারে ঢেলে ছেঁড়া-ফাটা আনচান,
পথে পথে ঘুরি ঝোলায় সাজায়ে সবুজ মাঠের প্রাণ।
রাঙা প্রভাতের আলো –
পাখালির ডাকে সযতনে কাড়ে হতাশার ভীরু কালো।
প্রখর রৌদ্র পোড়া গায়ে মেখে তরু তলে তুলে বাড়ি,
ভেজা ঘাসে বসে তৃপ্তিতে দেখি শকুনের আহাজারি।
কাজলা বিনের খলবলে মাছ জড়ায়ে ধরে এ বুকে,
গড়াগড়ি করি মনের হরষে কাদা মাটি শুঁকে শুঁকে।
গো-ছাগ চাইলে পাকুড়ের ঘাড়ে বেঁধে গোধূলির বেলা,
চারণ ভূমিতে মিলে মিশে গড়ি বাঁশরীর সুরে খেলা।
চন্দ্র হৃদয়ে মাতি –
যেচে লিখে দেয় দুখিনী মায়ের পিদিমের সুখ্যাতি।
শিয়ালের হাঁকে জেগে উঠে বলে বুনো মশকের জ্বালা,
ঝোপের বন্দে সহজেই মিলে ঝিঁঝিঁ জোনাকির পালা।
গ্রাম গঞ্জের লোকগীতি আর নকশি কাঁথার সুর,
শ্যামল বগলে খেরো খাতা নিয়ে রোজই করে ঘুর ঘুর।
পালা বদলের মনোহরা রূপে অবিরাম আমি হাসি,
পল্লীর কবি খরা জল খুবই ডলে-মুছে ভালোবাসি।
ওপারে যাবো না আমি!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
বেলা গেলো বেলতলা উড়ন্ত কুহেলি রেখে
শালিক দিলো না তবু হেমন্তের ধান,
ওপারে যাবো না আমি আর মধুরিমা
যতো কাঁদ না তুই কালো মুখে চষে অভিমান!
শুনেছি হাঁসেরা নাকি ভুলেছে সাঁতার
ভোলার বকের ফাঁদ পদাঘাতে ভাঙে টুনটুনি,
লিকলিকে ক’টা ঘাসে ফড়িঙের দল
কাটাচ্ছে সময় বসে স্বপ্ন হারা মেঘ কিনে গুনি।
চাই না দেখতে আমি আশাহত চোখে
কলাইয়ের হাসি হারা খিট্খিটে অগোছালো মাঠ,
অঢেল বরই বিনে থাক একা তুই
চামড়ার ব্যাগে এঁকে ছন্নছাড়া গোধূলির বাট।
ভাসুক না, আমার কি! কলার টোপর
পলির উদরে দেখে সবজির ফুটফুটে চারা,
দিশেহারা হোক সব কাজলা বিলের মাছ
না পেয়ে বকের তলে দল বাঁধা ভাসমান নাড়া।
গাইবো না তবু আমি গলা ছেড়ে বেহুলার গান,
যতোই কাঁদ না তুই কালো মুখে চষে অভিমান!
কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
তিনি অনেকটাই নিভৃতচারী লেখিয়ে।