কুটুম্ব অভিলাষ
– পারমিতা ব্যানার্জি
ইষ্টি কুটুম পাওয়ার লোভে
কি জানি কি লিখি ওরে!
অভিনন্দন আছড়ে পড়লে
আমার ভাঙা ঘরে__
ভীষণ লজ্জা করে!
ওরে আমার “ইষ্টি কুটুম”
পিঁড়ি পেতে বসতে দিলুম,
আহ্লাদে আটখানা হও।
ধন্যবাদ সাজিয়ে দেবো,
মিষ্টি কুটুম হয়ে।
পাখির ডাক
– পারমিতা ব্যানার্জি
একটা দাঁড় কাক
ডেকে চলেছে সমানে
পুরোনো বাড়িটার কার্নিসে বসে!
পাখির ডাক এতো কর্কশ!
লোকে বলে
এ যেন এক অশুভ ইঙ্গিত!
শ্যাওলা ধরা পুরোনো বাড়িও
বিভীষিকায় স্তব্ধ ।
চলৎশক্তিহীন আমাকে ওরা
হুইলচেয়ারে বসিয়ে দিয়ে গেছে
বারান্দায়।
অসহ্য লাগছে ঐ কাকের ডাক।
কিছু করার নেই আমার।
মনের গভীরে কি এক যন্ত্রণা
পাগল করে দিচ্ছে।
আমি চিৎকার করে বলছি,
‘আমাকে এখান থেকে সরাও’!
কেউ যেন নেই কোথাও জেগে!
আমি একা!
এভাবে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ
খুঁজে পাই না যেন।
শুধু একটা পাখির ডাকের জন্য!
জনম জনম গেল
– পারমিতা ব্যানার্জি
চলতি পথ যেমন তেমন
স্বাদটা যেন কষা ।
বর্ষার পরে পটল জলবসা।
এখনও আসেনি
ভাদরের থার্ড ডিগ্রি…
চকলা ওঠা নাগরদোলা পথ!
চলছে জীবন রথ!
ইকিড় মিকিড় কথার গৎ!
কবি বিহীন কাব্য খেয়াল ।
লুটোপুটি নীল শেয়ালের
রাজা হবার বড্ড বেশি শখ!
সমালোচনার জালে
বুক করে ধক্ ধক্…
চাটে পুঁটি মাছের টক্!
বেজায় খুশি কবি ভায়া।
কাব্যে যে তার মায়া।
লেখে আর কলম চিবায়,
মাথা মুণ্ড কী যে লেখে ছাই!
পায় না খুঁজে থই।
তবু তার চলার পথে চাইই
ধিন্ তানাক ধিন্
একশো আটটি বই।
ফিনিসিং পয়েন্ট
– পারমিতা ব্যানার্জি
জীবন চলে না গড়গড়িয়ে
কারো অঙ্গুলি হেলনে যেন!
বুঝি না মানে কোনো…
পাথরের সাথে লাগে ঠোক্কর!
জীবন তখন ঘনঘোর!
বৃথাই আমি খুঁজি __
ফিনিসিং পয়েন্ট, বারংবার ।
বাঁশি বাজে না, শেষ খেলার।
ভাবি শেষ হতে কত দেরি,
খুলতে এ দড়িদড়া এইবার!
পাথরের আঘাতে
জর্জরিত মন চাই না আর ।
রহস্যময় এ ভব সংসার!!
যার শুরু হয় কান্নায় _
তারপর গতানুগতিক খেলা।
শেষ যে হবে কবে হাসিতে
বসে আছি অপেক্ষায়!!
আড়ি আড়ি ভাব
– পারমিতা ব্যানার্জি
মেঘের সাথে আড়ি।
বর্ষার এ লগনে
সূর্যের যেন বড্ড বাড়াবাড়ি!
বিকাল যখন হয়_
অস্তরাগে রাঙায় সূর্য
পূবের এক টুকরো সাদা মেঘ!!
অসময়ে শরৎ আনে ডেকে।
সূর্যের এটাও বাহাদুরি।
বৃষ্টি চাই বৃষ্টি চাই
মাতাল বাতাস বলছে যেন হেঁকে।
তখনই দুপুর সাজে
ঝুরো ঝুরো বৃষ্টি গায়ে মেখে।
তবে ক্ষণিকের জন্য।
দিবস রজনী কাটছে এখন
দিন বদলের সুখে।
আষাঢ়ের যাবার বেলা হলো।
তবু সূর্যের তেজে বুঝি
বৃষ্টি যেন বিমুখে!
কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।