হায়না
– সুমিত্র দত্ত রায়
পায় পা তুলে বসে থাকা, মানায় না;
সামনেই আছে নরঘাতক ও হায়না।
মনের দিকে ফিরেও ওরা তো চায়না,
দেখবে কি করে স্বচ্ছ জীবন আয়না!
কতকাল হবে অবুঝের মতো কান্না,
বদ্ধ ঘরেতে বসে আর থাকা যায় না।
মুক্তির পথ! দেখালো তো সেই হায়না
রক্ত ছাড়া যে পথ চলাকেই চায় না।
মিছিলে সব
– সুমিত্র দত্ত রায়
অনেক ভাবনায় চিন্তাদল, আজ মিছিলে।
নাঃ! কোন ময়দানে নয়, নয় রাজপথেও।
মস্তিষ্ক শিরা উপশিরা হতে, ওরা মিছিলে।
ভিন্ন মাথা অন্য দল, তবু কোনঠাসা হয়ে –
সংঘবদ্ধ সব। আজ চিন্তারা ভোঁতা হচ্ছে,
নেশায় আর স্থুল আনন্দে ডুবতে ডুবতে।
তাই এ মিছিল চলছে খুব দরকার ব’লে –
যাতে চিন্তা ফিরতে পারে অধিকার বলে।
লাইন
– সুমিত্র দত্ত রায়
লাইন দেখলাম-
চালের জন্য,
রেশন দোকানে।
লাইন দেখলাম-
কেরাসিনের জন্য,
গলির মোড়েতে।
লাইন দেখলাম –
টিকেটের জন্য,
সিনেমার হলে।
একই লাইন।
কখনো ক্ষুধায়,
কখনো বারুদে,
কখনোবা দেখা যায়
কোনো হুল্লোড়ে।
কে আগে? কে পরে?
তাই বিশৃঙ্খলা,
আমি! নাঃ, তুই না আমি!
দড়ি টানাটানি,
তারপর?
এই যে দাদা, যাচ্ছেন কই!
জায়গা ছিলো,
ফালতু বকবেন না –
কী বললেন?
কী আবার বলবো? মস্তানি!
আরে শালা চুপ!
এবার হৈচৈ, হট্টগোল,
দুমদাম খানকতক পটকা,
ফটাস ফটাস দু চারটে গুলি,
সব বাড়ির জানলা বন্ধ।
কালো ভ্যান।
যথারীতি সব শুনশান।
গণ্ডগোল থামার পর-
নজরে পড়লো,
একটা মানুষের লাশ,
সংগে একটা কুকুরের –
পেটে বাচ্চা ছিলো।
আঁখিপল্লবে
– সুমিত্র দত্ত রায়
– কী দেখছো?
– তোমাকে।
– আবার কী দেখছো?
– তোমার রাঙা ঠোঁট।
– ফের তাকিয়ে! কী দেখছো?
– তোমার আঁখিপল্লব।
– দুষ্টু! এবার আবার কী দেখছো?
– তোমার চোখের তারা!
– ধ্যাত, ওখানে কী এমন দেখছো?
– আমাকে।
– আমাকে!
– হ্যাঁ, আমাকে…আমাকেই।
তোমার কালো চোখের
তারায় ফোটা আমাকে,
তোমার জীবন স্বপ্নেতে
বাসর সজ্জার আমাকে,
তোমার হৃদি নিঃসৃত
প্রেম যমুনার আমাকে,
আমাকে …শুধু আমাকেই।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।