বিবেকানন্দ
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
কোন অলৌকিকে নেই
তোমার চৌদিকে নেই কোন লোককথা
কিংবা জনশ্রুতির বলয়,
সম্মুখে দাঁড়াও যখন
বটবৃক্ষের মতো শিকড় প্রোথিত থাকে মূলে।
সোজাসাপ্টা কথা বলো,
স্তব্ধ শোনে এ বিশ্ব নিখিল।
ব্রাত্য মানুষকে বাঁধো প্রেমে
আর সেবায়, কল্যাণে।
তোমার চেতনা জুড়ে এই দেশ
ভারতবর্ষ শুধু জাগে,
চৈতন্যের নিত্য উদ্বোধন।
তোমাকে যে মর্মে বোঝে
সে হয় সর্বত্যাগী
সুভাষচন্দ্র কিংবা নিবেদিতা।
যে ছিল ওপারে
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
ওপারে যে ছিল সে কি জানত
তুমি আছ পথে
রেল লাইনের ধারে
ট্রেন আসছে _ সংকেত সবুজ।
কী এমন কথা ছিল তক্ষুনি বলার মতন।
অন্য সময়ে আর বলা তার হত না কখনও।
ওপারে যে ছিল সে কি শুনেছিল আর্তনাদ
অনুচ্চারিত শব্দ
ভাঙা ভাঙা অক্ষরপতন?
এখন কি তার মুখে ভাষা নেই
শুধু অনুতাপ আছে
নাকি তাও উধাও আকাশে!
ওপারে যে ছিল তার কাছে
পরোয়ানা ছাড়া এই মৃত্যু কি
অঘটন
দুর্ঘটনা
সভ্যতার অভিশাপ
বারবার ফিরে ফিরে আসে!
দিনের পর দিন
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
আরও একটা দিন এল
ছড়িয়ে দিল নতুন আলোর আভা
পাখির গান।
ঘুমন্ত অন্ধকার ঠেলে সরিয়ে দিয়ে
জেগে উঠল মানুষের চোখ।
তারপর কাজের ফাঁকে ফোকরে
বিচ্ছিন্ন দ্বীপ যেন
কিছুক্ষণের অবকাশ।
সারাটা দিন সংবাদ আসতেই থাকে,
কোনটা বা অন্ধকারের মধ্যে আলো
আর কোনটা আলোর মধ্যে অন্ধকার।
পড়া আর শেষ হয়না
এইভাবে একটার পরে একটা দিন_
বইয়ের পাতা পরের পর উলটে যাওয়া।
ভোজসভা
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
মরসুম জুড়ে নিমন্ত্রণের চিঠি উড়তে থাকে,
একটা দুটো এসে পড়ে আমার ভিটেয়,
কোনটার ভাষা আলংকারিক
আর কোনটা একেবারে আটপৌরে,
মোদ্দা কথা অমুক দিন আসবেন
আপনার জন্য ভোজের ব্যবস্থা আছে,
আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন কেউ কেউ
কে আর খালি হাতে করেন আশীর্বাদ!
রাত দশটায় এইসব ভোজসভাগুলো
লঙ্গরখানা হয়ে যায়,
পাতের খাওয়া শেষ হতে না হতেই
পরের জন জায়গা নেয় চুপিসারে।
নিমন্ত্রণপত্রের আপ্যায়নের ভাষা খুঁজতে থাকি,
একদিকে না-বোঝা মন্ত্রোচ্চারণ
অন্যদিকে সানাই কিংবা নাচগান
যে যেখানে পারে লুটে নেয় মজা।
এইসব ভোজসভায় গেলেই
আমার কেবলই মাকে মনে পড়ে যায়,
খাওয়াতে বসিয়ে
কতবার তাঁর আরও নেবার আকুতি_
আমি শুনতে থাকি সেই কন্ঠস্বর।
জীবনযাপন
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
একটাই জীবন তবু
হেলায় ফেলায় কাটে, মগ্ন থাকো
মদে আর আফিমে, তামাকে।
দিনগুলি আশায় আশ্বাসে ওড়ে
কোনমতে ক্ষুণ্ণিবৃত্তি,
ঘুম শুধু আনে বিস্মরণ
যদি না আনত তবে
তুমি আমি সবাই উন্মাদ।
ভবিতব্যের হাতে রেখে দিয়ে
উত্তরাধিকার
নষ্ট ডালপালার মতো
একদিন অজ্ঞানে
ঢুকে যাওয়া কবরে, চিতায়,
একেবারে দাবিহীন এবং নিদাগ।
আর কোন ছাদ নেই, রীতি নেই
এইভাবে জীবনযাপন সাম্প্রতিক।
কবি পরিচিতি

জন্ম ১৯৫০। স্নাতক। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী।
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির শুরু। কবিতা, ছড়া, ছোট গল্প, অণু গল্প, নিবন্ধ লিখে থাকেন। বড়দের জন্য, ছোটদের জন্যও। কিছু কিছু অনুবাদও করেছেন, ইংরেজি থেকে বাংলায় — কবিতার, গল্পের। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে — আসলে আলোর জন্যে, এখানে তরঙ্গ এখানে জীবন, জলের উপমা,অপ্রিয় শব্দমালা (এককভাবে), যাঁরা কবিতা পড়েন না (দুজনে মিলে), ছড়ার মজা খাস্তা গজা ও চার মাথার মোড় (চারজনে মিলে)।