বুমেরাং
– সুমিত্র দত্ত রায়
ছেলেবেলায় আমরা সব দেখেছি –
শুধু কালী পূজায় বাজী ফাটানো,
ছোটখাটো কিছু পটকার আওয়াজ,
সংগে ফুলঝুরি, তুবড়ি বা রংমশাল।
ওটা ছিলো শক্তির আরাধনার জন্য –
উৎসর্গিত এক বিশেষ আনন্দর দিন।
তাই এতো বাজী,এত ঘটা,এত হুল্লোড়,
তাতেও বড়দের বেশ কিছু বাধা ছিলো।
লক্ষ্মী পূজায় বাজী! সে একদম মানা।
ঠাম্মা বলতো, দেবী না কি ও শব্দতে –
আসনে বসেনই না। উঁনি নীরবতাকে
পছন্দ করেন। মেনেতো নিয়েছি তাও।
ঘরে লক্ষ্মী আসতে কী বাধা যে ছিলো
বিতর্কে যাব না। তবু এটা নিশ্চিত,
ব্যবসায়ীর ক্যাশবাক্সে লক্ষ্মী ভরপুর।
পুজো বাড়ছে, বাড়ছে আমদানিটাও।
এখন তো মাত্রাছাড়িয়ে পুজোর বহর,
যম, শনি, মনসা সব পুজাে বারোয়ারি।
এ ছাড়াও দুর্গাদেবী, বাসন্তী, অন্নপূর্ণা –
কেউ তো পিছিয়ে নেই বারোয়ারিতে।
কার বন্দুক কতটা বেশি মানানসই –
ছোটদের তাই নিয়ে কথা কাটাকাটি।
বড়োরা ভাবে বন্দুকটা ছোটই হলো,
আগামীবার ওটা পুষিয়ে দিতেই হবে।
ছোটরা কিন্তু বন্দুক ফাটানোর সময়,
এক পৈশাচিক আনন্দে মেতে ওঠে।
তাই ওদের শৈশবের বন্দুকবাজ মন –
একদিন বড়ো হয়ে গোলাও ফাটায়।
আজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর কি লাভ?
ওদের বন্দুকে অভ্যস্ত আমরা করেছি,
কখন নিজেদের মনের হিংস্রতায় ওরা-
ধীরে ধীরে দানব হয়েছে, টের পাই নি।
হয়তো সব ফালতু কথা, এর কোনো –
যৌক্তিকতাই নেই। মূল্যতো এ লেখা
পাবে না আদৌ।শুধু এই কথা ঠিক,
পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন।
কান্না
– সুমিত্র দত্ত রায়
কাঁদছি মোরা কাঁদছি কেন
পাচ্ছে কান্না কাঁদছি তাই,
কান্নার তো ট্যাক্স লাগে না
পয়সা ছাড়া কাঁদতে চাই।
দূর দূরান্তে কতই খেলা
চলছে যে দিন রাত্তিরে,
ভাবছি বলেই পাচ্ছে কান্না
কাঁদছি তাই তো সুর করে।
কাঁদার জন্য লোক ভাড়া হয়
রুদালি তাকে সকলে কয়,
আমরা তো ভাই ফিরিতে কাঁদছি
তবুও কেন নিন্দা হয়?
মরছে মানুষ হচ্ছে ফানুস
উড়ছে জীবন তার ‘পরে,
গভীর কান্না লুকিয়ে আছে
তাই কান্নাই আছি ধরে।
কাঁদছি মোরা কাঁদছি কেন
বলবো কারে লোক কোথায়?
তুমিও জান আমিও জানি
বিশ্বে কারা যে ত্রাস ছড়ায়।
ঘরকন্না ছেড়েই বসে
কাঁদছি সবাই প্রাণ ভরে,
এ কান্নার শেষ বুঝি নাই
যতক্ষন না প্রাণ ওড়ে।
লাল গোলাপ
– সুমিত্র দত্ত রায়
একটা লাল গোলাপ দাও না আমাকে।
ওকে আঁকড়ে রাখবো বুকের গভীরে,
বারুদ গন্ধ কি গোলাপের থেকেও মিষ্টি,
যাবার সময় সেটাই কি মনে হয়েছিল?
কী এত যন্ত্রণা বা অতৃপ্তি ছিলো ঐ বুকে?
কি জন্য অকুল পাথারে ভাসালে আমায়?
একবার ভাবলে না উচ্ছলিত মেয়েটাকে!
যে তোমায় প্রাণভরা ভালবাসা দিয়েছিল।
জানিনা কোথায় আছ ফ্রান্সে না বাংলায়!
সে নিয়ে প্রশ্ন নেই, কাকেই বা প্রশ্ন করবো?
আজ তুমি যে সব ঠিকানার বাইরে রয়েছ,
ভাল থেকো, ভালবাসা ছিলো বলে বল্লাম।
ভুল করে ভালবাসা ছলে আজ আমি মৃত।
আমার লজ্জা,তোমার নিন্দা, পাথর আমি!ঁ
শুধু যে নবাগত বাড়ছে এ দেহ বল্লরীতে
তাকে দেব বলে, কী রাখি? ভাবছি এখন।
আমাকে তুমি কিছু দেবে! অলীক চিন্তা।
বাগিচা! লাল গোলাপটা দাও না আমাকে,
লাশে রাখবো নয় দেব নবাগতেকে
রক্ত নিশান বলে । হায় রে ভালবাসা !!!
ভালোবাসি, হ্যাঁ, আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
ধূলোয় ভরা পথ
– সুমিত্র দত্ত রায়
কাছে যাকে ভাব বন্ধু সেও কাছে নয়,
সমস্যা যা আছে নিজে সামলাতে হয়।
আজ যারা ফাঁদে ফেলে মরণকে ডাকে,
তারো জন্য ফাঁদ পাতা সে কি মনে রাখে?
প্রতিটা পদক্ষেপ যাঁচাই করে ফেলো,
দেখো উড়ে যাবে যত অবাঞ্ছিত ধুলো।
দেবশিশু
– সুমিত্র দত্ত রায়
মানব,দানব, দেব – এ বিশ্বে বিরাজে,
পরিচিত হয়, তারা আপনার কাজে।
কেউ মরে ঘৃণাভরে, কেউ শ্রদ্ধা পায়,
দানব, দেবের রূপ – স্পষ্ট বোঝা যায়।
সব শিশু – দেব শিশু, তফাত তো নাই,
তবু মানব, দানব – দর্শনেতে পাই।
কোন সুত্রে গড়ে দেব? কেন বা দানব!
এ প্রশ্ন জটিল বড়, জানে না মানব!
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।