পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা (খেলা শেষে, মান ভুলে, চঞ্চল মন, শূন্যতায়, আমার ভোরের সঙ্গীরা)

খেলা শেষে

– পারমিতা ব্যানার্জি

খেলা শুরু হয়,
শেষও হয় নিয়ম মেনে।
খেলা শেষে
যে যার মতো গন্তব্যে ফেরে
খেলোয়াড়েরা।

আমিও চলে যাব একদিন!!
ফিরতেই হবে গন্তব্যে ।
তবে সেই ঠিকানা অজানা!
খেলার মাঝপথে
ফেরারী কি হওয়া যাবে?
কেউ জানি না উত্তর।

আকাশের যত তারা _
ওরা কি কোনো দিন ফেরে?
মনে হয় না
ওদের গন্তব্য আছে!
ওরা থেকে যায় একইভাবে।
ওদের খেলায় শেষ নেই।

তারারা, সুখে থেকো।
আমি যেন চলে গিয়েও
থেকে যাই সুখে__
খেলা শেষে।
তোমাদের ভালোবেসে!

মান ভুলে

– পারমিতা ব্যানার্জি

মানিনী,
মান কোরো না এখনই!!
অভিমান ভুলে
পথের দুপাশ ভরে গেছে
হলুদ অমলতাসে!!
অযথা চাও মানব বন্ধন।
ফুলে ফুলে সেজেছে বন।
ভাবিনি কখনো
ভালবাসার গভীরতায়
ফুল ফুটবে ।
মান ভুলে মন মাতাল হবে
প্রকৃতির অকৃপণতায়!
মানিনী,
মান কোরো না এখন আর।
হয়েছে সময় _
ভালবাসায় ভরে ওঠো,
হলুদ বনে বনে ।

চঞ্চল মন

– পারমিতা ব্যানার্জি

জমিটা এখন
উর্বরতা হারিয়েছে!
একসময়ের পাশ দিয়ে
বয়ে যাওয়া নদী দিক বদলেছে।

রাত যত বাড়ে,
বিছানায় কাতরতায়
বিষণ্ণ ভাঙাচোরা মনটা।
চাঁদের আলো বিস্বাদ মনে হয়!!

জমিটা শুকোয়।
নদীর চঞ্চলতা চায়!
চাঁদের আলো মাটির খাঁজে
লুটিয়ে পড়ে জলের স্বাদ বঞ্চিত!

ভাঙাচোরা মন
একইভাবে চাঁদের নদী খোঁজে!!!

শূন্যতায়

– পারমিতা ব্যানার্জি

মনকে বাতাসে উড়িয়ে
আকাশের যত কাছে যাই
আকাশ সরে যায়
দূরে; আরও অনেক দূরে।

রাতের অন্ধকারে
তারারা হাসে, বিদ্রুপ করে।
আকাশ ছোঁয়া
এতোই কি সোজা!
স্বপ্নেও সে কাছে আসে না।

লক্ষ লক্ষ তারার স্থান
যে আকাশে _
আমি কেন ছুঁতে পারি না
সেই আকাশ!
এক শূন্যতায় আচ্ছন্ন হই।

এতো তারার ভীড়!
তবু কী ভীষণ এক নীরবতা!
আমার ব্যথা সেই শূন্যতায়
কেবলই ঘুরপাক খায়।

আমার ভোরের সঙ্গীরা

– পারমিতা ব্যানার্জি

আবারো বন্দী হলাম
দশ বাই বারোর ছোট্ট ঘরে।
আমি কিন্তু ভাবতে চাই না
আমি ভীষণই একা।
পূবের আর দক্ষিণের জানলা
আমার এখন সঙ্গী।

ভোরের সূর্য ঢুকে আসে
আমার ঘরের জানালা দিয়ে।
রোদ্দুর লুটোপুটি খায়
বাসি বিছানায় _
কত কথা হয় দুজনের।
ভোরের কত পাখির কূজন
সঙ্গত করে
আমাদের আলাপে বিলাপে!

দক্ষিণের জানলা দিয়ে
সকালের মিষ্টি হাওয়া
পরশ দিয়ে যায় আমার
অসুখ শরীরে।
আম গাছে দোলে
সবুজ সবুজ আমের থোকা।
ওরাও আমাকে সঙ্গ দেয়।

ভোর হতে না হতেই
গাছে গাছে
কত পাখির আনাগোনা।
হরেক পাখির ডাক,
নানান শিস,
আমার সঙ্গে কথা বলে যেন।
অসুস্থতায় বন্দী আমি
একা হই না তাই কক্ষনো…


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।