কিছু তো করো
– সুমিত্র দত্ত রায়
মানুষ মারার কারখানাতে
লোক রয়েছে যত,
মানুষ গড়ার ময়দানেতে
ভীড় কী পাচ্ছ তত?
কি করে আজ মানুষের দাম
এতই সস্তা হলো,
সময় ছিলো। ভেবেছো কি গো?
দৃষ্টি কি তায় ছিলো?
খুন কা বদলা খুনের নীতি –
চলবে কত আর,
আলোর পথে আনতে পার কি?
– যারা করে অনাচার।
এমনটা কেন হলো রে, ভাই –
এমন কেন হলো?
রাস্তাঘাটে বা আবর্জনায়
নিরীহের প্রাণ গেলো।
আমাদেরও দায়িত্ব ছিলো যে
মানুষকে গড়বার,
পালন করিনি। আজ কিভাবে
করবো অস্বীকার ?
বলতে পার আগামীকে আর
কি বা জবাব দেবে?
আঙ্গুল উঁচিয়ে ওরা যেদিন
আমাদের দেখাবে।
নিজের ঘরের চিন্তা করে –
গড়ছো স্বার্থপর!
সবার ঘরকে নিজের ভাব,
সেই খুব দরকার।
দেখবে তখন ময়দানেতে
সবুজ সমাগত,
পথের মাঝেই পথ খুঁজে নাও
একের থেকে শত।
এখনো ভাবার সময় আছে
কিছু না কিছু তো করো।
নইলে! ইতিহাসের পাতায়
ধিক্কার নিয়ে মরো।
জাগরণ
– সুমিত্র দত্ত রায়
তোমাদের ছোড়া পাথরে আমরা
মরেছি অনেকবার,
তোমাদের ঘৃণা কুড়িয়ে আমরা
লাঞ্ছিত বারে বার।।
অনেক মেরেছো এবারে তাই
নেমেছি পথে,
পথের মাঝেই মিলতে যে চাই
সবার সাথে।
তুলতে হবে এ কেতন আবার -
তোমাদের সব করে ছারখার,
নব প্রভাতের এ শুভ লগনে
এটাই কেবল শপথ আমার।
বলতে পার কি সইবো কেন এ
লাঞ্ছনা বার বার?
এক হয়ে আজ তুলে
নাও হাতিয়ার,
খুলে ফেল সব কারা
প্রাচীরের দ্বার।
এসো বন্ধুরা তুলি আজ ধিক্কার
কাঁধে কাঁধ রেখে মুছবো অন্ধকার,
ধ্বজাকে মলিন করব না আর
জগতের মাঝে রাখি এ অঙ্গীকার।
নিজের লড়াই লড়তে শিখেছি
কেন লাঞ্ছনা আর?
গড্ডালিকা প্রবাহ
– সুমিত্র দত্ত রায়
আজগুবি নয় যদি মনে হয়
করার তো নেই কিছু আর,
বলছি যা তায় প্রলাপ বোঝায়
তাই আজগুবি নাম তার।
বলবো কি ভাই লজ্জা যে পাই
দেখি সেদিন ঐ সাঁঝরাতে,
গলির মোড়েতে মালিকে চোরেতে
বসিয়েছে সভা একসাথে।
বললে চোরেরা , “কেন যে পাহারা
বসাও তোমরা বুঝি না তো!
টাকার আগুনে আইনে কানুনে
খুলেছি চুরির পথ যতো।
দরকার মত আইনের শত
থাকুক না কেন বেড়াজাল,
মোদেরই জন্য হবে তা ছিন্ন
পাল্টাবে তার বোলচাল। “
মালিকেরা শুনে কথার সে গুনে
হাত তালি দেয় বারবার,
লাগবে না আর লোক পাহারার
নীট মুনাফাই দরকার।
রিপোর্টারে লেখে কতকিছু দেখে !
পকেটের ভার বেশ বেশী,
খাবার প্যাকেট ? আহা কি বা ভেট!
নরমে গরমে ঠাসাঠাসি।
বলে পণ্ডিতে “মন্দে কি হিতে
বিচার শক্তি নেই মোটে,
তাই সাধারণে ওদের কু গানে
দিবারাত্রই মেতে ওঠে। “
ঢেকুরটা তুলে আবারও বলে
“ওদের করলে অপমান,
বুদ্ধি হ্রাসের বিচারে তাদের
হয়ে যাবে সব গর্দান। “
আমি শুনে ভাবি মুখে তালা চাবি
দরকার নেই সওয়াল,
মরে যে মরুক তবুও চলুক
যেমন চলছে এতকাল।
আজগুবি নয় শুধু সভা হায়!
আজগুবি আমি, তুমি, সব -
আজগুবিদের রাজত্বে ফের
ওঠে কি কখনো কলরব?
প্রাণ স্পন্দন
– সুমিত্র দত্ত রায়
সকালে চায়ের টেবিলে। নজর কাগজে –
ওমলেটের স্বাদ নিচ্ছি বেশ আমেজ করে,
যত্তসব খারাপ খবর ! বধূ হত্যা, ধর্ষণ,
হানাহানি। মোটের উপর থমথমে ভাব।
ঘরে টিভি চলছিল, ঘরনীর ঐ এক নেশা,
স্থিরতার লেশমাত্র নেই। রিমোটে ভ্রমণ।
তবু, কোথাও না কোথাও তো থমকাবেই,
দেখা গেল কোনো এক চ্যানেলে গান হবে।
গেরুয়া বসন, পায়ে ঘুঙুর, হাতে একতারা।
গান কেমন করবে বোঝাই বেশ মুশকিল,
বাজনার আওয়াজ! সে তো মাত্রা ছাড়িয়ে,
কোমর দুলিয়ে অনভ্যস্ত একতারায় গান।
হঠাৎ কানে ভেসে এলো সুর..গভীর সুর..
একাত্ম হয়ে মিলে গেলাম সুরের সাগরে,
মনে হলো কেন অত্যাচার? কেন এ হত্যা?
কী আছে জীবনে? কী যাবে মরন সাথে?
সুর ভেসে আসে কোনো অমৃতলোক হতে,
আমি স্থির নয়নে দেখছি মহাত্মার ছবিটি,
সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে?
গান চলছে …সুর চলছে …চলছে প্রাণও।
অধিকার অর্জন
– সুমিত্র দত্ত রায়
হাতিয়ার নিতান্ত যদি ব্যার্থ হয় –
বিক্ষোভ, ধর্মঘট বা অনশনেও
কাঁপন জাগে না শত্রু শিবিরে!
অধিকার অর্জন করতেই হয়।
বিপ্লবের বীজ এক রোপিত হয়,
স্ফুলিংগ এসে সাড়া জাগায় মনে,
অতর্কিতে ভয়াবহ সেই আক্রমণে –
দিশেহারা হয়ে পরে শত্রু শিবির!
রনাঙ্গণের দামামা বেজে ওঠে।
দুকূলে দুপক্ষ, পথও পরিস্কার।
সংঘাত এড়ানো যায় না মোটে –
কোন বাঁধনেই বাঁধাও যায় না।
বিপ্লবের অমোঘে সৃষ্ট তুফান ;
বাইরে কালের দুরন্ত সাইরেন –
সত্যের সফলতা ঘোষণা করে।
স্থিতিশীল জীবন ফিরে আসে।
জোয়ারের বয়ে আনা পলিতে –
নবাগতে স্বীয় সম্মান জানায়।
নতুন ইন্ধন জাগে সৃষ্টি আকাশে,
জোয়ার ভাঁটায় আবার সমাজ।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।