প্রথম দিনে আষাঢ়
– পারমিতা ব্যানার্জি
মৃদু মাতাল আষাঢ় এলো
মাদল বাজিয়ে।
হাওয়ায় ভেসে বৃষ্টি নূপুর
সাজলো জমিয়ে ।
ছাই রঙা ঐ আকাশটাতে
মন খারাপের সুর।
ভিতর মনে লুকিয়ে কাঁদে
বৃষ্টি টাপুর টুপুর।
চাষীর বুকে খুশির আশা
আসবে সবুজ সুখ।
আয় আষাঢ়, মন ছুঁয়ে যা
দেখতে সুখীর মুখ!
প্রথম দিনের আষাঢ় যেন
ভালবাসার মুকুর!
ভিজিয়ে দিতে আমায় সে
এক পাগল সমুদ্দুর!
ঝোড়ো সময়
– পারমিতা ব্যানার্জি
আমার ভিতরে ঝড়,
বাহিরে ঝড়!
এলো যে সাথে অশনি।
ঝলকে ঝলসালো মন!
বুজে আসা চোখে
চমকায় ভীত চাহনি….
দিশেহারা হই শিহরণে।
ঝড় যে প্রমাদ গোনে,
অন্তরের কোণে!
আমার ভিতরে বাহিরে
আজ শুধুই ঝড়!
চকিত চোখে যত অশনি,
আকাশের শ্বাসে মাতে!
হৃদয়ে হৃদয়ে
কেন যে শুধু কানাকানি!
উঠেছে প্রবল ঝড়,
আমার অন্তরে বাহিরে,
নিরন্তর !!!
চিরন্তন ক্ষণ
– পারমিতা ব্যানার্জি
এ যে সেই ক্ষণ __
এ ক্ষণ শুধু ভালবাসার!
এ সময় হোক অপেক্ষার।
মধুর প্রেমের অপেক্ষায়
কাটুক এই ক্ষণ __
অভিমানী এই ভালবাসা,
থাকুক না শুধু অপেক্ষায়!
শতাব্দীর পর শতাব্দী
প্রাচীন হোক এ ভালবাসা,
চিরন্তন সে ক্ষণ!
দু চোখের বর্ষায়
লেখা হয়ে থাক এ কাহিনী ;
অপেক্ষার কাহিনী!
এ সময় হোক অপেক্ষার,
তোমার আমার!
অঙ্কুরোদ্গম
– পারমিতা ব্যানার্জি
মাটি ফুঁড়ে
মাথা তুললো ছোট্ট অঙ্কুর।
বীজপত্রের ছোট ছোট দুই হাত
যেন খুলে ফেললো
বহুদিনের রহস্যের বন্ধ দরজা!
নেপথ্যে অবশ্য মূল।
এক ঝলক
সূর্যের আলোয় ভিজে গেল সে।
সৃষ্টির অনাবিল আনন্দে
আরো সবুজ হয়ে উঠলো মন।
বীজ থেকে অঙ্কুর __
সবটাই যেন বন্ধ দরজার
ওপারের রহস্য!
এরপর এলো বৃষ্টি।
রোদ আর বৃষ্টির ভালোবাসায়
কিভাবে যেন একদিন
ছোট্ট অঙ্কুরটাই
রহস্যের গন্ধ মেখে হয়ে উঠলো
পরিনত বৃক্ষ!
পূবালী হাওয়ায়
– পারমিতা ব্যানার্জি
আজকের বিকেলটা
আমার কাছে ছিল অন্যরকম!
যন্ত্রণার কাতরতায়
হারিয়ে যাওয়ার তাড়া ছিল।
আকাশেও তখন ছিল
পাখিদের ঘরে ফেরার তাগিদ!
এই মাত্র এক ঝাঁক চড়ুই
সাঁ করে উড়ে গেল পূর্ব দিকে।
শালিক উড়ছে জোরে ।
পানকৌড়ি, বকেরা চলেছে
আল্পনা এঁকে এঁকে…
আমি কি হারাই ওদের সাথে!
এখনো ইলেকট্রিকের তারে
নেচে বেড়াচ্ছে দোয়েল।
ওদের ঘুম বোধহয় খুব কম।
শুতে যায় সবার শেষে,
ওঠে সবার আগে, ভোর রাতে।
দোয়েল শিসে ঘুম ভাঙে আমার।
আজ আমি যে বড় চঞ্চলা।
হঠাৎ এলো এলোমেলো মেঘেরা ।
ঝোড়ো হাওয়া ঢুকে পড়েছে
আমার বদ্ধ ঘরে।
আমাকে ছুঁয়ে গেল ঘন আদরে।
পূবালী হাওয়ায় আমি উন্মনা!
মনে হলো
আমার ভাঙা পা ঠিক হয়ে গেছে।
আমি যেন উড়ছি!
আমার যে তাড়া __
তোমার কাছে পৌঁছে যাবার।
কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।